#পশ্চিম বর্ধমান- শুরু হয়েছিল সেই সাড়ে চার বছর বয়সে। নিছক খেলার ছলে হাতে তুলেছিলেন ব্যাট। বয়স বেড়েছে। সঙ্গে বড় হয়েছে স্বপ্ন। লম্বা হয়েছে সাফল্যের তালিকা। সামনে থেকে দেখা পেয়েছেন ক্রিকেটের ভগবান শচীনের। খেলেছেন অনুঃর্দ্ধ ১৯। এখন তাঁর কাঁধে রয়েছে রঞ্জি ট্রফিতে বাংলাকে সাফল্য এনে দেওয়ার দায়িত্ব। তবে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে আরও একটা। সুযোগ পেয়েছেন আইপিএলে। বাংলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে এসে তিনি জায়গা পেয়েছেন কিংস ইলেভেন পঞ্জাবে। ঋত্বিক বিজয় চট্টোপাধ্যায়। আপাতত তিনি ভুবনেশ্বরে রঞ্জিতে ব্যস্ত। আউশগ্রাম ব্লকের সুয়াতা গ্রামে জন্ম ঋত্বিকের (West Bardhaman Exclusive)। এখনও গ্রামে গিয়ে সময় পেলে ব্যাট হাতে নেমে পড়েন মাঠে। নিজের লোকেদের সঙ্গে খেলার মাধ্যমে লুটে নেন শৈশবের আনন্দ। সেই ঋত্বিক বিজয় চট্টোপাধ্যায় মুখ খুলেছেন নিউজ ১৮ লোকালে। জানিয়েছেন জীবনের শুরু থেকে বর্তমান কালের যাত্রা সম্পর্কে।
ঋত্বিক বিজয় চট্টোপাধ্যায়। আদি বাড়ি সুয়াতা গ্রামে। তবে বর্তমান বারাসতের বাসিন্দা। বাবা বিজয় চট্টোপাধ্যায় অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। ক্রিকেটার ঋত্বিকের উত্থান মধ্যগ্রামের সৃষ্টি অ্যাকাডেমি থেকে। সিএবির অ্যাম্পায়ার কমিটির সদস্য প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় তার গুরু, পথপ্রদর্শক। তবে জীবনের এই জায়গায় পৌঁছনোর জন্য তিনি সম্পূর্ণ সহায়তা পেয়েছেন পরিবারের থেকেও। বাবার হাত ধরেই ক্রিকেটে হাতেখড়ি। দাদা ঋতমও ক্রিকেটার। তবে ময়দানে সবথেকে সফল ঋত্বিক। জীবনে সবসময় পাশে পেয়েছেন মা এবং বান্ধবী তথা স্ত্রীকে।
ঋত্বিক জানিয়েছেন, আইপিলে কিংস ইলেভেন পঞ্জাব তাঁকে ২০ লক্ষ টাকায় কিনেছে। আইপিএলে সুযোগ পাওয়াটা তার কাছে খুবই আনন্দের। তিনি নিজের ওপর আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। অনুঃর্দ্ধ ১৯ ছাড়াও জাতীয় স্তরের বিভিন্ন ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় তিনি খেলেছেন। এখন বাংলার হয়ে রঞ্জিতে ব্যস্ত রয়েছেন তিনি। এখন সেই লক্ষ্যভেদ নিয়ে তিনি ভাবতে চান। রঞ্জি শেষ হলে তিনি আইপিএলের দিকে মনোনিবেশ করবেন। (West Bardhaman Exclusive) সাড়ে বছর বয়স থেকে গ্রামের মাঠেই খেলা শুরু করেছেন তিনি। ধীরে ধীরে খেলায় এগিয়ে গিয়েছেন (West Bardhaman Exclusive)। তবে প্রথমে তিনি ক্রিকেটকে প্রফেশন হিসেবে নেওয়ার কথা ভাবেননি। পরে যখন তিনি বুঝতে পারেন পারফরম্যান্স ভালো হচ্ছে, তখন সিদ্ধান্ত বদল করেন। ক্রিকেটের ওপর বেশি সময় ব্যায় করতে শুরু করেন। স্থানীয় বারাসত অ্যাসোসিয়েশনের কাছে তালিম নিতে শুরু করেন। তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়া। বাড়ি থেকে কখনও চাপের সম্মুখীন হতে হয়নি তাঁকে। বাবা, দাদাকে সবসময় কাছে পেয়েছেন।
প্রত্যেক ক্রিকেটারের মতো, ঋত্বিকেরও স্বপ্ন রয়েছেন ইন্ডিয়া ক্যাপ মাথায় তোলার। আইপিএলে সুযোগ পাওয়ার পর সেই স্বপ্ন যেন আরও জোরদার হয়েছে ঋত্বিকের কাছে। ইন্ডিয়া খেলতে চান তিনিও। ক্রিকেটের ভগবান শচীন তার কাছে ভগবান। সামনে থেকেও তাঁকে দেখার সুয়োগ পেয়েছেন ঋত্বিক। শচীনের খেলা দেখে তিনি শিক্ষা নিয়েছেন কিভাবে টিকে থাকতে হয়। এবি ডিভিলিয়ার্স তার পছন্দের অন্যতম প্লেয়ার। তাঁর ব্যাটিংয়ের দক্ষতা ঋত্বিকের কাছে স্বপ্নের মতো।
আইপিএলে পঞ্জাবে সুযোগ পেয়েছেন ঋত্বিক। কিন্তু পঞ্জাবের জন্য ট্রায়ালের ডাক পেয়েও ব্যক্তিগত কারণে তা দেওয়ার সুযোগ হয়নি। কিন্তু কেকেআর, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও চেন্নাইয়ের জন্য ট্রায়াল দিয়েছিলেন তিনি। তবে ডাক পেয়েছেন পঞ্জাবের থেকেই। তবে এই ডাক যে একদিন আসবে, সে বিষয়ে যথেষ্ট আশাবাদী ছিলেন তিনি। কারণ বিভিন্ন জাতীয় স্তরের ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় পারফরম্যান্স নিয়ে কিছুটা সন্তুষ্ট ছিলেন ঋত্বিক। আর বাংলার ছেলে হয়ে আইপিএলে কেকেআরে সুযোগ না পাওয়া নিয়েও বিশেষ আক্ষেপ নেই তার। ঋত্বিক মনে করেন, ক্রিকেটার হিসেবে তাঁর খেলে যাওয়াটা প্রধান কর্তব্য। তবে ছেলে বাংলার টিমে সুযোগ না পাওয়ায় কিছুটা আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন বাবা বিজয় চট্টোপাধ্যায়। বিজয় চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি সুয়াতা গ্রামেই বড় হয়েছেন (West Bardhaman Exclusive)। ছেলেরাও জীবনের শুরুতে গ্রামেই ছিলেন। যদিও পরে তিনি গ্রাম ছেড়ে বাইরে চলে যান। কিন্তু ভোলেননি নিজের গ্রামকে। সুযোগ পেলেই এখনও আদি বাড়ি সুয়াতা যেতে ভোলেন না তিনি। ছেলে ঋত্বিকের ক্রিকেট ভবিষ্যত নিয়েও তিনি আশাবাদী ছিলেন। ছেলেকে সব বিষয়ে সবসময় পূর্ণ সমর্থন করেছেন। এখনও তা করে যান। ছেলের আইপিএলের সুযোগ পাওয়ার সাফল্যে খুবই আনন্দিত তিনি।
বিজয় বাবু আরও জানিয়েছেন, তাঁর বাবা অর্থাৎ ক্রিকেটার ঋত্বিকের দাদু নরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন সংস্কৃতী ও শিক্ষাপ্রেমী মানুষ। দেশের স্বাধীনতার কয়েক বছরের মধ্যে তিনি গ্রামে স্কুল তৈরির উদ্যোগ নেন। পাশাপাশি খেলাধুলোর প্রতি তাঁর ভীষণ আগ্রহ ছিল। তাই ছেলের সাফল্যের কিছুটা অংশ দাদুরও প্রাপ্য বলে মনে করেন বিজয় চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ছেলের সাফল্য যেমন তাঁকে গর্বিত করেছে, তাঁর নাম উজ্জ্বল করেছে, ঠিক তেমনভাবেই উজ্জ্বল আর গর্বিত করেছে সুয়াতা গ্রামের নাম।
Nayan Ghosh
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: IPL 2022, West Bardhaman