ভোট মিটতেই ফের নারদকাণ্ডে তৎপরতা। নারদ মামলায় তৎকালীন চার মন্ত্রী, বর্তমানে রাজ্যের দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বিধায়ক মদন মিত্র ও প্রাক্তন বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। পাঁচ বছর আগে ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ নারদকাণ্ডের ফুটেজ ফাঁস করেছিলেন ম্যাথু স্যামুয়েল। পরে দীর্ঘ টালবাহানা ও রাজনৈতির চাপানউতোরের পর শেষ পর্যন্ত সোমবার নারদকাণ্ডে চার্জশিট পেশ করতে চলেছে সিবিআই। প্রত্যেককেই নিজাম প্যালেসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এর আগে এই চারজনের মধ্যে মদন মিত্রকেই সারদাকাণ্ডে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ২০১৪ সালের তৎকালীন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রকে সারদা গ্রুপের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেই সময় অভিযোগ উঠেছিল, জিজ্ঞাসাবাদ এড়াতে প্রায় এক মাস হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন মদন মিত্র। তাঁর বিরুদ্ধে সারদা গ্রুপের চেয়ারম্যান সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে অনৈতিক আর্থিক সুবিধা নেওয়া ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছিল। পরে গ্রেফতার করা হয়েছিল মদন মিত্রকে।
এর পর ফের নারদাকাণ্ডে একাধিক বার মদন মিত্রের নাম সামনে এসেছে। ম্যাথু স্যামুয়েলের নারদ স্টিং অপারেশনে সম্পাদিত ফুটেজে সাত সকালে ঘুম চোখে বিছানায় শুয়ে টাকার বান্ডিল নিতে দেখা গিয়েছিল তৎকালীন এই মন্ত্রীকে। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, নারদে অন্যতম অভিযুক্ত পুলিশ কর্তা এস এম এইচ মির্জা মারফত তৎকালীন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন নারদ নিউজের ছদ্মবেশী সাংবাদিক ম্যাথু। পুলিশ কর্তার দূর সম্পর্কের ভাই টাইগার মির্জার সঙ্গে মদনের ভবানীপুরের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন বলে সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন ম্যাথু।
সিবিআই সূত্রে খবর, এদিনও ম্যাথু স্যামুয়েলের কাছ থেকে নেওয়া টাকা তিনি কী ভাবে খরচ করেছেন, এ দিন মদনবাবু সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনও জবাব দেননি। এই টাকার হিসেব তিনি পরে দেবেন বলে সিবিআইকে জানিয়েছেন। এর আগেও একাধিকবার মদন মিত্রকে তলব এবং নোটিশ পাঠিয়েছে সিবিআই। নিজাম প্যালেসে নিয়ে গিয়ে বাকি তিন নেতার মতো মদন মিত্রেরও এদিন বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে।
সিবিআই সূত্রের খবর, নারদের অসম্পাদিত ফুটেজে ম্যাথুর সঙ্গে চা খেতে খেতে প্রাক্তন মন্ত্রী নানা কথা বলেছেন বলে দেখা গিয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, ম্যাথুকে পরিবহণ দফতর মারফত যে কোনও ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রাক্তন এই মন্ত্রী। মন্ত্রীর বিছানা থেকে অন্য এক জন টাকার বান্ডিল তুলে নিয়ে আলমারিতে রাখছেন, সেই ছবিও অসম্পাদিত ফুটেজে দেখা গিয়েছে। মদনবাবুর ওই সময়ের এক অনুচরকেও পরবর্তী পর্যায়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।