পূর্ব বর্ধমান: অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা, সংসারের খরচ চালাতে পরের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে অর্থ উপার্জন করেন পঞ্চায়েত প্রধান। কথাটা শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব। বর্ধমানের বিজুর এক নং গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ঝর্ণা রায় পঞ্চায়েতের কাজের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে করছেন পরিচারিকার কাজ। ঝর্ণা দেবীর স্বামী নীলু রায়ের দুটো কিডনি খারাপের পাশাপাশি হার্টের সমস্যা রয়েছে। এর সঙ্গে নতুন করে তার দেখা দিয়েছে মানষিক সমস্যাও। নীলু বাবু বর্তমানে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মাটির বাড়িতে থেকেই পরপর দুবার তৃণমূলের টিকিটে বিজুর এক নং গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ঝর্ণা। ২০১৮ সালে বিজুর এক নং গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হিসাবে নিযুক্ত হন ঝর্ণা রায় । আর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান হয়ে এখনও পাড়ার দুটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন নিয়মিত । আর সেই কাজ থেকে যা রোজগার হয় তাই দিয়েই কোনও রকমে চালাচ্ছেন সংসার। ঝর্ণা দেবী জানিয়েছেন, আগে আরও দুটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন। পরিচারিকার কাজ করে কোনরকমে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তিনি।
বর্তমানে পঞ্চায়েতের কাজের চাপে দুটো বাড়ির কাজ তাকে ছেড়ে দিতে হয়েছে। তবে এখনও কাজ করে চলেছেন দুটি বাড়িতে। পঞ্চায়েত প্রধান হিসাবে তিনি সাম্মানিক পান মাসে পাঁচ হাজার টাকা। যা দিয়ে স্বামীর চিকিৎসার খরচই ঠিকমত হয় না। স্বাভাবিকভাবেই দুবেলা দুমুঠো খাবারের খরচ যোগাড় করতে এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন পরিচারিকার কাজ। আর তা দিয়েই কোনোরকমে চলছে ঝর্ণা দেবীর সংসার। তবে এখনও পর্যন্ত নিজের এই অসুবিধা বা সমস্যার কথা কাউকে বলতে পারেননি তিনি। মেমারী ২নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মামণি মূর্মূ তাঁর এই অবস্থা দেখে কখনও সখনও নানাভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
আরও পড়ুনঃ কালনার বিদ্যাসাগর টিচার ট্রেনিং কলেজে হস্ত শিল্পের প্রদর্শনীর আয়োজনমামণি মূর্মূ জানিয়েছেন, যখন তৃণমূল দল থেকে তাঁকে সংরক্ষিত আসনে দাঁড় করানো হয়েছিল তখন তাঁর সততাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। সেই সততার মূল্য নিজের জীবন দিয়ে দিচ্ছেন ঝর্ণাদেবী। কখনও কারও কাছে হাত পাতেননি। বলেননি নিজের সমস্যার কথা। অথচ প্রতিদিনই হাজারো মানুষ তাঁর কাছে আসেন বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। তিনি মেটানোর চেষ্টাও করেন। প্রধান হিসাবে তিনি ২৪ ঘণ্টাই তাঁর দায়িত্ব পালন করে চলেছেন নিরলসভাবে। গ্রামের বাসিন্দা ভগবতী রায় বলেন তাঁর বাড়িতে ১২ বছর ধরে দুবেলা কাজ করছেন ঝর্ণা। অত্যন্ত কষ্টে সংসার চালাচ্ছেন। কিন্তু কখনই প্রধান পদের অপব্যবহার করেননি।
আরও পড়ুনঃ অভিনব উদ্যোগ নিল পূর্ব বর্ধমান ভূমি রাজস্ব দফতর! জানুনএকদিকে, যখন গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য হয়েই লক্ষ – কোটি টাকার মালিক, গাড়ি, বাড়ি হাঁকিয়ে চালচলনে বদল ঘটে নেতাদের – সেখানে ঝর্ণা দেবীর এই দিনলিপি রীতিমত নজির গড়ছে গোটা রাজ্যে। পঞ্চায়েত প্রধান হিসাবে সরকারী নানান সুবিধা প্রদান সহ অসংখ্য মানুষের বিবিধ সমস্যা মেটানো বিজুর ১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ঝর্ণা রায় আজ তৃণমূল কংগ্রেসের সততার প্রতীক হয়েও তাঁর সমস্যা শোনার লোক নেই।
Malobika Biswasনিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Purba bardhaman