Shigella infection: কেরলে শিগেলায় আক্রান্ত ছাত্রীর মৃত্যু, কী এই শিগেলা? কতখানি ভয়ঙ্কর এই ব্যাকটেরিয়া?
- Published by:Pooja Basu
Last Updated:
ডায়েরিয়া (Diarrhoea) ছড়ানো এই ব্যাকটেরিয়া সাধারণ ডায়েরিয়া ছড়ানো ব্যাকটেরিয়ার থেকে অনেক বেশি মারাত্মক।
#নয়াদিল্লি: চলতি সপ্তাহেই কেরলের এক রেস্তোরাঁর খাবারে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে ষোল বছরের এক কিশোরীর। একই খাবার খেয়ে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কোঝিকোড় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ৪০ জন। চিকিৎসকদের দাবি, এক বিশেষ ধরনের লেভেন্টিন (Levantine) খাবার শোরমা (Shawarma) থেকেই এই বিপত্তি বেঁধেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, চিকেন শোরমা খাওয়া প্রায় জনা ৪০ মানুষ এই ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। মূলত বাসি পচা খাবারেও এই বিশেষ ব্যাকটেরিয়া শিগেলা পাওয়া যায়।
গত ১ মে কেরলের কাসারগোড়ে একটি রেস্তোরাঁয় শোরমা খেয়েছিল বছর ষোলর কিশোরী দেবানন্দা। সঙ্গী ছিল তার আরও কিছু সহপাঠী। এলাকার একটি কোচিং সেন্টারের কাছেই ওই খাবার দোকানটি রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। চিকেন শোরমা খাওয়ার পরই একে একে অসুস্থ হয়ে পড়ে সকলকে। হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় মৃত্যু হয় দেবানন্দার।
advertisement
কোঝিকোড় সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আক্রান্ত রোগীদের মল ও রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠান হয়েছিল। সেখানেই শিগেলা (Shigella) ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান মিলেছে। জেলা স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. এভি রামদাস (Dr. AV Ramdas) জানিয়েছেন, শিগেলায় আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে দেবানন্দার। ঘটনার পরই অভিযুক্ত রেস্তোরাঁর ম্যানেজার-সহ তিন কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে সে দিন যে কর্মী শোরমা বানিয়েছিলেন তিনিও রয়েছেন। জানা গিয়েছে, ওই রেস্তোরাঁর মালিক দুবাইতে থাকেন। তাঁকেও ডেকে পাঠানো হয়েছে।
advertisement
advertisement
গোটা ঘটনায় নড়ে বসেছে আদালতও। কেরালা হাই কোর্ট বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছে এবং এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের অবস্থান চেয়েছে।
শিগেলা কী?
সারা বিশ্বে শিগেলার আধিপত্য। ডায়েরিয়া (Diarrhoea) ছড়ানো এই ব্যাকটেরিয়া সাধারণ ডায়েরিয়া ছড়ানো ব্যাকটেরিয়ার থেকে অনেক বেশি মারাত্মক। এন্টারোব্যাক্টর (Enterobacter) নামক ব্যাকটেরিয়া পরিবারের সদস্য। কিন্তু এন্টারোব্যাক্টর পরিবারে অন্য অনেক সদস্য যতখানি নিরীহ, শিগেলা ততখানি নয়। বরং অন্ত্রের সংক্রমণ ছড়িয়ে মারাত্মক ক্ষতি সে করতে পারে মানব শরীরে। তাঁর জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ দেবানন্দের আকালমৃত্যু।
advertisement
শিগেলা সংক্রমণের ফলে কী ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে?
ডায়রিয়া শিগেলা জীবাণুর অন্যতম উপসর্গ। কারণ এটি খাবারের সঙ্গে শরীরে ঢুকে সরাসরি অন্ত্রে সংক্রমণ ছড়ায়। পরিস্থিতি ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে এই সংক্রমণে। রোগীর রক্ত আমাশা দেখা দিতে পারে। সঙ্গে প্রচন্ড পেট ব্যথা, এমনকী পেটে খিঁচুনিও হতে পারে। কোনও কোনও রোগীর ক্ষেত্রে ধুম জ্বরও দেখা যায়। শিগেলার সংক্রমণের মাত্রা বেশ তীব্র। মূলত নষ্ট হয়ে যাওয়া বা পচা খাবার থেকেই এই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ছড়ায়।
advertisement
খুব সামান্য সংক্রমণ থেকেই মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন কোনও ব্যক্তি। আমেরিকার সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) জানিয়েছে, শিগেলা সংক্রমণ খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। খুব সামান্য ব্যাকটেরিয়াই মানুষকে অসুস্থ করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। শুধু পচা খাবার নয়, রোগীর মলমূত্রের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংস্পর্শেও এ রোগ সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে। দূষিত জলে সাঁতার কাটলে বা স্নান করলেও সংক্রমণ হতে পারে।
advertisement
পরিসংখ্যান বলছে সারা বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৮০-১৬৫ মিলিয়ন মানুষ শিগেলা সংক্রমণের শিকার হন। তার মধ্যে ৭৪ হাজার থেকে ৬ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার শিশুদের যে ডায়েরিয়া হয় তার মধ্যে অন্যতম বলা যায় এই শিগেলাকে।
শিগেলা সংক্রমণ কি আদৌ সাধারণ?
শিগেলা সংক্রমণ খুব সাধারণ মানের ডায়েরিয়া ছড়ায়—এমন কথা বলা যায় না একেবারেই। ভারতবর্ষে শিগেলা সংক্রমণের হারও খুব বেশি নয় বলেই দাবি করেছেন চিকিৎসকেরা। নয়াদিল্লির এক চিকিৎসকের দাবি, ভারতবর্ষে ১০০ জন ডায়েরিয়া রোগীর মধ্যে হয়তো একজন শিগেলা সংক্রমণের শিকার। তবে এই সংক্রমণ ছড়ালে বিপদ যে বাড়বে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
advertisement
কাদের বিপদ বেশি?
যে কোনও ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সংক্রমণের মতোই এই শিগেলা সংক্রমণেও ভয় বেশি অপেক্ষাকৃত দুর্বল মানুষের। গর্ভাবস্থায় যে কোনও মহিলা, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষের মধ্যে সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি এবং তাঁদের ক্ষেত্রেই রোগের প্রভাব গুরুতর হতে পারে।
CDC-এর দাবি, সারা বিশ্বে মোট চার ধরণের শিগেলা ব্যাকটেরিয়ার খোঁজ পাওয়া যায় যা মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এ গুলি হল— শিগেলা সোনেই (Shigella Sonnei), শিগেলা ফ্লেক্সনরি (Shigella Flexneri), শিগেলা বয়ডি (Shigella Boydii) এবং শিগেলা ডিসেন্টেরিয়া (Shigella Dysenteriae)। এদের মধ্যে সব থেকে মারণ ব্যাকটেরিয়া হল চতুর্থটি— শিগেলা ডিসেন্টেরিয়া। কারণ, এটি এক বিশেষ ধরনের বিষ তৈরি করে ফেলতে পারে মানবশরীরে।
এই চারটি ব্যাকটেরিয়ার মধ্য শেষ তিনটি চরিত্রগত ভাবে প্রায় একই রকম। বায়োকেমিকাল মেটাবলিজমের (Biochemical Metabolism)-এর কারণে খানিকটা হলেও পৃথক চরিত্রের হল শিগেলা সোনেই। এর সংক্রমণের হারও একটু কম। শিগেলা ফ্লেক্সনরিকে মোটামোটি বিচ্ছিন্ন একটি প্রজাতি হিসেবেই গণ্য করা হয়। উন্নয়নশীল দেশগুলির প্রায় ৬০ শতাংশ ডায়েরিয়া সংক্রমণের পিছনেই থাকে এই ফ্লেক্সনরি। অন্যদিকে শিগেলা সোনেই প্রায় ৭৭ শতাংশ সংক্রণ ছড়িয়ে থাকে প্রথম বিশ্বের উন্নত দেশগুলিতে। তুলনা করলে দেখা যাবে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে শিগেলা সোনেই সংক্রমণের হার মাত্র ১৫ শতাংশ। সব থেকে মারাত্মক শিগেলা ডিসেন্টেরিয়া, মূলত মহামারীর ক্ষেত্রে কার্যকর হয়ে থাকে। উদ্বাস্তু কলোনিতে আবদ্ধ বিপুল জনসংখ্যার মধ্যে এই ব্যকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি থাকে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশই এই সংক্রমণের জন্য দায়ী।
কী ভাবে অসুখ ছড়ায়?
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খাবারের মধ্যে দিয়ে শিগেলা (Shigella Infection) সংক্রমণ ঘটে শরীরে। মাত্র ১০০টি, এমনকী তার থেকে কম সংখ্যক ব্যাকটেরিয়াও একজন মানুষকে অসুস্থ করে ফেলতে পারে। নির্ভর করছে ওই ব্যক্তির শারীরিক পরিস্থিতির উপর, তাঁর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর। শেগিলা প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া সাধারণত মলাশয় (Colon)-এর গায়ে সংক্রমণ ছড়ায়। তাতে কোষের মৃত্যু হয়, আর প্রদাহ ছড়িয়ে পড়ে। তা থেকেই পেট খারাপ বা আমাশয়ের মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে। কোনও কোনও প্রজাতির শিগেলা বিষ তৈরি করতে পারে। তাতে রোগের মাত্রা আরও বাড়ে। যেমন শিগেলা ফ্লেক্সনরি (S. flexneri) তৈরি করতে পারে ShET1 এবং ShET2 বিষ (Toxin), যা ডায়েরিয়াকে ভয়াবহ করে তোলে। একই ভাবে শিগেলা ডিসেন্টেরিয়া (S. dysenteriae) তৈরি করতে পারে শিগা (Shiga Toxin), যা হেমোলাইটিক ইউরেমিক সিনড্রোম (Hemolytic Uremic Syndrome) তৈরি করতে পারে। এর ফলে কিডনির ভিতর রক্তনালীর ক্ষতি হয়।
সংক্রমণের কোন পর্যায়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে?
যদি একজন ব্যক্তি গুরুতর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন, অর্থাৎ, দিনে ২০ বার বা তার বেশি মলত্যাগ করা হলেই পরিস্থিতি গুরুতর। তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা দরকার। যদি কোনও রোগীর শরীরে হালকা উপসর্গ থাকে, তা হলে বাড়িতে চিকিৎসা করা যেতে পারে। কিন্তু তিন-চার দিন পরেও শরীরের উন্নতি না হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে যদি কোনও সংক্রামিত ব্যক্তির শরীরে ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট (বা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা তার বেশি জ্বর থাকে তা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শিগেলা সংক্রমণে মৃত্যু হার কত?
সাধারণত শিগেলা সংক্রমণে রোগীর মৃত্যুর হার কম। তবে দেবানন্দার মৃত্যু দেখিয়ে দিয়েছে এই ব্যাকটেরিয়ার ভয়াবহতা কতখানি হতে পারে। যে কথা আগেই বলা হয়েছে, দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারে বেশি। আবার সেই সমস্ত মানুষের শারীরিক অবস্থাও অন্যদের তুলনায় বেশি খারাপ হতে পারে। ওষুধে এই ব্যকটেরিয়ার নির্মূল করা সম্ভব, রোগ নিরাময়ও সম্ভব। তবে সে জন্য সচেতন থাকাও প্রয়োজন। বাড়িতে রোগীকে ফেলে রেখে অযথা সময় নষ্ট করা উচিত নয়।
কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন?
শিগেলা সংক্রমণ সাধারণত ঘটে খাদ্য বা পানীয়ের মাধ্যমে। তাই যে কোনও খাদ্য ও পানীয়বাহিত রোগের মতোই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এছাড়া আর যা দরকার-
১. যে কোনও খাবার খাওয়ার আগে এবং পরে ভাল ভাবে হাত ধোয়া দরকার।
২. পরিষ্কার পানীয় জল পান করা দরকার।
৩. ফল এবং শাকসব্জি টাটকা এবং ধুয়ে খাওয়া উচিত।
৪. দুধ, মুরগির মাংস এবং মাছের মতো জিনিস সহজেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আর তাতে সহজেই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটতে পারে। তাই এ ধরনের খাদ্য অতিরিক্ত সতর্কতার সঙ্গে খাওয়া দরকার। ভাল ভাবে সুসিদ্ধ করে রান্না করা এবং সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
দেশের সব লেটেস্ট খবর ( National News in Bengali ) এবং বিদেশের সব খবর ( World News in Bengali ) পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং টপ হেডলাইন নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ ডাউনলোড করুন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
First Published :
May 06, 2022 5:57 PM IST