#আসানসোল : পশ্চিম বর্ধমান জেলার অন্যতম পুন্যতীর্থ দেবী কল্যাণেশ্বরীর মন্দির। দেবী কল্যাণেশ্বরীর বয়সে বহু প্রাচীন। হয়তো শহরের জন্ম লগ্নের আগে থেকেই পূজিত হয়ে আসছেন দেবী কল্যাণেশ্বরী। তবে শুধু কল্যাণেশ্বরী নয়, সেখানে রয়েছেন আদি কল্যাণেশ্বরীরও। যে মন্দির প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে রয়েছে পৌরাণিক এবং ঐতিহাসিক মত।
দেবী কল্যাণেশ্বরীর ওপরলিখিত একটি বই এবং মন্দিরের সেবাইতদের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল রাজা বল্লাল সেনের শাসনকালে। বছরের প্রত্যেকদিনই এই মন্দিরে বহু ভক্তদের ভিড় লেগে থাকে। বিশেষ বিশেষ দিনে ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ে। তবে কল্যানেশ্বরী মন্দিরে দীপান্বিতা অমাবস্যার কালী পুজো উপলক্ষে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। সেদিন সাত্যক মতে পঞ্জিকা অনুযায়ী পুজো হয় দেবী কল্যাণেশ্বরীর।
আরও পড়ুন: বাড়ির কালীপুজোয় ভোগ রান্না-পুষ্পাঞ্জলির পর অতিথি আপ্যায়ণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
বাঙালিদের কাছে কাছেপিঠে ঘোরার জায়গা মানেই মাইথন। আর যারা মাইথন এসেছেন, তারা কল্যানেশ্বরী মন্দিরে যান নি এমনটা কিন্তু নয়।রাজ্যবাসীর কাছে কল্যানেশ্বরী প্রাচীন দেবীপীঠ বলেও চিহ্নিত। সিনেমা হয়েছে কল্যানেশ্বরীকে নিয়ে। রয়েছে ঐতিহাসিক এবং অলৌকিক গল্পগাঁথা। বর্তমান যে কল্যানেশ্বরী মন্দির রয়েছে, তার থেকে বেশ কিছুটা দুরেই রয়েছে প্রাচীন মন্দিরটি। ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে শবনপুর এলাকায় কল্যানেশ্বরীর প্রাচীন মন্দির। কল্যানেশ্বরীর প্রধান সেবাইত দিলীপ দেওঘরিয়া জানিয়েছেন, প্রাচীন মন্দিরেই দেবী অধিষ্ঠিতা আছেন। এখানেই রাজা কল্যানীপ্রসাদ মা কল্যানেশ্বরীকে রেখেছিলেন। আর নিয়ে যেতে পারেননি।
আরও পড়ুন: পুষ্পাঞ্জলি-ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বালানো, বাড়ির কালীপুজোয় অন্য রূপে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! দেখুন
কিন্তু কী সেই গল্প? জানা গিয়েছে, রাজা বল্লাল সেনের পালিতা কন্যার নাম ছিল লক্ষ্মী। লক্ষ্মীর সঙ্গে বিয়ের ঠিক হয় পুরুলিয়ার কাশীপুরের রাজা কল্যানীপ্রসাদের। বিয়ের যৌতুকে শ্যামারুপার মুর্তি তুলে দেওয়া হয় লক্ষ্মীকে। কল্যানীপ্রসাদ স্ত্রী লক্ষ্মীকে বিয়ে করে ফিরছিলেন। সঙ্গে ছিল দেবী শ্যামারুপা। কুলটির স্বপ্নপুর গ্রামের কাছে জঙ্গলে দিকভ্রষ্ট হন তাঁরা। স্বপ্নপুরের বর্তমান নাম শবনপুর। সেখানের জঙ্গলেই শ্যামারুপাকে নামিয়ে রেখেছিলেন তাঁরা। কিন্তু পরের দিন সকালে শত চেষ্টা করেও দেবীকে আর তুলতে পারেন নি। তারপর সেই শবনপুরেই তৈরি হয় শ্যামারুপার মন্দির। কাশীপুরের রাজা কল্যানীপ্রসাদের নামে যা পরবর্তী কালে কল্যানেশ্বরী হয়ে যায়।
এই গল্পের পাশাপাশি আরেকটি অলৌকিক গল্প আছে। জানা গিয়েছে, বর্তমান যে মন্দির রয়েছে, সেখানে তখন জঙ্গল ছিল। পাশে ছোট নদী বয়ে যেত। সেখানেই এক শাঁখারির কাছে শাখা পড়েন এক বধু। কিন্তু তিনি টাকা নিতে বলেন কল্যানেশ্বরী মন্দিরের সেবাইত দেবনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। শাঁখারি ওই যুবতীকে শাঁখা পরিয়ে চলে যান শবনপুর গ্রামে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেবনাথবাবুর কাছে গিয়ে শোনেন, তিনি নিঃসন্তান। এরপরে দেবনাথবাবু ওই শাঁখারিকে নিয়ে ফের সেই জঙ্গলে নদীর ঘাটে যান। গিয়ে দেখেন সেই যুবতী আর নেই। পাথরে পায়ের ছাপ। পরে এখানেই নতুন মন্দির তৈরি হয়। আজও নতুন মন্দিরের পাশে চালনাদহ ঘাটে মায়ের সেই পায়ের ছাপ। কালীপুজোর রাতে প্রচুর ভক্তকুল উপস্থিত হন মন্দিরে। এই চালনাদহ ঘাটে মোমবাতি, প্রদীপ জ্বালান তাঁরা। সারারাত চলে মায়ের পুজো।
নয়ন ঘোষ
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Asansol news, Diwali 2022, Kali Puja 2022