Mystery of Flight 571: আন্দিজে ভেঙে পড়েছিল বিমান, কনকনে ঠান্ডায় কোনওক্রমে ৭২ দিন বেঁচেছিলেন কিছু আরোহী ! জেনে নিন সেই চমকপ্রদ ঘটনার কথা
- Published by:Siddhartha Sarkar
- trending desk
Last Updated:
Mystery of Flight 571-Extreme Survival: প্রচণ্ড উচ্চতায় খাবার ছাড়াই অত দিন বেঁচেছিলেন। অথচ গোটা বিশ্বই তখন ভেবেছিল যে, আন্দিজ পর্বতে বিমান ভেঙে পড়ায় তাঁরা কেউই আর বেঁচে নেই।
মন্টিভিডিও, উরুগুয়ে: ১৯৭২ সালের ১৩ অক্টোবর। ৪০ জন যাত্রী এবং ৫ জন বিমানকর্মী নিয়ে উরুগুয়ের মন্টিভিডিও থেকে রওনা হয়েছিল চার্টার্ড উড়ান উরুগুয়ান এয়ার ফোর্স ফ্লাইট ৫৭১। গন্তব্য ছিল চিলির রাজধানী শহর স্যান্টিয়াগো। কিন্তু ওড়ার কিছু পড়েই তা ভেঙে পড়ে আন্দিজ পর্বতে। এই বিমানে যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন ১৯ জন রাগবি খেলোয়াড়ও ৷
আজ থেকে প্রায় একান্ন বছর আগের এই ঘটনা, যা আজও যেন শিহরণ জাগায়। এই ঘটনাকে ‘অলৌকিক’ও বলেন অনেকে। ফলে ওই উড়ানটিকে ‘মিরাকল ফ্লাইট ৫৭১’ বলেও আখ্যা দেওয়া হয়।
ওই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় যাঁরা বেঁচে গিয়েছিলেন, প্রথমে তাঁদের উদ্ধার করা যায়নি। বরং তাঁদের মাইনাস ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ৭২ দিন পর্যন্ত কাটাতে হয়েছিল। প্রচণ্ড উচ্চতায় খাবার ছাড়াই অত দিন বেঁচেছিলেন। অথচ গোটা বিশ্বই তখন ভেবেছিল যে, আন্দিজ পর্বতে বিমান ভেঙে পড়ায় তাঁরা কেউই আর বেঁচে নেই।
advertisement
advertisement
১৯৭২ সালে উরুগুয়েয়ান এয়ার ফোর্স ফেয়ারচাইল্ড এফএইচ-২২৭ডি বিমানটির বয়স ছিল মাত্র ৪ বছর। মূলত ওল্ড ক্রিশ্চিয়ান ক্লাব রাগবি ইউনিয়ন নিজেদের দলের সদস্য এবং তাঁদের পরিবারকে স্যান্টিয়াগোতে ইংলিশ ওল্ড বয়েজ ক্লাবের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে খেলাতে নিয়ে যাওয়ার জন্যই এটা নিয়েছিল। ১২ অক্টোবর নাগাদ ট্যুইন-ইঞ্জিন টার্বোপ্রপ রওনা হয়েছিল মন্টিভিডিও বিমানবন্দর থেকে। তবে একটি ঝড়ের জন্য দলটিকে সেই রাতটা আর্জেন্টিনায় কাটাতে হয়েছিল। পরের দিন দুপুর ২টো ১৮ মিনিট নাগাদ বিমানটি ফের রওনা দেয়। বিমান চালকরা প্লানচন পাসের দক্ষিণ দিক দিয়ে বিমান ওড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বিমান চালক জুলিও ফেরাদাস আন্দিজের উপর দিয়ে ২৯ বার বিমান উড়িয়েছেন। তিনি আসলে সহ-চালক দান্তে লাগুরারাকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন।
advertisement

দুপুর ৩টে ২১ মিনিট নাগাদ ওই পাস ক্লিয়ার করার কিছুক্ষণ পরেই লাগুরারা ভেবেছিলেন যে, এক মিনিটের মধ্যেই কুরিকো পৌঁছে যাবেন। ফলে অবতরণের জন্য প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। কিন্তু এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা প্রমাদ গুনেছিলেন। কারণ আসলে এতে সময় লাগে ১১ মিনিট। অথচ তাঁদের ক্ষেত্রে সময় লেগেছিল মাত্র ৩ মিনিট। লাগুরারাও এয়ার কন্ট্রোলারদের কাছে অবতরণের আর্জি জানিয়েছিলেন। আর সেই অনুরোধ মেনেও নিয়েছিলেন তাঁরা। এটাই ছিল চরম ভুল। আসলে ওই বিমান চালক অবস্থান বুঝতে পারেননি।
advertisement
লাগুরারা অল্পস্বল্প টার্বুলেন্স আশা করেছিলেন। কিন্তু কয়েকজন যাত্রী লক্ষ্য করেন যে, বিপজ্জনক ভাবে বিমানটি আন্দিজ পর্বতের খুবই কাছে চলে এসেছে। এই বিষয়টা লাগুরারা যখন বুঝতে পারেন, তখন দেরি হয়ে গিয়েছে। শেষরক্ষা করতে প্রচণ্ড উচ্চতায় পৌঁছনোর জন্য তিনি সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করেন। কিন্তু দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ একটি পাহাড়ে ধাক্কা খায় বিমানটি। যার ফলে এর ডান ও বাম দিকের পাখা এবং লেজের অংশ ভেঙে যায়। অ্যাভিয়েশন সেফটি নেটওয়ার্কের মতে, বিমানের দেহের বাকি অংশটি ভেঙে পাহাড় বেয়ে ৭২৫ মিটার পর্যন্ত যায়। এরপরেই সেটি একটি হিমবাহকে ধাক্কা খায়। চিলি সীমান্তের কাছে প্রায় ৩৫৭০ মিটার উচ্চতায় আর্জেন্টিনার এক দুর্গম উপত্যকায় পড়েছিল বিমানের ধ্বংসাবশেষ। বিমান ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ৪৫ আরোহীর মধ্যে ১২ জনের মৃত্যু হয়।
advertisement
খবর পেয়ে চিলিয়ান এয়ার সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ সার্ভিস (এসএআরএস) চারটি এয়ারক্র্যাফ্ট উদ্ধারকাজে নামে। এসএআরএস আধিকারিকরা কিছু না পেয়ে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছন যে, পর্বত ভূখণ্ডের দুর্গম স্থানে বিমানটি ভেঙে পড়েছে। আসলে দুর্ঘটনাস্থল দিয়ে উদ্ধারকারী বিমানগুলি ঘোরাফেরা করলেও ফেয়ারচাইল্ডের হদিশ পায়নি। কারণ সেটি পুরু বরফের সঙ্গে মিলেমিশে গিয়েছিল। আট দিন পরে এই তল্লাশি অভিযান বন্ধ হয়।
advertisement
এদিকে দুর্ঘটনার পরে প্রথম রাতে মৃত্যু হয় আরও ৫ আরোহীর। এই তালিকায় ছিলেন সহ-চালক লাগুরারাও। যাঁরা বেঁচে গিয়েছিলেন, তাঁরা নিজেদের গরম রাখার জন্য বিমানের সিটগুলি পরিষ্কার তা ব্যবহার করেছিলেন আশ্রয় হিসেবে। প্রায় ২৮ জন নিজেদের গরম রাখতে ছোট্ট জায়গায় জড়োসড়ো হয়ে থাকতেন। দিন কয়েক পরে আরও এক আরোহীর মৃত্যু হয়।
advertisement

২৭ জন আরোহীর কাছে তখন খাবারের রসদ বলতে চকোলেট বার, এক টিন ঝিনুক, তিন বয়াম জ্যাম, কিছু আমন্ড, খেজুর, ক্যান্ডি, ড্রায়েড প্লাম এবং ওয়াইন। পরবর্তী কালে অবশ্য রবার্তো কেনেসা নামে এক মেডিকেল পড়ুয়ার লেখা বই থেকে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। জানা যায়, ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য মৃত সহযাত্রীদের দেহের মাংস খেয়েছেন জীবিত থাকা আরোহীরা। বইয়ে কেনেসা দাবি করেছিলেন যে, ওই আরোহীর তালিকায় তিনিও ছিলেন। এই তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই হইচই পড়ে যায়। এরপর ২৯ অক্টোবর নাগাদ একটি তুষার ঝড় হয় ওই এলাকায়। তাতে আরও ৮ জনের মৃত্যু হয়।
এরপর নান্ডো প্যারাডো, অ্যান্তোনিও টিনটিন ভিজিন্টিন এবং কেনেসা মিলে বাঁচার শেষ চেষ্টা করেন। তাঁরা কোথায় আছেন, সেটা বোঝার জন্য ট্রেক করতে শুরু করেন। এরপর তাঁরা দুর্ঘটনাস্থলে ফিরে একটি স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে ট্রেক শুরু করেন। তিন দিন ধরে দুর্গম পার্বত্য অঞ্চল ধরে ট্রেক করেন তাঁরা। কিন্তু খাবারের ঘাটতির কারণে ভিজিন্টিনকে আবার দুর্ঘটনাস্থলে ফিরতে হয়। প্যারাডো আর কেনেসা ৯ দিন পর্যন্ত ট্রেকিং চালিয়ে একটি উপত্যকায় পৌঁছন। সেখানে এক ব্যক্তির দেখা পান। অবশেষে ২২ এবং ২৩ ডিসেম্বর বাকি জীবিত আরোহীদের উদ্ধার করে চিলিয়ান এয়ার ফোর্স।
Location :
Kolkata,Kolkata,West Bengal
First Published :
October 16, 2023 10:02 AM IST
বাংলা খবর/ খবর/পাঁচমিশালি/
Mystery of Flight 571: আন্দিজে ভেঙে পড়েছিল বিমান, কনকনে ঠান্ডায় কোনওক্রমে ৭২ দিন বেঁচেছিলেন কিছু আরোহী ! জেনে নিন সেই চমকপ্রদ ঘটনার কথা