#নয়াদিল্লি : ভারতের হাতে আসতে চলেছে জল থেকে উৎক্ষেপণ যোগ্য নতুন অস্ত্র। অন্তত এমনই ইঙ্গিত মিলল শুক্রবার। নতুন ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষা করল ভারতীয় নৌ সেনা। শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর দুপুরে বঙ্গোপসাগরে এই পরীক্ষা চালান হয় বলে জানা গিয়েছে। যদিও এটি ঠিক কোন ক্ষেপণাস্ত্র, কত দূর এর গতি তা এখনও কিছুই জানানো হয়নি সরকারি ভাবে।
জানা গিয়েছে বঙ্গোপসাগরে পারমানবিক সাবমেরিন আইএনএস অরিহন্ত থেকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। মিসাইলটির রেঞ্জ আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। নৌবাহিনীর প্রস্তুতি পরীক্ষা করার জন্যই এই পরীক্ষা বলে জানা গিয়েছে। তার বাইরে ক্ষেপণাস্ত্রের প্রযুক্তি পরীক্ষা করে নেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল বলেও মনে করা হচ্ছে। কিন্তু এ ছাড়া আর কোনও তথ্যই পাওয়া যায়নি।
সাধারণত, সেনা বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার বিষয়ে সমস্ত তথ্য প্রকাশ করে না। তবে নৌবাহিনী সাবমেরিন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে যার অর্থ ধরে নেওয়া যায় এসএলবিএমএস অর্থাৎ সাবমেরিন লঞ্চড ব্যালিস্টিক মিসাইল ছোঁড়া হয়েছে। তবে সাবমেরিন থেকে ক্র্যুজ মিসাইলও ছোঁড়া হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন : সেই নাকি 'কালপ্রিট'! কে এই চণ্ডী? বৌবাজারের বিপর্যয়ের নেপথ্যে ২০১৯ সালের ঘটনা!
মনে করা হচ্ছে নৌবাহিনী যে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে তা ‘কে ফ্যামিলি অফ মিসাইল’। ‘কে’ শব্দটি ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও ভারতরত্ন প্রাপ্ত বিজ্ঞানী এপিজে আবদুল কালামের নামানুসারী। এই কে-মিসাইল সম্পর্কে অধিকাংশ তথ্যই ভারতীয় সেনা বাহিনী গোপন রেখেছে। তবে যতটুকু জানা গিয়েছে, এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র প্রয়োজন অনুসারে শত্রুর উপর ‘সেকেন্ড স্ট্রাইক’-এর জন্য ব্যবহার করা হবে। যাতে শত্রু ঘাঁটি একেবারে গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়।
অগ্নির চেয়ে মারাত্মক অথচ হালকা এবং দ্রুত—ভূমি থেকে ভূমিতে ক্ষেপণ যোগ্য অগ্নি মিসাইলেরই জল থেকে ক্ষেপণ যোগ্য সংস্করণ হল এই কে-মিসাইল। অথচ, এগুলি অগ্নির চেয়ে অনেক বেশি হালকা এবং দ্রুতগামী। শুধু তাই নয় এর মারণ ক্ষমতাও অনেক বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। এগুলি পারমানবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম।২০১৭ সালে প্রথম বার নৌবাহিনীতে কে-১৫ মিসাইলটি যুক্ত করা হয়। এটিই প্রথম। দ্বিতীয় মিসাইলটি হল কে-৪। মনে করা হচ্ছে এই মিসাইলটির পরীক্ষাই চলছে। তবে ঠিক করে এই ক্ষেপণাস্ত্রটি নৌবাহিনীর হাতে আসবে তার দিনক্ষণ এখনও স্থির করা হয়নি।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কে ফ্যামিলির মিসাইলগুলি সম্পর্কে কিছু তথ্য—
কে-১৫ / সাগরিকা:এই ক্ষেপণাস্ত্রের দৈর্ঘ্য ১০ মিটার, প্রস্থ ০.৭৪ মিটার, ওজন ৬-৭ টন। এটি এক থেকে দেড় টন অস্ত্র বহনে সক্ষম। ৭৫০ থেকে ১৫০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে প্রতি ঘণ্টায় ৯২৬১ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানতে সক্ষম এই মিসাইল। সাগরিকার স্থল সংস্করণের নাম শৌর্য।
#DRDO Submarine Launched Ballistic Missile by #INSArihant successfully tested today to a predetermined range & it impacted the target area in the Bay of Bengal with high accuracy, validating all operational and technological parameters
[File Video]pic.twitter.com/bhAGC20n3r — Defence Decode® (@DefenceDecode) October 14, 2022
কে-৪:এটি মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এটি ৩৫০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। শুধু তাই নয় এটি মাঝপথে দিক পরিবর্তন করতেও সক্ষম এই মিসাইল। কে-৪ মিসাইলটির ওজন ১৭ টন, দৈর্ঘ্য ১২ মিটার। এর গতিবেগ সম্পর্কে কোনও তথ্য এখনও প্রকাশ করেনি সেনা বাহিনী।
কে-৫:এটির উৎপাদন এখনও শুরু হয়নি। জানা গিয়েছে, ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও) এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে। একবার ভারতীয় নৌবাহিনীর হাতে এই অস্ত্র এলে জলের নিচ থেকে শত্রুকে আক্রমণ করার সেরা অস্ত্রটি চলে আসবে ভারতের হাতে। ভবিষ্যতে অরিহন্তের মতো সাবমেরিনে এই ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করা হবে। প্রায় ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারবে এটি। তবে গতিবেগ কত হতে পারে তা এখনও পরীক্ষাধীন। আর আগেই বলা হয়েছিল ২০২২ সালে এটি পরীক্ষা করা হতে পারে। ফলে অদূর ভবিষ্যতেই এ সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন : ঘূর্ণিঝড়ের ভয় নেই! আশ্বস্ত করে রাজ্যের আবহাওয়ার 'বড় আপডেট' দিল হাওয়া অফিস
কে-৬:কে পরিবারের সব থেকে উন্নত মিসাইলটি উপহার দিতে ডিআরডিও। এটিও আপাতত তৈরির পরিকল্পনা চলছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এটি একটি মাল্টিপল ইন্ডিপেন্ডেন্টলি টার্গেটেবল রি-এন্ট্রি ভেহিকল বা এনআইআরভি, যা তিন পর্যায়ভুক্ত কঠিন জ্বালানী দ্বারা চালিত। মনে করা হচ্ছে এর দৈর্ঘ্য হতে পারে ১২ মিটার, ব্যাস ২ মিটার। ২ থেকে ৩ টনের ওজনের অস্ত্র বহনে সক্ষম হবে এই মিসাইল। শত্রু নিধনে পাড়ি দিতে পারবে ৬ থেকে ৮ হাজার কিলোমিটার পথ। সম্ভবত এটি এস৫ শ্রেণির সাবমেরিনে যুক্ত করা হবে। খুব শীঘ্রই এটিও পরীক্ষা মূলক উৎক্ষেপণ চালান হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: INS Arihant