রঞ্জন চন্দ, পশ্চিম মেদিনীপুর: দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর মূর্তি গড়লেন নারায়ণগড়ের এক শিল্পী।হায়দ্রাবাদের রাষ্ট্রপতি ভবনের গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে মূর্তিটি। রাষ্ট্রপতির পূর্ণাবয়ব মূর্তি গড়ে প্রশংসা পেলেন নারায়ণগড়ের শিল্পী সুধীর মাইতি। গত ২২ মার্চ হায়দ্রাবাদের নতুন রাষ্ট্রপতি ভবনের গ্যালারিতে বসেছে এই পূর্ণাবয়ব মূর্তিটি। যদিও এই কাজটি করার ক্ষেত্রে গোপনীয়তা বজায় রাখতে হয়েছিল শিল্পীকে। সারা ভারতবর্ষের মধ্যে বাংলার শিল্পী ও ভাস্কর সুধীর মাইতি এই দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
শিল্পী জানান, প্রথমে ক্লে মডেলের কাজ দেখে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী দুজনেই সম্মতি জানান। পরে এই কাজের জন্য তাঁরা প্রশংসাও করেছেন।প্রসঙ্গত,সুধীর মাইতি পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় ব্লকের বেনাডিহার বাসিন্দা। এর আগে বহু মূর্তি গড়েছেন। প্রতি বছর স্থায়ী দুর্গামূর্তি গড়েন তিনি। পুরস্কারও জেতেন। তবে দিল্লির প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে রাষ্ট্রপতির মূর্তি গড়ার বরাত পাবেন আশা করেননি। এতেই খুশি তিনি। পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চির এই মূর্তি গড়তে সময় পেয়েছেন মাত্র সাতদিন। শিল্পী জানাচ্ছেন, তাঁর ওয়েবসাইটে আপলোড করা কাজ দেখে দিল্লির ন্যাশনাল মিউজিয়াম রাষ্ট্রপতি ভবনে জানায়। সেখান থেকেই শিল্পী সুধীর মাইতির কাছে খবর আসে গত ১১ মার্চ।
রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে যোগাযোগ করে দিল্লিতে গিয়ে মূর্তি বানানোর কথা বললেও তা সম্ভব হয়নি শিল্পীর। তাঁর কলকাতার কর্মশালাতে এই মূর্তি গড়েছেন। তিনি বলেন, " কম সময়। তারপর দিল্লিতে হাতের কাছে তেমন কিছুই পেতাম না। বা পেতে অসুবিধে হত। তাই নিজের কর্মশালাতে করতে চেয়েছি। তাতে পরে সম্মতি পাই।" গত ১৩-১৯ মার্চ সময়টুকু রাতদিন এক করে গড়েছেন মূর্তি। তিনি জানান, এত কম সময়ে মূর্তি গড়তে হয়েছে। প্রথমে জানিয়েছিলাম দেড়মাস সময় লাগবে। তবে তাঁরা সাতদিনের মধ্যে কাজ চেয়েছিলেন। এটা আমার কাছে চ্যালেঞ্জের ছিল। গত ২২ মার্চ এই ফাইবারের মূর্তিটি বসেছে হায়দ্রাবাদের রাষ্ট্রপতি ভবনে। রাষ্ট্রপতি নিজেই উপস্থিত ছিলেন। যদিও শিল্পীকে যেতে হয়নি।
আরও পড়ুন : শনি-রবি লংড্রাইভে দিঘা ঘোরার ইচ্ছে? জেনে নিন আকাশ ভেঙে কী দুর্যোগ আসছে সৈকতশহরে
শিল্পী জানাচ্ছেন, কলকাতা থেকে বিমানে ২০ মার্চ মূর্তিটি তোলা হয়। তবে মূর্তি গড়ার প্রাথমিক পর্যায়ে মাটির কাজ দেখাতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরে। মূর্তির ছবি পাঠাতে হয়েছে একাধিকবার। যা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেখে সম্মতি জানানোর পর চূড়ান্ত কাজ করেন শিল্পী। তবে রাষ্ট্রপতি তার মূর্তির মুখমণ্ডলের রঙের ব্যবহারে কিছু পরামর্শ দেন । শুধু মূর্তি নয়, তাতে শাড়ি, গহনা, অলংকার সব কিছুই করতে হয়েছে। পেন্টিংও শিল্পী নিজে করেছেন। শিল্পী রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর একটি মাত্র ফটোগ্রাফ পেয়েছিলেন। তা দেখেই তাকে গড়তে হয়েছে এই মূর্তিটি।
শিল্পী বলছেন, " আমার সঙ্গে কারওর তেমন যোগাযোগ ছিল না। ওয়েবসাইটে আমার কাজ দেখে আমাকে ওঁরা এই কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি।" কাজ ভাল হয়েছে বলে প্রশংসা করেছে সংশ্লিষ্ট ভবন।
রাষ্ট্রপতির পূর্ণাবয়ব মূর্তি করার পর আরও আত্মপ্রত্যয়, বিশ্বাস বেড়েছে ভাস্কর সুধীরের। তিনি আপ্লুত। তার বক্তব্য," কাজটি আমার কাছে সত্যিই সম্মানের ছিল। এই কাজ করে আত্মপ্রত্যয় ও বিশ্বাস দুই আরও বাড়ল।" তার এই কাজে সর্বত সহযোগিতা পেয়েছেন ছেলে শুভ্রজ্যোতি মাইতির কাছ থেকে। তিনিও বাবার পেশা ও নেশার সহচর। সুধীরের আকাঙ্খা," শিল্পী ও ভাস্কর হিসেবে উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ করে যেতে চাই।"
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Draupadi Murmu, West Midnapore