PM Narendra Modi: প্রধানমন্ত্রীর লাক্ষাদ্বীপ সফর দেখে কেন ক্ষেপে গেল মলদ্বীপ? বিবাদের শুরু কখন? রইল বিস্তারিত
- Published by:Riya Das
- trending desk
- Written by:Trending Desk
Last Updated:
PM Narendra Modi: ছবি পোস্ট করতেই ভারত ও মলদ্বীপের মধ্যে শুরু হয়ে যায় ‘সোশ্যাল মিডিয়া যুদ্ধ’। শুধু তাই নয়, দুই বন্ধু দেশের মধ্যে তৈরি হয়েছে কূটনৈতিক দ্বন্দ্বও।
সামনে নীল সমুদ্র। বিচে ডেক চেয়ারে বসে আছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কোনওটায় আবার সাদা বালির উপর হাঁটছেন। লাক্ষাদ্বীপ সফরের এমনই একগুচ্ছ ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই নিয়ে উত্তাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। যেন আগুন লেগেছে। সেই ছবি পোস্ট করতেই ভারত ও মলদ্বীপের মধ্যে শুরু হয়ে যায় ‘সোশ্যাল মিডিয়া যুদ্ধ’। শুধু তাই নয়, দুই বন্ধু দেশের মধ্যে তৈরি হয়েছে কূটনৈতিক দ্বন্দ্বও।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত লাক্ষাদ্বীপ। এখনও সেভাবে পর্যটকদের পা পড়েনি। পরিকাঠামোগত উন্নয়ন এবং পর্যটনের প্রচারের জন্য গত সপ্তাহে লাক্ষাদ্বীপ গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই সফরের বেশ কিছু ছবি পোস্ট করেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু তার জন্য মলদ্বীপ থেকে এমন অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া আসবে কেউ ভাবেনি।
লাক্ষাদ্বীপের সমুদ্র সৈকতের ছবি পোস্ট করার পরেই আসরে নামেন মলদ্বীপের কয়েকজন নেতা-মন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করেন তাঁরা। এরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘যুদ্ধ’ শুরু হয়। অবস্থা বেগতিক বুঝে ‘বিদেশি নেতা ও উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে অবমাননাকর মন্তব্য’-এর অভিযোগে ওই তিন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছে মলদ্বীপ সরকার। পাশাপাশি জানিয়েছে, ওই মন্তব্যের সঙ্গে মলদ্বীপ সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই।
advertisement
advertisement
সোশ্যাল মিডিয়ায় লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণের ছবি পোস্ট করে প্রধানমন্ত্রী ‘অত্যাশ্চর্য সৌন্দর্য’ এবং ‘এখনকার মানুষের হৃদয়ের উষ্ণতা’র কথা লিখেছিলেন। সঙ্গে সমুদ্র ভ্রমণে উৎসাহী পর্যটকদের পরামর্শ দিয়েছিলেন, ‘লাক্ষাদ্বীপে একবার আসতেই হবে’। কিন্তু পোস্ট বা অফিসিয়াল বিবৃতিতে কোথাও মলদ্বীপ বা পর্যটকদের মধ্যে জনপ্রিয় অন্য কোনও দ্বীপরাষ্ট্রের কথা উল্লেখ করেননি। তাহলে কেন ক্ষেপে গেল মলদ্বীপ?
advertisement
কে শুরু করল: মলদ্বীপের মুইজ্জু সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী আবদুল্লাহ মাহজুম মজিদ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওই ছবি পোস্ট করে মলদ্বীপকে টার্গেট করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। এখানেই না থেমে তাঁর দাবি, বিচ ট্যুরিজমে ভারতকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে মলদ্বীপ। প্রধানমন্ত্রীর লাক্ষাদ্বীপ সফরের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। অনেক ইউজার কমেন্টে লেখেন, লাক্ষাদ্বীপ মলদ্বীপের বিকল্প পর্যটন গন্তব্য হয়ে উঠতে চলেছে। এরপরই এক্স প্ল্যাটফর্মে এহেন পোস্ট করেন মুইজ্জু সরকারের মন্ত্রী।
advertisement
অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজের পোস্ট ডিলিট করে দেন মজিদ। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। মলদ্বীপ সরকারের মন্ত্রী এবং বিশিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়া ইউজার হিসেবে তাঁর আপত্তিকর এবং অবমাননাকর পোস্ট অনেকেই দেখেছেন। তাঁর পোস্টে কেবল মোদিকে নয় বরং ভারত এবং ভারতীয়দের টার্গেট করেই করা বলে মনে করছেন তাঁরা।
শুধু মজিদ নন, মুইজ্জু সরকারের যুব ক্ষমতায়ন, তথ্য ও শিল্প দফতরের উপমন্ত্রী মারিয়ম শিউনা এক্স হ্যান্ডেলে মোদিকে ‘ভাঁড়’ এবং ‘ইজরায়েলের হাতের পুতুল’ বলে কটাক্ষ করেন। শিউনাও পরে পোস্ট ডিলিট করে দেন। মলদ্বীপ সরকার তাঁকেও বরখাস্ত করেছে। শিউনা কার্যত ভারতকে গোবরের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। লিখেছিলেন, ‘ভাঁড়টাকে দ্যাখো, ডুবুরিদের নিয়ে লাইফ জ্যাকেট পরিহিত ইজরায়েলের পুতুল মিস্টার নরেন্দ্র’। সঙ্গে #VisitMaldives #SunnySideOfLife হ্যাশট্যাগ। ওই মন্ত্রকের আরেক উপমন্ত্রী মালশা শরীফও ভারতের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করেন। তাঁকেও বরখাস্ত করা হয়েছে। পরিবহণ ও বেসামরিক উপমন্ত্রী হাসান জিহানেরও একই পরিণতি হয়েছে।
advertisement
জাহিদ রামিজ নামের এক সোশ্যাল মিডিয়া ইউজার, নিজেকে মলদ্বীপ প্রগ্রেসিভ পার্টির সদস্য বলে দাবি করেন, তিনি লিখেছেন, মলদ্বীপের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার কথা ভাবলে ভারত ‘ভুল’ করবে। দ্বীপরাষ্ট্রের উন্নত পরিষেবারর সঙ্গে ভারতের তুলনা করতে গিয়ে তিনি অবমাননাকর মন্তব্য করে বসেন। লেখেন, ‘ভারতের ঘরগুলোতে বিশ্রী গন্ধ’। তাঁর পোস্ট শেয়ার করে তীব্র সমালোচনা করেছেন বলিউড অভিনেতা অক্ষয় কুমার।
advertisement
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মলদ্বীপ সরকারের নেতা-মন্ত্রীদের এ হেন মন্তব্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দেন ভারতীয়রা। এরপরই মলদ্বীপের কিছু ওয়েবসাইট দিভেহি ভাষায় চাঞ্চল্যকর হেডলাইনে খবর প্রকাশ করে। মূলত তাদের অভিযোগ, ভারত মলদ্বীপের পর্যটনের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, লাক্ষাদ্বীপে পর্যটনের প্রসারে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচেষ্টার পাল্টা হিসেবে মলদ্বীপের নতুন ক্ষমতাসীন জোটের কর্মী-সমর্থকরা হলিডে রিসর্ট, সমুদ্র এবং হোটেলের ছবি দিয়ে ‘ভিজিট মলদ্বীপ’ হ্যাশট্যাগ চালু করেছে।
advertisement
এই ‘যুদ্ধ’ কতটা প্রাসঙ্গিক: মলদ্বীপ ভারত মহাসাগরে ভারতের প্রধান সামুদ্রিক প্রতিবেশী এবং SAGAR (মহাসাগরীয় অঞ্চলে সকলের নিরাপত্তা এবং বৃদ্ধি)-এর অংশ। মোদি সরকারের ‘নেবারহুড ফার্স্ট’ নীতিরও বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছে মলদ্বীপ। মলদ্বীপের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দ্বীপরাষ্ট্রের শীর্ষ দশ পর্যটকদের মধ্যে ভারতীয়রা অন্যতম। আসলে ভারতীয়দের একটা অংশ বিলাসবহুলভাবে ছুটি কাটানোর জন্য মলদ্বীপকেই বেছে নেন।
মলদ্বীপের জিডিপি-র ২৮ শতাংশ আসে পর্যটন থেকে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধু ২০২৩ সালে ২ লাখের বেশি ভারতীয় মলদ্বীপ ভ্রমণে গিয়েছেন। তারপর রয়েছে রাশিয়া এবং চিন। ২০২১ এবং ২০২২ সালে যথাক্রমে ২.৯১ এবং ২.৪১ লাখ ভারতীয় মলদ্বীপে ঘুরতে যান। ২০২১ সালে করোনা মহামারীর মধ্যেও এই বিপুল সংখ্যক ভারতীয় পর্যটকের আগমন ঘটেছিল মলদ্বীপে। গত বছর ১,০০,৯১৫ পর্যটকের (২০২৩-এর ১৩ জুন পর্যন্ত) সংখ্যা বলে দিচ্ছে ভারতীয়রা মলদ্বীপের ঠিক কতটা বাজার দখল করে আছেন।
এখন মোদি এবং ভারতীয়দের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্যের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ড করছে ‘বয়কট মলদ্বীপ’। একের পর এক ভারতীয় মলদ্বীপ যাত্রা বাতিল করছেন। গত ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অনেকে তাঁদের বুকিং বাতিল করেছেন। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ বছরের পর বছর ধরে মলদ্বীপে ভারতের সহায়তার কথা বলতেন। এখন তাঁরাও বেঁকে বসেছেন।
বলিউড সুপারস্টার সলমন খান, অক্ষয় কুমার, শ্রদ্ধা কাপুর থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ভারতের আইল্যান্ড’-এ ঘুরতে যাবার আবেদন জানিয়েছেন। ক্রিকেটার হার্দিক পান্ড্য, প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার ভেঙ্কটেশ প্রসাদও এক্স প্ল্যাটফর্মে মলদ্বীপের মন্ত্রীদের করা মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে ভারতের পর্যটনকে সমর্থন করার আহ্বান করেছেন। এক্স প্ল্যাটফর্মে সলমন খান লিখেছেন, ‘লাক্ষাদ্বীপের পরিচ্ছন্ন এবং অত্যাশ্চর্য সৈকতে মোদিকে ‘কুল’ দেখাচ্ছে। এবং সবচেয়ে বড় কথা হল ইয়ে হামারা ইন্ডিয়া মে হ্যায়’।
টাইগার শ্রফ বলছেন, লাক্ষাদ্বীপের সৌন্দর্য তাঁর মন কেড়ে নিয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, শান্ত সমুদ্র সৈকত এবং এখানকার মানুষের হৃদয়ের উষ্ণতা মোহনীয় আকর্ষণ তৈরি করে। এই দ্বীপগুলির অতুলনীয় সৌন্দর্য উদযাপনে আমার সঙ্গে যোগ দিন – আমাদের জন্য গুপ্তধনের ভাণ্ডার অপেক্ষা করে আছে’। শ্রদ্ধা কাপুর এবং অন্যান্য বলিউড তারকারা ‘এক্সপ্লোর ইন্ডিয়ান আইল্যান্ড’ এবং ‘লাক্ষাদ্বীপ’ হ্যাশট্যাগে পোস্ট করেছেন এক্স প্ল্যাটফর্মে। লিখেছেন, ‘এই সব ছবি আর মিম আমাকে সুপার FOMO করে তুলেছে। লাক্ষাদ্বীপের আদিম সমুদ্র সৈকত, উপকূলরেখা, সমৃদ্ধ স্থানীয় সংস্কৃতি – দুর্দান্ত ছুটি কাটানোর জন্য তর সইছে না’। তারপর যোগ করেছেন, ‘এই বছরই কেন নয়’।
নতুন বছর সপরিবারে মলদ্বীপে কাটিয়েছিলেন অক্ষয় কুমার। তিনিও মলদ্বীপের নেতা-মন্ত্রীদের ‘ঘৃণামূলক এবং বর্ণবাদী’ মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছেন। এক্স প্ল্যাটফর্মে খিলাড়ি কুমার লিখেছেন, ‘আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি, যে দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পর্যটক যায় সেই দেশের সম্পর্কে এমন মন্তব্য! আমরা প্রতিবেশীদের পাশে সবসময় দাঁড়াই, কিন্তু এরকম ঘৃণা কেন সহ্য করব? আমি অনেকবার মলদ্বীপে গিয়েছি, এখানকার প্রশংসা করেছি, কিন্তু নিজেদের মর্যাদা সবার আগে। আসুন আমরা সিদ্ধান্ত নিই #ExploreIndianIslands এবং আমাদের নিজস্ব পর্যটনকে সমর্থন করি’।
একই সুরে পোস্ট করেছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার ভেঙ্কটেশ প্রসাদও। তিনি লিখেছেন, ‘একজন উপমন্ত্রী আমাদের দেশ সম্পর্কে এমন ভাষা ব্যবহার করছেন! মলদ্বীপ একটা গরিব দেশ যেখানে ভারত থেকে প্রতি বছর ১৫ শতাংশের বেশি পর্যটক যায়। ভারতে অনেক অনাবিষ্কৃত সমুদ্র-শহর রয়েছে। সেগুলোকে পর্যটন গন্তব্য হিসেবে গড়ে তোলার এটাই দুর্দান্ত সুযোগ’।
ক্রিকেট ঈশ্বর সচিন তেণ্ডুলকর বলেছেন, আমার ৫০ তম জন্মদিন কাটানোর জন্য মহারাষ্ট্রের উপকূলীয় শহর সিন্ধুদুর্গে ফোন করেছিলাম। ‘আমরা যা চেয়েছিলাম তার থেকেও বেশি কিছু’ অফার করেছে। এক্স প্ল্যাটফর্মে সচিন লিখেছেন, ‘অপূর্ব আতিথেয়তা সঙ্গে চমৎকার অবস্থান। আমাদের স্মৃতির ভাণ্ডার পূর্ণ। ভারতের বহু দ্বীপ এবং উপকূলীয় শহর রয়েছে। আমাদের ‘অতিথি দেব ভব’ দর্শনের সঙ্গে মানানসই। শুধু খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের স্মৃতির মণিকোঠায় রয়ে যাবার জন্য অপেক্ষা করছে’।
ক্রিকেটার পান্ড্য বলেছেন, ভারত সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’। এক্স প্ল্যাটফর্মে তিনি লিখেছেন, ‘জমকালো সমুদ্র সৈকত-সহ লাক্ষাদ্বীপ নিখুঁত, আমার পরবর্তী ছুটি কাটানোর সেরা জায়গা হতে চলেছে’। পরিচালক মধুর ভান্ডারকর, অভিনেতা জন আব্রাহাম, কঙ্গনা রানাউত এবং রণদীপ হুডাও সোশ্যাল মিডিয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় লাক্ষাদ্বীপের হয়ে গলা ফাটিয়েছেন। কঙ্গনা লাক্ষাদ্বীপকে ‘অনাঘ্রাতা, অনাবিষ্কৃত, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর’ বলে অভিহিত করেছেন। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ‘বীর সাভারকর’-এর শ্যুটিং করছেন রণদীপ হুডা। তিনি বলছেন, ‘এই অঞ্চলের আদিম সৌন্দর্য এবং সমৃদ্ধ ইতিহাস দেখে আমি বিস্মিত’।
এক্স প্ল্যাটফর্মে আরেক বলিউড স্টার কার্তিক আরিয়ান লিখেছেন, ‘ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া শুধু ট্যাগ নয়, আমাদের দেশে অবিশ্বাস্য এবং অত্যাশ্চর্য সব জায়গা রয়েছে – লাক্ষাদ্বীপ তার উদাহরণ। ভারত স্বর্গের মতোই সুন্দর। ভারতের আইল্যান্ডগুলোয় ঘোরার জন্য তর সইছে না’। একই সুরে জন আব্রাহাম লিখেছেন, ‘ভারতীয় আতিথেয়তার সঙ্গে অতিথি দেব ভব-র দর্শন এবং বিশাল সামুদ্রিক জীবনের খোঁজ, লাক্ষাদ্বীপ সত্যিই ঘোরার জায়গা’।
মলদ্বীপ সরকারের প্রতিক্রিয়া: মলদ্বীপ সরকার মোদির বিরুদ্ধে অপমানজনক মন্তব্যের অভিযোগে তিন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছে। বরখাস্ত হওয়া মন্ত্রীরা হলেন- পরিবহন ও বেসামরিক উপমন্ত্রী হাসান জিহান; মারিয়াম শিউনা, যুব ক্ষমতায়ন, তথ্য ও কলা উপমন্ত্রী; এবং মালশা শরীফ, যুব ক্ষমতায়ন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী। মলদীপের বিরোধী দলের নেতারাও এহেন মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন। এরপর মলদ্বীপ সরকার মন্ত্রীদের এ হেন মন্তব্যকে ‘ব্যক্তিগত মতামত, সরকারের সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই’ বলে অভিহিত করেছে।
একটি বিবৃতিতে মলদ্বীপের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, তারা ‘বিদেশি নেতা এবং উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে অবমাননাকর মন্তব্য’ সম্পর্কে সচেতন। এগুলো ব্যক্তিগত মতামত, এর সঙ্গে মলদ্বীপ সরকারের কোনও যোগ নেই। মলদ্বীপের সরকার আরও বলেছে, ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা গণতান্ত্রিক এবং দায়িত্বশীল পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা উচিত বলে আমাদের বিশ্বাস। যাতে ঘৃণা এবং নেতিবাচকতা না ছড়ায়। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে প্রভাব না পড়ে’। পাশাপাশি এমন অপমানজনক মন্তব্য করলে মলদ্বীপ সরকার ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
কেন এমন ‘ভারত বিরোধী’ মনোভাব: রাষ্ট্রপতি মহম্মদ মুইজ্জু ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কে চিড় ধরে। প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স অর্থাৎ প্রোগ্রেসিভ পার্টি অফ মলদ্বীপ এবং পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেসের জোট সরকার মূলত চিনপন্থী। সেখান থেকেই যাবতীয় বিতর্কের সুত্রপাত বলে মনে করা হচ্ছে। ৮ থেকে ১২ জানুয়ারি চিন সফরেও যাচ্ছেন মলদ্বীপের রাষ্ট্রপতি মুইজ্জু। বিরোধী দলের নেতা তথা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মহম্মদ সোলিহর সঙ্গে নয়াদিল্লির সুসম্পর্ক ছিল। তাঁর শাসনকালে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়। একটি সরকারি সূত্র নিউজ ১৮-কে জানিয়েছে, ‘মলদ্বীপে নতুন সরকার আসার পর থেকেই ভারত বিরোধী প্যাটার্ন দেখা যাচ্ছে। বর্তমান সরকার চিন ঘনিষ্ঠ। আমরা মলদ্বীপকে কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন পাঠানো থেকে সমস্ত রকম সহযোগিতা করেছি’।
কিন্তু এটা নতুন নয়। ২০২০ সালেই ‘ইন্ডিয়া আউট’ আন্দোলন শুরু হয় মলদ্বীপে। যা পরে সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে। এটা মূলত শুরু হয় সোলিহ সরকারের বিরুদ্ধে, পরে যা ভারত বিরোধিতায় পর্যবসিত হয়। নতুন সরকার অবশ্য দাবি করেছে, এই আন্দোলন আদতে মলদ্বীপের মাটিতে ভারতীয় সেনার উপস্থিতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। কিন্তু আসল ঘটনা হল, মুইজ্জু সরকারের নির্বাচনী অ্যাজেন্ডার প্রথমেই ছিল, মলদ্বীপ থেকে সেনা অপসারণের বিষয়ে ভারতের সঙ্গে কথা বলা হবে। ২০২৩-এর ডিসেম্বরে COP 28 শীর্ষ সম্মেলনে মুইজ্জু ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই বিষয়ে কথাও বলেন। ভারতীয় সেনার দুটি হেলিকপ্টার এবং একটি ডর্নিয়ার বিমান মলদ্বীপে রয়েছে।
আরও পড়ুন- শাহরুখকে খুনের হুমকি! পরিবারের ‘কাছের লোক’ চেয়েছিলেন মেরে ফেলতে, কারণ শুনলে শিউরে উঠবেন আপনিও
মলদ্বীপের সবাই কি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতের বিরুদ্ধে: মলদ্বীপের সবাই যে ভারতীয়দের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন বা মুইজ্জু সরকারের মন্ত্রীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, এমনটা নয়। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মহম্মদ নাশিদ এই ধরনের মন্তব্যকে ‘ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করেছেন। সঙ্গে মুইজ্জু সরকারকে এমন মন্তব্য থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। এক্স প্ল্যাটফর্মে তিনি লিখেছেন, ‘মলদ্বীপের সরকারি কর্তার @shiuna_m মিত্র রাষ্ট্রের নেতার প্রতি কী ভয়ানক ভাষা। এটা মলদ্বীপের নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধির বিপক্ষে। মুইজ্জু সরকারকে অবশ্যই এহেন মন্তব্য থেকে দূরে থাকতে হবে। ভারতকে আশ্বাস দিতে হবে যে এমন মন্তব্য সরকারি নীতির প্রতিফলন নয়’।
প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি আহমেদ আবিবও মোদির বিরুদ্ধে অপমানজনক এবং বর্ণবাদী মন্তব্যের নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আতিথেয়তা, সহনশীলতা, শান্তি এবং সম্প্রীতির উপর মলদ্বীপের পর্যটন শিল্প দাঁড়িয়ে রয়েছে। কৌশলগত অবস্থান এবং বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে এবং ভারত-সহ অন্যান্য দেশের বিনিয়োগের মাধ্যমে, আমরা সফলভাবে মলদ্বীপকে একটি প্রধান বিলাসবহুল রিসর্ট গন্তব্য হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছি’।
এরপর তিনি যোগ করেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং ভারতের প্রিয় নাগরিকদের বিরুদ্ধে মলদ্বীপের রাজনীতিকদের করা অপমানজনক এবং বর্ণবাদী মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই’। পাশাপাশি তিনি এ হেন মন্তব্য থেকে সরকার দূরত্ব বজায় রাখায় মলদ্বীপ সরকারের প্রশংসা করেছেন। সঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং মলদ্বীপের পর্যটন শিল্প ও অর্থনীতির দুর্বলতা বিবেচনা করে, সমস্ত জাতির সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি বন্ধুত্বপূর্ণ এবং নম্র দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এক্স প্ল্যাটফর্মে মলদ্বীপ ন্যাশনাল পার্টির তরফে লেখা হয়েছে, ‘বিদেশি নেতার বিরুদ্ধে সরকারের মন্ত্রীর এমন বর্ণবাদী এবং অবমাননাকর মন্তব্যের নিন্দা জানাই। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি’।
দেশের সব লেটেস্ট খবর ( National News in Bengali ) এবং বিদেশের সব খবর ( World News in Bengali ) পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং টপ হেডলাইন নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ ডাউনলোড করুন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
Kolkata,West Bengal
First Published :
January 08, 2024 2:34 PM IST