পশ্চিম মেদিনীপুর: পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ির কুরুমবেড়া দুর্গ ইতিহাস প্রসিদ্ধ একটি স্থান। প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে বহু পর্যটক আসেন এই দুর্গ ঘুরে দেখাবার জন্য। বর্তমানে এই দুর্গের সংস্কার করা হয়েছে সরকারি তরফে। তবে ইতিহাস উদ্ধারের দাবী তুলেছেন স্থানীয়রা। সম্প্রতি একটি কাঠামো উদ্ধার হওয়ায় কুরুমবেড়া দুর্গের কাছে খননের দাবি তুলেছেন সকলে।
প্রসঙ্গত, পর্যটকদের বিনোদনের জন্য গত জানুয়ারিতে দুর্গের পশ্চিম পাশে উদ্যান করার জন্য কাজ শুরু করেছিল ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগ। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে একটি নকশা যুক্ত কাঠামো। যার আদল নাকি মন্দিরের। ঘিরে দেওয়া হয়েছে জায়গাটি। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগ জানাচ্ছে, আপাতত কাজ বন্ধ। দুর্গের ফাউন্ডেশনের একটি অংশ পাওয়া গেছে। এমন কিছু নয়।
জানা গিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে কুরুমবেড়া দুর্গের বাইরে পশ্চিম ধারে কাজ শুরু হয়েছিল। এএসআই জানাচ্ছে, প্রাচীন এই দুর্গের পশ্চিম দিকের জায়গাতে একটি উদ্যান গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পর্যটকদের সময় কাটানোর একটি পরিবেশ তৈরির জন্যেই প্রাথমিক ভাবে খোঁড়ার কাজ শুরু হয়। নীচে শক্ত পাথর থাকায় সন্দেহ হয়। খনন চালায় এএসআই। বেরিয়ে আসে একটি 'স্ট্রাকচার'। তবে সেটি অন্য কিছুর নাকি দুর্গের বর্ধিত অংশ তা পরিস্কার নয়। স্থানীয়দের অনেকের মত, যে আদল পাওয়া গেছে তাতে মনে হচ্ছে মাটির নীচে কোনও বাড়ি বা সুড়ঙ্গ বা মন্দির আছে। মাকড়া পাথরের তৈরি স্ট্রাকচারটিতে কারুকার্য আছে। অনেকটা মন্দিরের আদলে।
গগনেশ্বর এলাকায় রয়েছে প্রাচীন এই দুর্গ কুরুমবেড়া। বিশাল দুর্গের বেশ কিছুটা অংশ এখনও রয়ে গিয়েছে। ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যাবে সম্পূর্ণ পাথরের তৈরি একটি স্থাপত্য। পাথর কেটে কেটে সাজিয়ে তোলা হয়েছে এই দুর্গের দেওয়াল। চারিদিক ঘেরা সুসজ্জিত দেওয়াল বা প্রাচীরের মধ্যে রয়েছে তিনটি গম্বুজ আকারের স্থাপত্য। কেউ কেউ মনে করেন এটি একটি মন্দির বা দেবালয় ছিল। যার চারিদিকে প্রাচীর বেষ্টিত একাধিক কুঠুরি ছিল। যেখানে তীর্থ যাত্রীরা বিশ্রাম নিতেন।পরবর্তীতে মোগল এবং তারপরে মারাঠারা এটিকে সেনা নিবাস বা ছাওনি হিসেবে ব্যবহার করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এটি কুরুমবেড়া দুর্গ বা ফোর্ট হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। আবার কেউ কেউ মনে করেন চতুর্দিক বিস্তৃত প্রাচীর ঘেরা এই দুর্গ আসলে পান্থশালা। যেখানে ব্যবসা-বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে আসা কিংবা ধর্মীয় স্থানে আসা মানুষেরা সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে বা বিনামূল্যে থাকতে পারতেন। তবে এই ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিয়ে সাধারণ মানুষ ও গবেষকদের মধ্যে নানার মত থাকলেও বর্তমানে বেশ কিছুটা অংশ ক্ষতিগ্রস্ত। তবে কুরুমবেড়া ঘুরতে আসা পর্যটকদের বিনোদনের জন্য দুর্গের পাশেই বাগান তৈরির সিদ্বান্ত নেওয়া হয়েছিল।সেখানে খননে পাওয়া যায় এই স্ট্রাকচারটি।
প্রশ্ন, এএসআই দুর্গের পশ্চিমে খুঁড়ে যে নির্মাণের আদল পেয়েছে তা কিসের ? পরে তা খুঁড়ে বন্ধ করে কেনই বা জায়গাটি ভরানো হল ? কেন জায়গাটি ঘিরে দেওয়া হয়েছে ? সাধারণের দেখতে দেওয়া হচ্ছে না। এখান থেকেই সন্দেহ দানা বেঁধেছে এলাকাবাসীর মধ্যে। তাদের বক্তব্য, এই রহস্য উদ্ঘাটন করুক এএসআই। স্থানীয় বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ আচার্য ,কমলাকান্ত আচার্যরা বলেন, " বাগান তৈরির জন্য খননের ফলে এটি বেসমেন্ট বা স্ট্রাকচার বেরিয়েছে। এটি কিসের! আমরা চাই এর সত্য সামনে আসুক। এলাকার মানুষ জানুক। পর্যটকদের কাছে উন্মুক্ত করা হোক। একে সাজিয়ে তুলে এলাকার জীবন জীবিকার উন্নয়ন হোক। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুক।" যখন কাজ চলছিল তখন এর তত্ত্বাবধানে ছিলেন ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের কলকাতা মণ্ডলের আধিকারিক শুভ মজুমদার। এখন তিনি মুম্বই মণ্ডলের দায়িত্বে। তিনি বলেন," বাগান তৈরির জন্য কাজ শুরু করা হয়েছিল। নীচে পাথরের ফাউন্ডেশনের একটি অংশ আছে। সেটা দুর্গেরই কোনও অংশ। ওটা এমন কিছু নয়।" তবে কৌতুহল যেন পিছু ছাড়ছে না সাধারন মানুষের।
Ranjan Chanda
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: History