দৃষ্টিহীন জ্যোৎস্না-বাপির অন্ধকারময় ভালোবাসায় আলো ছড়াল বাপন

Last Updated:

কথায় আছে, ভালোবাসা নাকি অন্ধ হয়। দৃষ্টিহীন জ্যোৎস্না আর বাপির নতুন যাত্রা শুরু হল।

শিলিগুড়ি: ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, যার বাংলা অর্থ ভালোবাসা ও যুদ্ধে সব সম্ভব। আর সেটাই সত্যি করে দেখাল জ্যোৎস্না ও বাপি। ময়নাগুড়ির কনে জ্যোৎস্না দাস। তবে থাকতো শিলিগুড়ির বিধাননগরের স্নেহাশ্রম দৃষ্টিহীনদের আবাসিক স্কুলে আর বর বাপি চক্রবর্তীর বাড়ি ঝাড়খণ্ডে। মাস কয়েক আগেই দিল্লিতে ওদের আলাপ। সেই থেকে প্রেম। তারপর থেকে মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা হত। জন্মসূত্রে দুজনেই দৃষ্টিহীন, তবে তাঁরা প্রমাণ করে দিলো তাঁদের ভালোবাসা আদতেও দৃষ্টিহীন নয়। বেশ কয়েকদিন ধরেই সামাজিক মাধ্যমে এই দুই প্রেমিকের সাহায্যের আর্তি রীতিমতো ভাইরাল হয়ে পড়েছিল। এরপর শিলিগুড়ি শহর ছাড়িয়ে ইসলামপুর তথা বিভিন্ন জেলার মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন এই প্রেমিক যুগলের দিকে। আর এভাবেই বুধবার ফাঁসিদেওয়া ব্লকের বিধাননগরের ভীমবার ব্লাইন্ড স্কুলে দুটি হৃদয় এক হয়।
সাতপাকে বাঁধা পড়ল ওঁরা। অবশেষে সব বাধা কাটিয়ে দৃষ্টিহীন জ্যোৎস্না আর বাপির নতুন যাত্রা শুরু হল। যা কোনোদিন ভাবতেই পারেনি ওঁরা। আর এই বিবাহের 'পৌরোহিত্য'-এর উদ্যোগটা নেন পুলিশকর্মী ও সমাজসেবী বাপন দাস। সঙ্গে হাত মিলিয়েছে ইসলামপুর থেকে শিলিগুড়ির সহৃদয় মানুষেরা।
একজন অপরজনকে চাক্ষুষ দেখতে পারেন না। তবে ভালোবাসাটা নিখাদ ছিল। তাইতো বিভিন্ন জেলা থেকে বহু মানুষ এগিয়ে এসেছিল ওঁদের চার হাত এক করতে। হিন্দী সিনেমার ওই ডায়লগ আজ সত্যি, 'কোনও কিছু মন থেকে চাইলে পুরো পৃথিবী তোমাকে সেটা পেতে সাহায্য করবে।' তাই সকলের সম্মিলীত প্রয়াসেই বুধবার রাতে মালাবদল হল জ্যোৎস্না আর বাপির।
advertisement
advertisement
২২ বছর বয়সী জ্যোৎস্না দাস তাঁর বাবা-মাকে হারিয়ে ২০০৬ সালে মুর্শিদাবাদ থেকে বিধাননগরের ভীমবার ব্লাইন্ড স্কুলে পড়াশোনা করতে আসেন। এরপর সেখান থেকেই বেড়ে উঠতে থাকেন তিনি। বছর খানেক আগেই দিল্লিতে একটি কলেজে ভর্তির জন্য গিয়েছিলেন জ্যোৎস্না। সেখানেই রাঁচি জেলার থেকে মাশরুম চাষ নিয়ে পড়াশোনা করতে আসা বাপি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। সেই পরিচয়সূত্রেই বিনিময় হয় মোবাইল নম্বর। আর সেই নম্বর বিনিময় থেকেই শুরু হয় পরস্পরের কথাবার্তা। মনের মানুষ খুঁজে পায় তাঁর যুগলকে। এর পরেই বাপি আর দেরি না করে, সোজা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে হাজির হন বিধাননগরে। এদিকে বাপি নিজ এলাকায় সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবসা করেন। আর্থিক পরিস্থিতি খুব একটা সচ্ছল নয়। তাই তাঁরা মনস্থির করেন যে মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করবেন। কিন্তু এ খবর পৌঁছোয় ভিমবার ব্লাইন্ড স্কুলের পরিচালন কমিটির সহ-সভাপতি তথা সমাজকর্মী বাপন দাসের কাছে। তিনি জ্যোৎস্না ও বাপিকে আশ্বস্ত করেন আর পাঁচটা বাড়ির বিয়ের মতো তাঁদেরও সামাজিক ও বৈদিক মতে বিবাহ অনুষ্ঠান হবে।
advertisement
এ প্রসঙ্গে ওই স্কুল পরিচালন কমিটির সহ-সভাপতি বাপন দাস বলেন, 'দুটো হৃদয়ের মিলন হল। সাতপাকে বাঁধা পড়ল দুটি আত্মা। এর থেকে খুশির আর কি হতে পারে বলতে পারেন? ওঁরা দৃষ্টিহীন হতে পারে, কিন্তু মনের দৃষ্টি দিয়ে ওঁরা পরস্পরকে চিনতে পেরেছে। ওঁরা বুঝতে পেরেছে যে ওঁরা পরস্পরের জন্যই তৈরি। এলাহি আয়োজনে ওঁরা এক হল। ওঁরা দু'জন আজ থেকে দু'জনের জন্য।'
advertisement
পুলিশকর্মী তথা সমাজকর্মী বাপনবাবু আরও বলেন, 'ওঁদের ভালোবাসা দেখে সত্যি আজ বলতে ইচ্ছে করে মানুষ মানুষের জন্য। প্রচুর মানুষ সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ছাড়াও রাস্তায় নামতে মানুষ সাহায্যের হাত এগিয়ে দিয়েছেন। কেউ মিষ্টি, কেউ দই, কেউ মাছ-মাংস, কেউ শাড়ি পোশাক, কেউ গহনা, কেউ বা নগদ দিয়ে সাহায্য করেছেন। এই কঠিন পরিস্থিতিতে ওঁদের পাশে আমি একা নই সকলে মিলে একসঙ্গে দাঁড়িয়েছে।যাঅভাবনীয়।'
advertisement
ভাস্কর চক্রবর্তী
view comments
বাংলা খবর/ খবর/Local News/
দৃষ্টিহীন জ্যোৎস্না-বাপির অন্ধকারময় ভালোবাসায় আলো ছড়াল বাপন
Next Article
advertisement
MGNREGA: মনরেগাকে ধ্বংস করেছে মোদি সরকার! কোটি কোটি কৃষক শ্রমিকদের স্বার্থে আঘাত, কেন্দ্রের নয়া ‘কালো আইনের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক সনিয়ার
মনরেগাকে ধ্বংস করেছে মোদি সরকার! ‘কালো আইনের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক সনিয়ার
  • মনরেগা প্রকল্পের নাম বদল নিয়ে এবার মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সরব সোনিয়া গান্ধি

  • কংগ্রেসে নেত্রীর দাবি, মনরেগা প্রকল্পকে কার্যত ধ্বংস করে দিল বিজেপি

  • প্রকল্পকে বদলের আইনকে ‘কালো আইন (ব্ল্যাক ল)’ বলে উল্লেখ্য সোনিয়ার৷

VIEW MORE
advertisement
advertisement