East Medinipur News: ছোটবেলার শখ আঁকড়ে ধরে আজ উদ্যোগপতি বাঙালি যুবক! ভাত যোগাচ্ছেন অন্যদের মুখেও
- Published by:kaustav bhowmick
Last Updated:
গৌতম মান্নার জন্ম নিম্নবিত্ত পরিবারে। মাধ্যমিক পাস করার পর ফাইন আর্টে ডিপ্লোমা করেছেন। সংসারের হাল ধরতে শেষ পর্যন্ত বেছে নেন ছোটবেলার শখককে
পূর্ব মেদিনীপুর: শখ আঁকড়ে আজ তিনি সফল উদ্যোগপতি। হ্যান্ড বাটিক শিল্পে বাকিদের পথ দেখাচ্ছেন গৌতম মান্না। চেনা ছকের বাইরে গিয়ে নিজের জীবন পাল্টানোর স্বপ্ন দেখে অনেকেই। কিন্তু কেউ সফল হয় কেউ বা ব্যর্থ। রামনগর-২ ব্লকের সটিলাপুর গ্রামের গৌতম মান্না যদিও চেনা ছকের বাইরে গিয়ে নিজের শখ আঁকড়ে ধরেই সফল হয়েছেন। শুধু সফল হওয়াই নয় তিনি বর্তমানে প্রায় একশো জনকে স্বনির্ভরতার দিশা দেখাচ্ছেন।
ছোটবেলার আঁকার শখকে পুঁজি করে প্রায় শূন্য হাতে শুরু করেন। আর তিনিই এখন একজন সফল উদ্যোগপতিও বলা চলে। বছর আটত্রিশের গৌতম মান্নার জন্ম নিম্নবিত্ত পরিবারে। মাধ্যমিক পাস করার পর ফাইন আর্টে ডিপ্লোমা করেছেন। সংসারের হাল ধরতে নানা পেশায় দশ বছর অতিবাহিত করেন। কিন্তু সেইসব পেশায় কিছুতেই মন ভরছিল না। হঠাৎই মাথায় ব্যবসা করার ভাবনা আসে। কিন্তু কী নিয়ে ব্যবসা করবেন তা ঠিক করতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত নিজের আঁকার শখকেই পেশাগতভাবে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন। শুরু করেন শাড়ির ওপর হ্যান্ড বাটিকের কাজ। নিজের স্বপ্নের নাম দেন ‘মা নাচিন্দা বাটিক ও বুটিক’।
advertisement
সংস্থার বয়স ১৪ বছর পেরিয়েছে। আর তাঁর এই সাফল্যের সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়েছেন স্ত্রী সুস্মিতা। শুরুতে ২০০৯ সালে নিজের তৈরি সামগ্রী বিভিন্ন বস্ত্র বিপণীতে সরবরাহ শুরু করেন গৌতম। পরে চাহিদা বাড়তে থাকায় সামান্য কিছু পুঁজি বিনিয়োগ করে বাড়িতেই কাঁচামাল মজুত করে ব্যবসা জমিয়ে বসেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন ডিজাইন এসেছে। কাজে এসেছে বিবর্তন। গৌতমও তাই নিরন্তর নিজেকে সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে চলার চেষ্টা করেন। এখন বছরে প্রায় ২ কোটি টাকার পণ্য তৈরি করছেন। যা রাজ্য, দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের বাজারেও রফতানি হচ্ছে।
advertisement
advertisement
সটিলাপুরে গ্রামের একেবারে কিনারায় সমুদ্র বাঁধের গায়ে গৌতমের বাড়ি। সেখানে গেলেই দেখা যাবে বাড়ির উঠোন জুড়ে ছড়িয়ে আছে থান থান কাপড়। কেউ সেই কাপড়ে অতি যত্নে আঁকছেন নানা নকশা, কেউ ব্যস্ত মোম ও বিভিন্ন রাসায়নিক তরলে কাপড় রাঙাতে। তাঁদের কাজ শেষ হল তো একদল মহিলা সেই কাপড় শুকনোর জন্য মেলে দিতে নিয়ে যাচ্ছে বাড়ির পাশের মাঠে। আর বাতাসের তালে ঢেউয়ের মতো দোল খাওয়া সেই কাপড়গুলি থেকে ভেসে আসছে রঙের গন্ধ। গৌতম মান্না কাঁচামাল আমদানি করেন বিষ্ণুপুর ও মুর্শিদাবাদ থেকে। সিল্ক, তসর, কটন, হ্যান্ডলুম কাপড়ের উপর তিনি নিজের হ্যান্ড বাটিক শিল্পের কাজ করেন।
advertisement
প্রথমে এই কাপড়গুলিকে প্রয়োজন মতে কেটে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত জলে ডুবিয়ে রাখতে হয়। তারপর সেটি শুকিয়ে নানা রকম নকশা আঁকা হয়। এর পরবর্তী পর্যায়ে কাপড়টির যে অংশে কোনও রঙ হবে না অর্থাৎ সাদা থাকবে, সেই অংশ ফুটন্ত মোম আর রজন মিশ্রিত প্রলেপ লাগানো হয় তুলির সাহায্যে। তারপর ন্যাপথলিন অ্যাসিড ও রঙের মিশ্রণ গরম অবস্থায় রেখে আর একটি পাত্রে জল নিয়ে কাপড়টি একবার রঙের জলে ও পরের বার রঙ বিহীন জলে ৫ মিনিট করে মোট ৩ বারে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হয়। তারপর পুনরায় শুকিয়ে যতগুলি রঙ ব্যবহার করা হবে ততবার আলাদা আলাদা করে ন্যাপথলিন অ্যাসিড মিশ্রিত জলে ৩ বার করে ডোবাতে হবে। আগের রঙ হয়ে যাওয়া অংশ মোম দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। সব শেষে বড় পাত্রে জলে সার্ফ মিশিয়ে তাতে কাপড়টি ভিজিয়ে মোম তোলা হয়। তারপর কাপড়টি আবার শুকনো করে, ইস্ত্রি করে তা বাজারজাত করা হয়।
advertisement
এই হ্যান্ড আর্ট বাটিক শিল্পে তৈরি হচ্ছে শাড়ি, বিছানার চাদর, উত্তরীয়, সালোয়ার, পাঞ্জাবি ইত্যাদি। গৌতম মান্না বলেন, শহরের বিভিন্ন মেলায় এই সমস্ত জিনিস পাওয়া যায়। দিল্লি, মুম্বই, দেরাদুন, নেপাল, বাংলাদেশেও এর ব্যাপক চাহিদা। তবে ব্যবসা বাড়ানোর লক্ষ্য থাকলেও পরিকাঠামোর অভাব আছে। তাই চাহিদা ও জোগানের সঙ্গে তাল রাখতে পারছেন না সেভাবে। তাঁর সঙ্গে কাজ করা শিল্পীরা মাসে ৬ থেকে ১২ হাজার টাকা উপার্জন করেন।
advertisement
সৈকত শী
Location :
Kolkata,West Bengal
First Published :
April 17, 2023 11:01 PM IST
বাংলা খবর/ খবর/পূর্ব মেদিনীপুর/
East Medinipur News: ছোটবেলার শখ আঁকড়ে ধরে আজ উদ্যোগপতি বাঙালি যুবক! ভাত যোগাচ্ছেন অন্যদের মুখেও