'মহামিলনের ক্ষণে...' বদলেছে সময়, তবুও একই থেকে গিয়েছে আবেগ, ভক্তি! নৈপুরগড়ের পুজোর চিরাচরিত ঐতিহ্য আজও অমলিন
- Published by:Rachana Majumder
- hyperlocal
- Reported by:Madan Maity
Last Updated:
কালের আবর্তে ফিকে হয়েছে পুরনো নিয়ম, জায়গা করে নিয়েছে নতুন প্রথা। কিন্তু বদলায়নি এলাকাবাসীর ভক্তি আর আবেগ। সেই ভক্তিই আজও অটুট রেখেছে নৈপুর গড়ের দুর্গোৎসবকে।
পটাশপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, মদন মাইতি: জেলায় জেলায় বনেদিবাড়ির ইট-কাঠ-পাথরের অন্তরালে লুকিয়ে থাকে নতুন গল্প, নতুন পরম্পরা। পূর্ব মেদিনীপুরের নৈপুর গড়ের পুজো আজও বহন করছে প্রাচীন ঐতিহ্যের নিয়ম। প্রায় ৩৫০ বছর আগে এই পুজো শুরু হয়েছিল ঘরোয়া ঘটপুজোর মাধ্যমে। ইতিহাসের পাতায় দেখা যায়, ১৬৬৫ সালে নৈপুর গড়ে প্রতিষ্ঠিত হয় মদনমোহন জিউ মন্দির। তখন আশপাশের এলাকা কোথাও দুর্গাপুজোর ছায়া পর্যন্ত ছিল না। সেই প্রেক্ষাপটে মন্দির কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে জন্ম নেয় এই ঐতিহ্যবাহী দুর্গোৎসব। প্রথমদিকে পুজো হত কাঁচা মাটির কুঁড়েঘরে, যেখানে প্রতিমা ছিল না বরং ঘট পুজোর মাধ্যমে মেতে উঠতেন এলাকাবাসী। সেই সময় থেকেই দুর্গাপুজোর কয়েকটি দিন এলাকাবাসী ভিড় গমগম করে নৈপুর গড় চত্বর।
আরও পড়ুনঃ উত্তরবঙ্গের রাজবাড়ি এবার দক্ষিণবঙ্গে! পুজোর থিমে গড়বে ইতিহাস! দোতলা মণ্ডপে আসীন দেবী দুর্গা, কোথায় হচ্ছে জানেন?
সময় যেমন গড়িয়েছে, তেমনই পাল্টেছে পুজোর নিয়মকানুন। আগে দেবী দুর্গার ভোগে দেওয়া হত ঝোল অন্ন, কিন্তু এখন সেই রীতি অতীতের পাতায়। এককালে মাটির ঘরে ঘটপুজো করেই পুজো হত, আজ সেখানে সগৌরবে প্রতিমা স্থাপন হয়, আলোকোজ্জ্বল মণ্ডপে দেবীর আবির্ভাব ঘটে। এলাকাবাসীদের কাছে নৈপুর গড়ের পুজো হয়ে উঠেছে গর্বের উৎসব। এই আয়োজনের নেপথ্যে রয়েছেন দাস কানুনগো পরিবারের প্রায় ৩৫০ জন সদস্য। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাঁরা আজও মিলিত হয়ে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন পূর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া এই ঐতিহ্য। পরিবারের অন্যতম বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল মহালয়া থেকে নিরামিষভোজনের প্রথা। দেবীপক্ষের সূচনার সঙ্গে সঙ্গেই আমিষ আহার সম্পূর্ণরূপে বর্জন করেন পরিবারের সদস্যরা। কড়াভাবে পালন হয় এই নিয়ম। তবে বিজয়া দশমীর দিন দৃশ্যপট বদলে যায়—সেদিন আয়োজিত হয় মহাভোজ। মাছ-মাংস থেকে শুরু করে নানারকম পদে ভরে ওঠে ভোজের আসর।
advertisement
advertisement
advertisement
সারা বছরের বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে এক ছাদের নীচে পরিবারের সদস্যরা মিলিত হয়ে সেই ভোজকে রূপ দেন পারিবারিক পুনর্মিলনের এক মহোৎসবে। বছরের অন্য সময়ে কর্মসূত্রে ছড়িয়ে থাকা পরিবারের মানুষ পুজোর কদিনের জন্য ফিরে আসেন বাড়িতে। তাদের কাছে দুর্গাপুজো কেবল ধর্মীয় আচার নয়, বরং আবেগ আর স্মৃতির এক নিবিড় বন্ধন হয়ে ওঠে। দেবীকে ঘিরে যে ভক্তি, তা যেন আরও দৃঢ় হয় পারিবারিক ঐক্যের মাধ্যমে। এলাকাবাসীদের কাছেও নৈপুর গড়ের দুর্গোৎসব এক অমূল্য গর্ব। প্রতিবার পুজোর সময় গ্রামজুড়ে শুরু হয় উৎসবের আবহ—আনন্দ, মেলা, ভক্তি আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সমারোহে ভরে ওঠে চারপাশ। বদলেছে সময়, বদলেছে আচার-অনুষ্ঠানের ধরন, নতুন রীতি নিয়েছে পুরনো জায়গা—কিন্তু বদলায়নি এলাকাবাসীদের ভক্তি আর আবেগ। সেই ভক্তিই আজও অটুট রেখেছে নৈপুর গড়ের দুর্গোৎসবকে।
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
Medinipur (Midnapore),Paschim Medinipur,West Bengal
First Published :
September 24, 2025 5:07 PM IST
বাংলা খবর/ খবর/দক্ষিণবঙ্গ/
'মহামিলনের ক্ষণে...' বদলেছে সময়, তবুও একই থেকে গিয়েছে আবেগ, ভক্তি! নৈপুরগড়ের পুজোর চিরাচরিত ঐতিহ্য আজও অমলিন
