এই কারণেই বিধবা হয়েছেন আউশগ্রামের একাধিক মহিলা! এবার বাকিদের সংসার বাঁচাতে শুরু লড়াই 

Last Updated:

Widow:মেয়েরাই রক্ষা করছে গ্রাম, গ্রাম বাঁচানোর জন্য এ যেন মহিলাদের এক আন্দোলন।

+
মাঠে

মাঠে নেমেছেন মহিলারা 

আউশগ্রাম, বনোয়ারীলাল চৌধুরী: মেয়েরাই রক্ষা করছে গ্রাম। গ্রাম বাঁচানোর জন্য এ যেন মহিলাদের এক আন্দোলন। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের জঙ্গলমহলে ঢুকলেই এখনও ভেসে আসে মহুল ফুলের গন্ধ। সন্ধ্যায় সেই গন্ধে যেন ম-ম করে ওঠে চারিদিক। কিন্তু প্রকৃতির সেই গন্ধের আড়ালে লুকিয়ে আছে অসংখ্য দুঃখের কাহিনি।
বছরের পর বছর ধরে চোলাই মদের বিষাক্ত ছোবলে গ্রাম হারাচ্ছে পুরুষদের! একসময় সংসারের ভরসা ছিলেন যাঁরা, আজ তাঁদের অনেকেই নেই। অল্প বয়সেই বিধবা হতে হয়েছে বহু মহিলাকে। গ্রামবাসী সুমি মুর্মু বলেন, “অনেকদিন আগেই আমার স্বামী মদ খেয়ে অসুখে মারা গিয়েছে। মদ খেতে বারণ করলেও শুনত না। গ্রামেই মদ পাওয়া যায়, আমার স্বামী মারা গেছে এরপর অন্য কারোর সঙ্গে হলে বলুন তো কতটা কষ্ট হবে।”
advertisement
advertisement
চোলাই মদের অভিশাপে একের পর এক পরিবার ভেঙে পড়েছে। কারও স্বামী লিভারের অসুখে মারা গিয়েছেন, কেউ বা রোজকার অসুস্থতায় ধুঁকে ধুঁকে শেষ হয়ে গেছেন। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটি চলে যাওয়ায় সন্তানদের পড়াশোনা থেমে গেছে, জমিজমা বিক্রি হয়ে গিয়েছে চিকিৎসার খরচ জোগাতে গিয়ে। তবুও রক্ষা মেলেনি। অসহায় হয়ে পড়েছে পরিবারগুলো। তবে হাল ছাড়েননি সেই বিধবারা। চোখের জলকে শক্তিতে পরিণত করে তাঁরা গড়ে তুলেছেন ‘প্রমিলা বাহিনী’। চারটি গ্রাম ভাল্কী, শ্যামপুর, কুচিডাঙা, কুমিরখোলা এই গ্রামগুলোতে আজ প্রায় ৬০ জন বিধবা নারী একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে লড়াই করছেন চোলাইয়ের বিরুদ্ধে।
advertisement
প্রতিটি গ্রামেই ১২ থেকে ১৫ জন বিধবা মহিলা যুক্ত হয়েছেন এই আন্দোলনে। গ্রামবাসী পুতুল টুডু বলেন, “ছেলেগুলো সব মারা গেল, মেয়েদের বয়স অনেক কম। আমার স্বামীও মদ খেয়েই কাজ করতে গিয়ে মারা গেছে। মদ খেয়ে লিভার ফুলে যাচ্ছে আর ছেলেরা মারা যাচ্ছে। তাই আমরা মেয়েরা আলোচনা করে মিটিং করে ছেলেদের বাঁচানোর জন্য গ্রাম রক্ষা করার জন্য আন্দোলনে নেমেছি।”
advertisement
দিনভর সংসারের খাটুনি শেষে বিকেলে তাঁরা বেরিয়ে পড়েন ময়দানে। হাতে নেই কোনও অস্ত্র, বুকভরা যন্ত্রণা আর স্বামীদের চিকিৎসার কাগজপত্রই তাঁদের শক্তি। তাঁরা একেকটি ভাটিখানা, রাস্তায়-রাস্তায় এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে অনুরোধ করেন যেন দয়া করে মদ তৈরি করবেন না। আমাদের স্বামীদের মতো আর কারও যেন মৃত্যু না হয়। তবে এই লড়াই সহজ নয়। চোলাই কারবারিদের হাতে রীতিমত মার খাচ্ছেন এই মহিলারা, তাঁদের ভয় দেখানো হচ্ছে প্রতিদিন। তবুও এক পা পিছু হটেননি। পুলিশ ও আবগারিকে খবর দিচ্ছেন নিয়মিত। নিজেরাই গিয়ে ভাটিখানা ভেঙে দিচ্ছেন। সংকল্প তাঁদের একটাই, চোলাই মুক্ত গ্রাম গড়া। গ্রামবাসী বিফুল বাদ্যকর বলেন, “সংসার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মেয়েরা স্বামীহারা হচ্ছে। তাই মদ যাতে ওঠানো যায় সেই ব্যবস্থাই করছে মহিলারা। এই মহিলারা সমাজের জন্য দারুণ কাজ করছে। ওরা সমাজের কাজ করছে আবার ওদেরকেই মারধর করতে যাচ্ছে আমার মনে হয় ওদের শাস্তি পাওয়া উচিত। প্রশাসনের তরফ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।”
advertisement
আউশগ্রামের জঙ্গলে মহুলের গন্ধে মোড়া পরিবেশে আজও চোলাইয়ের কারবার চলছে দেদার। কিন্তু সেই অন্ধকারের ভিতর থেকে উঠে এসেছে আশার আলো। বিধবারা আজ গ্রামকে রক্ষা করার শপথ নিয়েছেন। একে অপরের ফোনে যোগাযোগ রাখছেন, একসঙ্গে ঘুরছেন গ্রামে গ্রামে। তাঁদের কথায় একটাই বার্তা “আমাদের স্বামী নেই, কিন্তু আমরা চাই না আর কোনও মহিলা আমাদের মতো বিধবা হোক।” আউশগ্রামের বিধবা মহিলাদের এই উদ্যোগ আজ অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা। তাঁরা দেখিয়ে দিয়েছেন, লড়াই মানেই অস্ত্র নয়, লড়াই মানে বুকের ভিতরে থাকা বেদনা ও সংকল্পকে কাজে লাগানো। গ্রামকে চোলাই মুক্ত করার এই যুদ্ধে তাঁরা কেবল নিজেদের নয়, বাঁচাতে চাইছেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও। তাঁদের এই সাহসী পদক্ষেপকে কুর্নিশ, আসলে, আউশগ্রামের জঙ্গলমহলে মেয়েরাই আজ রক্ষাকর্তা।
advertisement
বাংলা খবর/ খবর/দক্ষিণবঙ্গ/
এই কারণেই বিধবা হয়েছেন আউশগ্রামের একাধিক মহিলা! এবার বাকিদের সংসার বাঁচাতে শুরু লড়াই 
Next Article
advertisement
রাজ্য কমিটি তৈরিতে বিরাট জট, এক ব্যক্তি এক পদের 'গেঁড়োয়' আটকে বঙ্গ বিজেপি
রাজ্য কমিটি তৈরিতে বিরাট জট, এক ব্যক্তি এক পদের 'গেঁড়োয়' আটকে বঙ্গ বিজেপি
  • রাজ্য কমিটি তৈরিতে বিরাট জট

  • এক ব্যক্তি এক পদের 'গেঁড়োয়' আটকে বঙ্গ বিজেপি

  • অধিকাংশ নেতা নির্বাচন লড়তে চান অথচ সংগঠনের কাজে অনীহা

VIEW MORE
advertisement
advertisement