আগরতলা: দীর্ঘ কুড়ি বছর ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে ছিলেন তিনি৷ পাঁচ বছর আগে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এবার ত্রিপুরা দখলে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন রফা করেছে বামেরা৷ যদিও ভোটে লড়ছেন না মানিক সরকার৷ যদিও ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, নিজের দল সিপিএম এবং বামেদের অন্যান্য প্রার্থীদের ভোটে জেতাতে লড়াইয়ের ময়দানে থাকবেন তিনিও৷
ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও জোট নয়, কংগ্রেসের সঙ্গে শুধুমাত্র আসন সমঝোতা হয়েছে তাদের৷ একই সঙ্গে নির্বাচনী ময়দানে তাদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রেসকেও তীব্র আক্রমণ করেছেন মানিক সরকার৷ তাঁর দাবি, বিজেপি-কে সাহায্য করতেই ত্রিপুরায় পা রেখেছে তৃণমূল৷ ত্রিপুরায় নির্বাচনের আগে নিউজ ১৮-কে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মানিক সরকার৷
ভোটে কেন লড়ছেন না?
'আমি ১৯৭৯ সাল থেকে নির্বাচনে লড়ছি৷ প্রথমে দলের মুখ্য সচেতক ছিলাম৷ তার পর ২০ বছর মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছি৷ গত পাঁচ বছর ধরে বিরোধী দলনেতা ছিলাম৷ আমার মনে হয় এবার নতুন প্রজন্মকে জায়গা ছেড়ে দেওয়া উচিত৷ তাছাড়া এ বছর আমার মনে হল, ত্রিপুরার বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আমার আরও বড় দায়িত্ব নেওয়া উচিত। দলের রাজ্য সম্পাদককেও সাহায্য করতে হবে।'
আরও পড়ুন: ৪২ আসনে বিধানসভা ভোটে ত্রিপুরায় লড়াই করতে চলেছে তিপ্রামোথা
চিরশত্রু কংগ্রেসের হাত কেন ধরতে হল?
'ত্রিপুরায় আরএসএস-এর কথা মতো সরকার চালাচ্ছে বিজেপি৷ ত্রিপুরার মানুষ এটা জানে৷ তাই এবার আমাদের প্রধান লক্ষ্য যে কোনও মূল্যে বিজেপি-কে পরাজিত করা৷ ত্রিপুরায় গণতন্ত্র আক্রান্ত৷ মানুষ নিজেদের মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না, ভোট দিতে পারে না৷ সব দেখেশুনে মনে হচ্ছে ত্রিপুরায় দেশের সংবিধান প্রযোজ্য হয় না৷ একটি দল তাদের একনায়কতন্ত্র চালাচ্ছে৷ সংখ্যালঘুরা ভয়ঙ্কর আতঙ্কে রয়েছেন৷ মহিলাদের উপরে অত্যাচার কী হারে বেড়েছে তা পুলিশের কাছে থাকা তথ্য দেখলেও প্রকৃত ছবিটা বোঝা যাবে না৷ রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থারও অবনতি হয়েছে৷ কাজ নেই, উপার্জনের পথ নেই৷ এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে আমরা ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির কাছে প্রস্তাব রেখেছিলাম৷ কংগ্রেস আমাদের সেই প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে৷'
কংগ্রেসকে আপনারা ১৩টি আসন ছেড়েছিল, তারা এখন ১৭ আসনে প্রার্থী দিয়ে দিয়েছে৷ তাহলে কি দু' পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে?
সিপিএমের পক্ষ থেকে বিষয়টি কংগ্রেসকে জানানো হয়েছে৷ এভাবে চলতে থাকলে সত্যিই সমস্যা তৈরি হবে৷ ২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন৷ আমি আশা করি, সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে৷
আরও পড়ুন: এবারের ভোটে ত্রিপুরার 'কিং'-ই হয়ে উঠতে পারেন অন্যতম 'কিং মেকার'। ব্যাপারটা কী?
বাংলায় তো কংগ্রেসের সঙ্গে আপনাদের জোট সফল হয়নি, তাহলে ত্রিপুরায় আপনারা আসন রফার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?
পশ্চিমবঙ্গের অভিজ্ঞতা থেকে শুধু আমরা নই, কংগ্রেসও শিক্ষা নিয়েছে৷ ওরাও সতর্ক হয়েছে, নিজেদের ভুলগুলো সংশোধন করছে৷ বিজেপি শুধু আমাদেরই নয়, কংগ্রেসকেও আক্রমণ করছে৷ ওরা সবাইকে পিষে দিতে চায়৷ আমাদের লক্ষ্য বিজেপি-কে হারিয়ে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা৷ আমরা জোট করিনি, আসন সমঝোতা করেছি৷
আপনারা তো তিপ্রামোথাকেও প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু কোনও সাড়া পাননি?
এটা নিয়ে চূড়ান্ত কিছু বলার সময় আসেনি৷ ওরা মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছে৷ আমার ধারণা তিপ্রামোথা তিরিশটি আসনে প্রার্থী দেবে৷ ২ ফেব্রুয়ারির পর ছবিটা পরিষ্কার হবে৷
বিজেপি তো তারকা প্রচারকদের নিয়ে আসছে৷ আপনারা কী করবেন?
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আট মাস আগে থেকে ত্রিপুরায় প্রচারে আসছেন৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সবসময় এখানে আসেন৷ ওদের রণকৌশল নিয়ে আমার কিছু বলার নেই৷
তৃণমূল কংগ্রেস নিয়ে আপনার মতামত কী? ওদের কি আপনারা আহবান জানাবেন?
তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র ধ্বংস করছে৷ ওদের মন্ত্রীরা জেলে রয়েছেন৷ ওরা দুর্নীতিতে জর্জরিত৷ আর এই অবস্থায় এখন তারা ত্রিপুরায় আসছে৷ ত্রিপুরার মানুষ বোকা নয়৷ মানুষই বলছে তৃণমূল এখানে বিজেপি-কে সাহায্য করতে এসেছে৷ বিজেপি বিরোধী ভোট ভাগ করাই ওদের উদ্দেশ্য৷
আপনার কি মনে হয় ত্রিপুরায় বামফ্রন্ট সরকার গঠন করতে পারবে? আপনাদের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে?
ত্রিপুরার মানুষ এই মুহূর্তে প্রথমে বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের থেকে মুক্তি পেতে চায়৷ নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন করাতে পারলে বিজেপি পরাজিত হবে৷ তার পর নির্বাচিত বিধায়করাই ঠিক করবেন কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন৷
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।