#পশ্চিম বর্ধমান- ভোট প্রচারে নানান ছবি দেখা যাচ্ছে আসানসোলে। এই রাজ্য জুড়ে ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণ। ভাইরাসের তান্ডব বাগে আনতে রাজ্য সরকার জারি করেছে একাধিক নিষেধাজ্ঞা। তার মধ্যেই আসানসোলে পুর নির্বাচন আগামী ২২ জানুয়ারি। ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে ভোট কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ। চলছে জোড় কদমে প্রচার। সময় যত এগিয়ে আসছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হচ্ছে আসানসোলের মাটি।
যদিও ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমনের সময় নির্বাচন হওয়া নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার এই মামলার শুনানিতে, ভোট হতে যাওয়া কেন্দ্রগুলির সংক্রমণ ও পরিস্থিতি সম্পর্কে রাজ্য সরকারের কাছে জবাব তলব করেছে আদালত। কোন এলাকায় কতগুলি কনটেইনমেন্ট জোন রয়েছে, সংক্রমণের মাত্রা কেমন, এই সমস্ত বিষয় রাজ্যের কাছে জানতে চেয়েছে আদালত। পাশাপাশি প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ, নির্বাচন কমিশনের কাছে জানতে চেয়েছে এই পরিস্থিতিতে সংক্রমণ এড়িয়ে কিভাবে ভোট করানো সম্ভব। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই জবাব দিতে বলা হয়েছে রাজ্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে। আগামী বৃহস্পতিবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি। তবে নির্বাচনের ভবিষ্যৎ যাই হোক না কেন, আপাতত রাজনৈতিক দলগুলির প্রচারে জমজমাট আসানসোলের মাটি।প্রচারে ধরা পড়ছে নানান ছবি। কোথাও দেখা যাচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে প্রচার। কোথাও আবার স্বাস্থ্য বিধি ভঙ্গ করে প্রচারে মেতে উঠছেন প্রার্থীরা। তাছাড়াও হেভিওয়েট প্রচারের কাজ শুরু হয়েছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রচারকে কেন্দ্র করে সোমবার ও মঙ্গলবার দু'দিনই খনি শহরের মাটি উত্তপ্ত হয়েছে। অন্যদিকে তৃণমূল নেতা অভিজিৎ ঘটক দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচার করেছেন। তৃণমূলের এই নেতাকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রচার করতে দেখা গিয়েছে।পাশাপাশি জোরকদমে চলছে ভোট কর্মীদের বুস্টার ডোজ দেওয়ার কাজ। যে সমস্ত সরকারি কর্মচারীদের ভোটের ডিউটি দেওয়া হয়েছে, তাদের গত সপ্তাহে বুস্টার ডোজ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার হিসেবে ভোট কর্মীদের বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে নির্বাচনের তারিখ যত এগিয়ে আসছে, ততই কোভিড আবহের মধ্যে প্রকট হচ্ছে নির্বাচনের গরম হওয়া। রাজনৈতিক দলগুলির প্রচারকে কেন্দ্র করে বাড়ছে উত্তেজনার পারদ। শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দেখা যাচ্ছে ঘাসফুল ও পদ্মফুলের ভোটযুদ্ধে প্রস্তুতি।আসানসোল ৫০ নম্বর ওর্য়াড এর প্রার্থী অভিজিৎ ঘটক বাড়ি বাড়ি প্রচার সারলেন মঙ্গলবার। আসানসোল চেলিডাঙ্গা বিভিন্ন জায়গায় প্রচার করেন তিনি ।কোভিড পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশিকা মেনে প্রচার করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হিসেবে নিজের সমর্থনে প্রচার সারেন তিনি। পাশাপাশি তৃণমূলের এই হেভিওয়েট প্রার্থী জানিয়েছেন, দলের অন্যান্য প্রার্থীদের হয়েও তিনি প্রচার করছেন। তাকে প্রচারের জন্য যেখানে অনুরোধ জানানো হচ্ছে, সেখানেই দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে তিনি প্রচার করছেন। নিজের সমর্থনে প্রচারের পাশাপাশি, আসানসোলে ১০৬ টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় প্রচারে যোগদান করছেন।
অন্যদিকে, দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে আসানসোলে রয়েছেন বিজেপির সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ। মঙ্গলবার সকালে তিনি চায় পে চর্চা-এ যোগ দেন। ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার করেন তিনি। ওই ওয়ার্ডের প্রার্থী ভিগু ঠাকুরের সঙ্গে তিনি চায় পে চর্চা যোগ দিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরতি পথে দীলিপবাবুর সঙ্গে দেখা হয় ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী রণবীর সিং-য়ের। সেখানে তৃণমূল প্রার্থীর সঙ্গে কিছুটা বাদানুবাদ হয় দীলিপবাবুর।উল্লেখ্য, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে গত নির্বাচনে বিজেপির দখলে ছিল। তাই বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ সভাপতিকে সামনে পেয়ে ক্ষোভ উগরে দেন তৃণমূল প্রার্থী। অভিযোগ করেন বিজেপির হাতে থাকাকালীন ওই ওয়ার্ডে কোনও উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি।তাছাড়াও, দীলিপবাবু ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার করতে যান। সেখানে পদযাত্রা করেন তিনি। তবে সেখানে পুলিশ বাধা দেয় দিলীপ ঘোষের পদযাত্রায়। অতিমারির সময় রাজ্য সরকারের নির্দেশ অমান্য করে বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা যোগ দেন দলের কেন্দ্রীয় নেতার পদযাত্রায়। সংক্রমণ ছড়ানোর ভয় এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে এই পদযাত্রায় বাধা দেয় পুলিশ। সেখানে পুলিশের সঙ্গে বচসা বাঁধে দিলীপবাবুর।তবে প্রচার, পাল্টা প্রচারের মাধ্যমে ধীরেধীরে উত্তপ্ত হচ্ছে আসানসোলের পুরনির্বাচনের ময়দান। বহু প্রার্থী স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রচার করছেন। কখনও আবার রাজনৈতিক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে, জনসমর্থন কুড়ানোর লক্ষ্যে ভুলে যাচ্ছেন করোনাবিধি। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ আরও বাড়তে থাকলেও, নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসবে, ততই বাড়বে প্রচারের ঝাঁঝ।