#পশ্চিম মেদিনীপুর : জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনাতে ২০১০ সালের ২৭ মে দেড়শো জনের বেশি যাত্রী প্রাণ হারিয়েছিলেন ৷ যাঁদের মধ্যে বেশিরভাগ শনাক্ত করে পরিবারকে দেওয়া হলেও ২১ জনকে এখনও শনাক্ত সম্ভব হয়নি ৷ যাঁদের তালগোল পাকানো দেহাবশেষ একত্রে উদ্ধার হয়েছিল ৷ নিখোঁজ হিসেবেই তাঁরা আজও ফাইলে ৷ অভিযোগ, তাঁদের পরিবার পায়নি সরকারি সুবিধাও ৷ আদালত রেলওয়ের চক্করে এখনও লালফিতার ফাঁসে বাঁধা অবস্থায় লড়াই করছে স্বজন হারানো পরিবারগুলি।
এমনই একটি পরিবার হল হাওড়ার সালকিয়ার আটা পরিবার ৷ ৪২ বছরের প্রসেনজিৎ আটা ওই জ্ঞানেশ্বরী ট্রেন দুর্ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ ৷ ঘটনার পরে মৃত ধরে নিয়ে রেলওয়ে ৫ লাখ, রাজ্য সরকার ৩ লাখ ক্ষতিপূরণ দিলেও এখনও মৃত বলে স্বীকৃতি পাননি প্রসেনজিৎ আটা ৷ নানা কাজের স্বার্থে ডেথ সার্টিফিকেট পেতে পরিবার আদালতে মামলা চালাচ্ছে ৷ ১২ বছর ধরে মামলার লড়াই করতে করতে গত ৩ এপ্রিল হৃদরোগে প্রাণ হারিয়েছেন নিখোঁজ প্রসেনজিৎ আটার স্ত্রী যুথিকা আটা ৷ আদালতে মামলার লড়াইয়ে এবার অসহায় বৃদ্ধা ঠাকুমাকে নিয়ে হাজির হলেন নাবালিকা মেয়ে পৌলমী আটা।আরও পড়ুন: এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার অধীনে বিপুল নিয়োগ, আবেদন শুরু
প্রসেনজিৎ আটার হয়ে মামলা পরিচালনা করছেন আইনজীবী তীর্থঙ্কর ভকত ৷ তীর্থঙ্কর বাবু বলেন, প্রসেনজিৎ আটা রেলওয়েরই ঠিকাদার ছিলেন৷ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সরবরাহের কাজ করতেন ৷ তিনি মহারাষ্ট্রের ভাদুয়ালে যাচ্ছিলেন ওই জ্ঞানেশ্বরীতে চেপেই ৷ কিন্তু ২৭ মে রাতে সেই দুর্ঘটনার পরে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান ৷ তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছিলেন ৭২ ঘন্টার মধ্যে সমস্ত ছিন্নভিন্ন দেহ শনাক্ত করে পরিবারের হাতে দেওয়া হবে ৷ দেওয়া হবে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ৷ কিন্তু ১২ বছর কেটে গিয়েছে, পরিবারটিকে এখনও দেওয়া হল না ডেথ সার্টিফিকেট ৷ অথচ মৃত বলে রেলওয়ে ৫ লাখ, রাজ্য ৩ লাখ ক্ষতিপূরণ দিয়েছে ৷ অথচ তাঁকে ডেথ সার্টিফিকেট দিচ্ছে না ৷আরও পড়ুন: একাধিক সম্পর্কে আপত্তি বোনের, সবক শেখাতে দাঁড়িয়ে থেকে গণধর্ষণ ও খুন করাল দিদি!
নিখোঁজ ২১ জনের তালিকাতে রাখা হয়েছে ১২ বছর ধরে ৷ অথচ আইনে বলা রয়েছে ৭ বছর নিখোঁজ থাকলে মৃত বলে ঘোষণা করতে হবে। কিন্তু এই প্রাশাসনিক উদাসীনতার কারণে ১২ বছর ধরে বিভিন্ন দফতরে ঘুরে হয়রান হয়ে তাঁর স্ত্রী যুথিকা আটা হৃদরোগে প্রাণ হারান। রোজগারহীন পরিবারে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে প্রসেনজিতের বৃদ্ধা মা ও একমাত্র নাবালিকা মেয়েকে৷ এতদিনে আদালত নিয়মানুসারে নোটিস করেছে প্রশাসনের কর্তাদের ৷
পৌলমী তাঁর বৃদ্ধা ঠাকুমাকে সঙ্গে নিয়ে মেদিনীপুর আদালতে হাজির হয়েছিলেন ৷ পৌলমী বলেন, 'আমার বাবা যে মারা গিয়েছে তা প্রমাণ করতে করতে মা শেষ পর্যন্ত শয্যাশায়ী হয়ে প্রাণ হারালেন ৷ এখন বাড়িতে আমি ও ঠাকুমা, কোনও রোজগার নেই ৷ ১২ বছর কী কষ্টে কেটেছে তা কেবল আমরাই জানি ৷ মা যে লড়াই করছিলেন, তা আদালতের কাছে আমি করতে পারব না ৷ আমি নাবালিকা হওয়াতে ঠাকুমাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি তাই ৷ বাবার মৃত্যুর শংসাপত্র পেলে হয়তো চাকরির জন্য চেষ্টা করতে পারবো ৷' এই মামলা বর্তমানে ঝাড়গ্রাম আদালতে৷ মেদিনীপুর আদালত থেকে সরানো হয়েছে ৷ তাই নিয়মানুসারে মেদিনীপুর আদালতে মামলাকারী মৃতা মা এর যাবতীয় তথ্য দিয়ে এই মামলা লড়ার প্রস্তুতি শুরু করলেন নাবালিকা পৌলমি ৷ আইনজীবি তীর্থঙ্কর ভকত বলেন, এখান থেকে যাবতীয় নথি জমা করে তা ফরওয়ার্ড করা হবে ঝাড়গ্রামে। পরবর্তী মামলার শুনানির তারিখ ঝাড়গ্রাম আদালত নির্ধারন করবে। পার্থ মুখোপাধ্যায়নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Bangla News, West Midnapore news