Bengal News: ভাদ্র মাসের 'তাল রহস্য'! জেনে নিন তালের স্বাস্থ্যগুণ
- Published by:Piya Banerjee
Last Updated:
Bengal News: কথায় আছে, ভাদ্র মাসে তালের বড়া! কিন্তু জানেন কী পাকা তালের উপকারিতা?
#শিলিগুড়ি: 'বর্ষার মাস কেটে যেতেই ভাদ্র ছুটে এল৷ চারিদিকের তালগাছে সব তালগুলি পাকিল৷ পাকা তালের রসে তৈরি হরেক রকম খাবার৷ তালের রসে ভাজা বড়া লাগল দারুণ সবার৷ লোকে বলে ভাদ্র মাসে খাওয়া চাই তাল৷ নইলে পরে জুটবে নাকো অন্ন-নুনে ডাল৷' কবি সুদীপ্ত সরকারের কথায় 'তাল'-এর ব্যাখ্যা যেন সবটা বর্তায়। ঠিকই এই মরশুমি ফল শুধু সাহিত্যের তালিকায় সীমাবদ্ধ নেই, খাদ্য তালিকাতেও তালের গুরুত্ব অপরিসীম। এদিকে, ভাদ্র মাস এলেই মনে পড়ে তালের কথা। আর তালের কথা মনে হলে অজান্তেই তাল পিঠা খাওয়ার জন্য মন আকুলি বিকুলি করে ওঠে। অসাধারণ এই তাল পিঠা। বারমাসে তেরো পার্বণের উত্তরবঙ্গ সহ গোটা ভারতে সব সময়ই পাওয়া যায় বিভিন্ন ফল। ভাদ্রমাসের ফল তাল একটি সুস্বাদু ও লোভনীয় ফল। কথায় বলে, ভাদ্র মাসে তাল পাকে, পাকে তাল গরমে।' এখানে প্রথম পাকে অর্থে পাকা ধরা, আর দ্বিতীয় পাকে পাতে তোলার কথা বলা হয়েছে। আর পাকা তালের কথা বলতেই সেই মৌ মৌ গন্ধে ভরে যাওয়া চারিদিক। তবে সেইসঙ্গে পুরাকালের এই ভাদ্রমাসে তাল ফল পাতে তোলার কাহিনীও রয়েছে।
হিন্দুধর্মে বর্ণিত নবগ্রহদের রাজা হলেন শনিদেব। সেই শনিদেবের পছন্দের ফল নাকি তাল। বিভিন্ন শাস্ত্র এতে ভিন্ন মত পোষণ করে। তবে স্কন্দ পুরাণে শনি দেবতার জন্ম ভাদ্র মাসের অমাবস্যা তিথিতে বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। সেই থেকে ভাদ্র মাসের (বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী) প্রতি শনিবার (Saturday) হিন্দুধর্মাবলম্বীরা গৃহসুখ, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনায় শনিদেবতার আরাধনা করে থাকে। আর যেহেতু ভাদ্র মাসে তাল ফল পাওয়া যায় ও শনিদেবের পছন্দের ফল এই তাল তাই বেশ ঘটা করেই বিভিন্ন পাকোয়ান বানিয়ে দেবতাকে নিবেদন করে থাকেন অনেক ভক্ত। গোটা দেশের মতো ভিন্ন নয় উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি। প্রতিটি ওয়ার্ডের পাড়ায় পাড়ায় মন্দিরে এমনকি গৃহস্থেও চলে শনি আরাধনা। সঙ্গে অবশ্যই থাকছে সেই 'ভাদ্রফল' তাল।
advertisement
অন্যদিকে, তালে রয়েছে বহুবিধ গুণ। রয়েছে একাধিক ব্যবহার। একাধিক ভিটামিন (Vitamins), ভিটামিন এ, বি, সি (Vitamin A, B, C), জিংক (Zinc), পটাশিয়াম (Potassium), আয়রন (Iron), ক্যালসিয়াম (Calcium) সহ আরও অনেক খনিজ উপাদান। এর সঙ্গে আরও আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট (Antioxidant) ও অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি (Anti inflammatory) উপাদান। বিশেষজ্ঞ মতে, পাকা তালের প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যযোগ্য অংশে রয়েছে খাদ্যশক্তি ৮৭ কিলোক্যালরি (kcal), জলীয় অংশ ৭৭.৫ গ্রাম, আমিষ ০.৮ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, শর্করা ১০.৯ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩০ মিলিগ্রাম, আয়রন ১ মিলিগ্রাম, থায়ামিন ০.০৪ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন ০.০২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.৩ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি (Vitamin C) ৫ মিলিগ্রাম।
advertisement
advertisement
কথায় আছে, তালগাছ কিন্তু দীর্ঘজীবী। এই গাছ নাকি কমবেশি ১০০ বছর বাঁচে। আর এই দীর্ঘজীবনের প্রায় পুরোটা সময়ই ফল দেয়। তাল যখন কাঁচা থাকে, তখনও খাওয়া যায়, তখন বাজারে পানি-তাল, তালশাঁস হিসেবেই বিকোয়। যখন পাকে, ঘনকালো রং ধারণ করে; স্বাদও পাল্টে যায় সম্পূর্ণ। তালের নির্যাস জ্বাল দিয়ে নিয়ে ঘন করে খেতে হয়। আবার না জ্বালিয়ে তালরসও খাওয়া যায়। এই তালের রস থেকেই স্বাদের সব পিঠাপুলি তৈরি হয়।
advertisement
ভাদ্র মাসেই কি তাল খাওয়া হয়? এই কথা জিজ্ঞেস করতেই গৃহবধূ সংযুক্তা খাঁ নিউজ ১৮ লোকালকে (News 18 Local) বলেন, 'ছোট থেকেই দেখে এসেছি ভাদ্র মাস এবং জন্মাষ্টমী এলেই তালের পদ বানানোর জোড়-তোর শুরু হয়ে যায়। সারাবছর সেভাবে দেখা যায় না। জন্মাষ্টমীতে ঠাকুরের কাছে নিবেদন করা হয়। এবং সেই থেকেই চলে তালের বড়া খাওয়া। তালের ক্ষীর, তালের লুচি, তালের বড়া বাড়িতে বাড়িতে হয়। এমনকি আজকাল তালের কেকও বানানো হয়।'
advertisement
তিনি বলেন, 'ভাদ্র মাসের সঙ্গে আরেকটা যোগাযোগ আছে যেটা শনিপুজো। সরস্বতী পুজোয় যেমন নারকেল কুল, কমলালেবু এমন মরশুমি ফল লাগে। ঠিক তেমনই ভাদ্র মাসের জন্য তাল! যেহেতু এই সময় শনিপুজো এবং এই সময় তাল পাওয়া যায়, তাই আমরা নিবেদন করি।' তালের গুণের কথা জিজ্ঞেস করায় সংযুক্তাদেবীর বক্তব্য, 'তালে ভিটামিন (Vitamin) ছাড়াও রয়েছে ফাইবার (Fibre)। যা সবার ক্ষেত্রেই জরুরী। তাছাড়া, মরশুমি ফলের (Season Fruits) তো কোনও বিকল্পই নেই।'
advertisement
দিনের পর দিন বাড়ছে ভোজ্য তেলের দাম। সঙ্গে মধ্যবিত্তের কপালে চিন্তার ভাঁজও। এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সংযুক্তাদেবী হেসে বলেন, 'তালের বড়া সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু লাগে সর্ষের তেলে ভাজলে। কিন্তু দাম হু হু করে বাড়ছে। এক্ষেত্রে সাধারণের পকেটে টান পড়লেও কিন্তু একবার হলেও বড়া ভেজে খাচ্ছেন সাধারণ বাঙালি। কারণ তালের বড়া বছরে একবার খাবেনই বাঙালি। ইমোশন (Emotion) বললে ভুল হবে না। ঘি-এর দামও বেশি। কিন্তু পকেটে টান পড়লেও দুদিন বা তিনদিনের জায়গায় একদিন অল্প হলেও খাওয়া তো চলেই।'
advertisement
পাশাপাশি, এই বিষয়ে নিউজ ১৮ লোকাল (News 18 Local) উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যাপক তথা বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ কল্যাণ খাঁ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি বলেন, 'তামিল ভাষায় এই তালের গাছকে বলা হয়- 'কাঠপাহাতরু'। মানে দৈব্য গাছ। স্বাভাবিকভাবেই এটা ভারত এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার একটি দেশজ গাছ। অন্য কোথাও খুব একটা দেখা মেলে না এই গাছের। এই গাছের সমস্তকিছু আমাদের ব্যবহারযোগ্য। এর মধ্যে ক্যালশিয়াম (Calcium), ফসফরাস (Phosphorus), জিঙ্ক (Zinc) এবং অন্যান্য মিনারেল্স (Minerals) ভরপুর থাকে। প্রধানত ভিটামিন-এ (Vitamin A) থাকে এই ফলে।'
ডাক্তারবাবু আরও বলেন, 'ভাদ্র মাসে ঋতু পরিবর্তনের কারণে প্রচন্ড অস্বস্তি হয়। তখন কাজে আসে তাল এবং তাল দিয়ে বানানো নানান পদ। প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (Antioxidant) রয়েছে এই ফলে। তাই, এই ঋতুতে এই ফল সত্যিই কার্যকরী। যাদের ডায়াবেটিস (Diabetes) রয়েছে, তাঁরাও নিশ্চিন্তে এই ফল খেতে পারেন। যাদের ব্লাড সুগার রয়েছে তাঁরা সহজে সবরকম ফল খেতে পারেন না। তাই এই ফল তাঁদের পক্ষে উপযোগী।'
স্কিনের ইনফেকশন (Skin Infection) অথবা ইরিটেশনেও (Irritation) তাল খুবই উপকারী বলে জানান ডাক্তারবাবু। অতিমারির সময় তালের গুণগান গাইলেন ডাক্তারবাবু। তাঁর কথায়, 'এই ফোলে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (Antioxidant) রয়েছে যা করোনা প্রতিরোধেও কার্যকরী। তাল অ্যান্টিভাইরাল (Antiviral) হিসেবেও কাজ করতে পারে। মরশুমি ফলের কোনও বিকল্প হয় না। তাই শুধু মাস্কই নয়, সঙ্গে খেতে হবে মরশুমি ফল। যা শুধু করোনা (Corona) থেকেই নয়, অন্যান্য ইনফেকশন (Infection) থেকেও আমাদের রক্ষা করবে।'
ভাস্কর চক্রবর্তী
view commentsLocation :
First Published :
September 04, 2021 9:13 PM IST