দেশ জুড়ে ভয়ঙ্কর ভাবে বাড়ছে ইফ্লুয়েঞ্জা A বা H3N2 ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা৷ পরিসংখ্যান বলছে, দেশে ১০-এর মধ্যে ৬ জন শিশুর মধ্যে দেখা যাচ্ছে ফ্লুয়ের লক্ষণ৷ গত দু'মাসে তা আরও ভয়ানক রূপ নিয়েছে৷
আশা, এই মাস থেকে খানিকটা কমতে পারে H3N2-এর দাপট। শুক্রবার এমনটাই জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক৷ কিন্তু বয়স্ক এবং শিশুদের নিয়ে আশঙ্কার কারণ সবচেয়ে বেশি৷
এ বিষয়ে দিল্লির হোলি ফ্যামিলি হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ড: দিনেশ রাজ জানান, ফ্লুতে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে৷ তিনি আরও জানাচ্ছেন, প্রতি ১০ জন ওপিডি রোগীর মধ্যে পাঁচ থেকে ছ'জনের ফ্লু-এর মতো লক্ষণ রয়েছে৷
মুম্বইয়ের এসআরসিসি চিলড্রেনস হাসপাতালের অ্যাসোসিয়েট কনসালটেন্ট ডাঃ নেহাল শাহের মতে সংখ্যাটা প্রায় একই৷ তিনিও জানান, ওপিডিতে তাঁর দেখা প্রতি ১০ জন রোগীর মধ্যে প্রায় ছ'থেকে সাতজন ফ্লু-এর মতো উপসর্গ নিয়ে উপস্থিত ছিলেন।
কীভাবে বুঝবেন এই ভাইরাসে আক্রান্ত কি না?
তীব্র জ্বর, মাথা ব্যথা, সারা শরীর জুড়ে অসহ্য ব্যথা সঙ্গে নাক দিয়ে জল ঝরা। এই সব কিছুই হতে পারে H3N2 এর আক্রমণের লক্ষণ৷ আসলে সাধারণ ফ্লু বা ঋতুকালীন ভাইরাল আক্রমণের সঙ্গে লক্ষণের দিক থেকে এর খুব একটা পার্থক্য নেই৷ গত দু'মাস ধরে শিশুরা এমন সব লক্ষণ নিয়েই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে৷
ডাক্তাররা জানাচ্ছেন প্রায় ১০ দিনের জন্য দেহে বাসা বাঁধছে এই ভাইরাস৷ জ্বর, কাশির সঙ্গে কখনও কখনও হালকা গ্যাসট্রিকের সমস্যাও দেখা দিচ্ছে৷
কাদের ঝুঁকি বেশি?
‘‘যে সব শিশুদের হাঁপানি, কোমরবিড অসুস্থতা ( যেমন হৃদরোগ,স্থূলতা, স্নায়বিক সমস্যা) রয়েছে তাদের ক্ষেত্রেই ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি’’, বলছেন হোলি ফ্যামিলি হাসপাতালের ড: রাজ৷ তবে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সেরে উঠছে সকলে৷ কিছু ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেশি হলে হাসপাতালে ভর্তির সম্ভাবনা দেখা দেয়৷ সে ক্ষেত্রে চার-পাঁচ দিন সাপোর্টিভ ম্যানেজমেন্টে থাকলেই সুস্থ হয়ে উঠছে রোগী৷
আরও পড়ুন: ইনফ্লুয়েঞ্জা, অ্যাডিনো ভাইরাসের দাপট বাড়ছে, সব রাজ্যকে সতর্ক করল কেন্দ্র
‘‘কোভিড ১৯ হোক, অ্যাডিনোভাইরাসই হোক বা H3N2, যে কোনও ভাইরাল সংক্রমনের ক্ষেত্রেই শিশুদের বিপদের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি হয়’’ এমনটাই মত ফরিদাবাদের অমৃতা হাসপাতালের পালমোনোলজি শিশুরোগ বিভাগের চিকিৎসক মনিন্দর সিং ঢালিওয়ালের৷ তিনি আরও জানালেন, পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু যারা হাঁপানি, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সমস্যায় আক্রান্ত, তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন৷
কেন এইভাবে ছড়িয়ে পড়ল এই ভাইরাস? স্বাথ্যবিধি না মেনেই কি এমন বিপদ ডেকে আনা হল? কী মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা?
‘‘সমস্ত স্কুল খোলা, উপরন্তু আগের মতো স্বাথ্য বিধির কোনও কিছুই মেনে চলছেন না কেউ৷ বারবার হাত ধোয়া কিংবা মাস্ক পরা, সব কিছুই ভুলেছে মানুষ’’ বললেন ম্যাক্স সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগের প্রধান ডঃ পারবিন্দর সিং নারাং৷ তিনি আরও জানালেন, অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ, যদি প্রথম দু'দিনে শুরু করা হয়, তবে তা লক্ষণগুলি কমাতে সাহায্য করতে পারে। শুধুমাত্র যে সব ক্ষেত্রে একবারে শুরুতেই এই ভাইরাস ধরা পড়েছে, সেই সব ক্ষেত্রে এই ওষুধ ব্যবহার করা যায়৷ কোমরবিটি না থাকলে সব ক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের প্রয়োজন নেই।
আরও পড়ুন: অ্যাডিনোর দোসর ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, বড় পদক্ষেপ রাজ্যের! ঘোষণা মুখ্যসচিবের
একই সঙ্গে বাবা-মায়ের সতর্ক করে তিনি বললেন, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই যেন শিশুদের ওষুধ খাওয়ানো হয়।
করণীয় কী?
অত্যন্ত সংক্রামক এই ফ্লু থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় করোনা কালের মতো সেই পুরোনো কিছু নিয়ম ফিরে যাওয়া৷ বারবার হাত ধোয়া, স্যনিটাইজার থেকে শুরু করে মাস্কের ব্যবহার। খানিকটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করলে H3N2-কে এড়িয়ে চলা সম্ভব ৷
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: H3N2 Influenza, Virus