#পূর্ব বর্ধমান: চাকরি নয় চাকরির প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন বর্ধমানের বড়শুলের বকুলতলা এলাকার রাজমিস্ত্রি বিশ্বজিৎ মন্ডল। সোশ্যাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বজিৎ বাবু চাকরি পেয়েছেন কলকাতার চিত্তরঞ্জন কলেজের অতিথি অধ্যাপক হিসেবে। কিন্তু তাঁর চাকরি পাওয়ার বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। কারণ বিশ্বজিৎ বাবুর কলেজে যোগদানের প্রক্রিয়া এখনও সম্পন্ন হয়নি, তেমনটাই জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে কলকাতার চিত্তরঞ্জন কলেজের অধ্যক্ষ শ্যামলেন্দু চ্যাটার্জী বলেন, \"এখনই বিশ্বজিৎ মণ্ডলের কলেজে পড়ানোর প্রশ্নই আসে না। কলেজে শিক্ষক হতে গেলে তার নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। পার্ট টাইম শিক্ষক হতে গেলেও নির্দিষ্ট প্রসিডিওর রয়েছে। ইন্টারভিয়ের মধ্যে দিয়েই চাকরি হবে। আমি বিশ্বজিৎ মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। বিশ্বজিৎ মেধাবী ছাত্র তাই তার পাশে দাঁড়াতে চেয়েছি। বিশ্বজিৎ এর চাকরির জন্য আমি চেষ্টা করছি যাতে সে কোনও কলেজে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে চাকরি পায়। এ বিষয়ে বর্ধমানের বেশ কিছু কলেজে যোগাযোগও করেছি। এমনকি চিত্তরঞ্জন কলেজে যাতে তাকে চাকরি দেওয়া যায় তার জন্য চেষ্টা করছি।\"
এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন,\" কিন্তু আপাতত সরকারি নির্দেশিকা আসেনি। যখনই সরকারি নোটিশ আসবে নিয়োগ নিয়ে। তখনই চিত্তরঞ্জন কলেজ কর্তৃপক্ষ নিয়োগ নিয়ে বিজ্ঞাপন দিতে পারবে। তারপরই বিশ্বজিৎ বা যেকোনও চাকরি প্রার্থী চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন। আর সেই আবেদনের ভিত্তিতেই ইন্টারভিউ হবে এবং তার পরই শিক্ষক হিসেবে যোগদান করতে পারবেন বিশ্বজিৎ বা যে কোনও চাকরি প্রার্থী।\" চিত্তরঞ্জন কলেজের অধ্যক্ষ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, \" এরই মধ্যে বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যমে লিখেছে যে বিশ্বজিৎ চাকরি পেয়েছেন। কিন্তু তখনও বিশ্বজিৎ এর পক্ষ থেকে কোনও অ্যাপ্লিকেশন জমা পড়েনি কলেজে।
এরই মধ্যে বিশ্বজিৎ অ্যাপ্লিকেশন জমা দিয়ে গেছেন। তবে এখনই সে চাকরি পাবেন না। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কলেজে নিয়োগ করা যাবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের পর। সরকার অনুমতি দিলে, অতিথি অধ্যাপক নিযুক্ত হবে। এখনও শিক্ষা দফতর থেকে কোনও নির্দেশ আসেনি।\" অ্যাজবেস্টারের চাল দেওয়া দু কামরার ছোট্ট ঘরে বাবা-মাকে নিয়ে ছোট্ট সংসার বিশ্বজিৎ এর। বাবা রবীন মণ্ডল এবং মা টুনি মণ্ডল দিনমজুর। নিজেরা পড়াশোনা না করলেও ছেলেকে শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন। সিডিপি স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন বিশ্বজিৎ। তারপর উচ্চমাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করে মেমারী কলেজে পলিটিক্যাল সায়েন্স অনার্স নিয়ে ভর্তি হন।
আরও পড়ুনঃ হুল দিবস পালন পূর্ব বর্ধমানে২০১৪ সালে কলেজ থেকে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ২০১৬ সালে প্রথম বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। মাঝে কম্পিউটারে ডিপ্লোমা কোর্সও করেছিলেন। কিন্তু, এরপর থেকেই বিশ্বজিৎ এর জীবনের লড়াই শুরু হয়। ২০১৭ সাল থেকে চাকরির পরীক্ষা দিতে শুরু করেন তিনি। রেল, PSC, গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি পরীক্ষা দিলেও মেলেনি কোনও চাকরিই। বাবা ও মায়ের দিনমজুরির পয়সায় সংসার ঠিক করে চলত না। এদিকে শত চেষ্টা করেও চাকরি পাচ্ছিলেন না তিনি। তারপর সংসার টানতে শুরু করেন রাজমিস্ত্রির কাজ।
আরও পড়ুনঃ খুলেছে মিষ্টি হাব, বাড়ছে মিষ্টি বিক্রিআর তার সঙ্গেই বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় কাজের খোঁজ করে চলেছিলেন তিনি।লকডাউনের জেরে কোপ পড়ে বাবা মায়ের দিনমজুরির আয়ের উপরও। ফলে সেই সময় তাঁকে পুরোদমে নেমে পড়তে হয় রাজমিস্ত্রির কাজে। কম্পিউটার জানা MA পাশ বিশ্বজিৎ হয়ে যান রাজমিস্ত্রি। তবে এরইমধ্যে এই মেধাবী ছাত্রের পাশে দাঁড়িয়েছেন কলকাতার চিত্তরঞ্জন কলেজের অধ্যক্ষ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, যদি বিশ্বজিৎ মন্ডল কলেজের অতিথি অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন তাহলে তাঁর রোজগার হবে প্রতিদিন ৫০০ টাকা। অতিথী অধ্যাপক হিসেবে সে প্রতিদিন দুটো করে ক্লাস নিতে পারবেন। মাসে ৮ টি ক্লাস নিতে পারবেন তিনি। ফলে মাসিক তাঁর রোজগার হবে ২ হাজার টাকা। বর্তমানে বিশ্বজিৎ দিনে রোজগার করেন ৩৫০ টাকা। তবে এখনও বিশ্বজিৎ এর অতিথি অধ্যাপকের চাকরি পাওয়া নিয়ে রয়ে গেল প্রশ্ন।
Malobika Biswasনিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Purba bardhaman