#কলকাতা: বাবা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন৷ অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর গর্ভে বারবার হাত রেখে বোঝার চেষ্টা করতেন সন্তানের লাথি! কিন্তু ৬ মাসের গর্ভবতী স্ত্রীর মৃত্যু সব আশা ভেঙে চূরমার করে দেয় অভিষেকের৷ বাবা হওয়ার সাধ তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াত কিন্তু স্ত্রীর মৃত্যুর পর সেই জায়গায় কাউকে বসাতে পারেনি তিনি৷ কাউকে আর ভালবেসে উঠতে পারেননি৷ কিন্তু অনুভব করেছেন সন্তানের টান৷ কোনও একটা ছোট হাত, নিজের হাতে রাখতে চেয়েছেন, বুকের ওপর মাথা রেখে ঘুম পাড়াতে চেয়েছেন একটা ছোট্ট প্রাণ! কিন্তু কীভাবে? সেই আশাপূরণের স্বপ্ন দেখেছেন অনেক পরে৷ ২০১৯শে৷ এবং তা বাস্তবায়িত করতে বিন্দুমাত্র দেরি করেননি অভিষেক৷
একা মা যদি সন্তান মানুষ করতে পারেন, তাহলে তিনি কেন একা সন্তান সামলাতে পারবেন না? তিনি কেন হতে পারবেন না সিঙ্গল ফাদার! সেই চিন্তা থেকে সন্তানের জন্ম দিতে চেয়েছেন অভিষেক৷ বিয়ের বাঁধায় না পড়েই৷ 'আমি আসলে চেয়েছিলাম নিজের সন্তান৷ স্ত্রীর পেটে থাকা সন্তানের লাথির অনুভুতিটা আজও মনে আছে৷ যদিও দত্তকের দিকেও মন ছিল৷ যেটা আগে হবে, সেটাই আকড়ে ধরব, ভেবেছিলাম'৷ বলছেন দুই সন্তানের বাবা৷ কারা (দত্তক নেওয়ার এজেন্সি)-র নাম লিখিয়েছিলেন৷ কিন্তু সেখানে তালিকায় তাঁর নাম ছিল অনেক নিচের দিকে৷ তাই সন্তান পাওয়ার ক্ষেত্রেও দেরি হত অনেকটা৷ তার আগে অবশ্য এই সুযোগটা চলে এল৷ বাড়িতে সকলের মত নিয়ে আইভিএফ স্যারোগেসির (IVF Sarrogacy) পথে হাঁটেন অভিষেক৷
মা, বোন, ভগ্নিপতি ও এক বন্ধু খুব সাহায্য করেছিলেন৷ দিল্লিতে এই গোটা প্রক্রিয়ার জন্য তাঁর বন্ধু ভীষণ সাহায্য করেন৷ দিল্লিতেই জন্ম নেয় অভিষেকের দুই সন্তান অধ্যয়ন-আবাহন৷ 'ভেবেছিলাম এক সন্তানের বাবা হব৷ কিন্তু ঈশ্বরের কৃপায় আমার যমজ ছেলে হয়েছে৷ কিন্তু ছেলেদের জন্ম হয় ২ এপ্রিল৷ তখন দেশে শুরু হয়ে গিয়েছে লকডাউন৷ সদ্যোজাতদের দেখতে প্রাণ ছটফট করছিল৷ তবে উপায় ছিল না৷ শুধু ডাক্তাদের অনুরোধ করতাম ছেলেদের ভিডিও পাঠাতে৷ তাঁরাও তো ব্যস্ত৷ তবু তার মধ্যেই ওঁরা আমাকে নিয়মিত ভিডিও পাঠিয়েছেন৷ ওঁদের খুব বিরক্ত করেছি, কিন্তু আমার কাছে আর কোনও উপায় ছিল না৷ ছেলেদের দেখতে মন উতলা হয়ে উঠত'৷ অভিষেকের গলায় যেন ধরা পড়ল উত্তেজনা৷
তবে ছেলেদের সঙ্গে সাক্ষাতে পোহাতে হয়েছে আরও সমস্যা৷ বারবার টিকিটে কেটেও বাতিল হয়েছে৷ করোনার জন্য লকডাউনের সঙ্গেই জুড়েছিল আমফানের দুর্বিসহ স্মৃতি৷ তবে সে সব কিছু কাটিয়ে ছেলেদের কাছে পৌঁছলেন অভিষেক৷ তাদের বুকে তুলে নেওয়ার স্মৃতি ভোলার নয়৷ চোখের জলও সেই সময় বাঁধ মানছিল না৷ অবশেষ সকলের বাড়ি ফেরা৷ এখন প্রায় অনেকগুলি দিন কেটেছে৷ ধীরেধীরে অভ্যস্থ হচ্ছেন দুই সন্তানের বাবা৷ 'আসলে বোন আমার থেকে ১০ বছরের ছোট৷ তাই ওকে সামলানোর অভ্যস ছিল৷ আর বলুন মেয়েরা যদি পারে, তাহলে আমরাই বা পারব না কেন? গর্ভে সন্তান জন্ম দেওয়া আর ব্রেস্ট ফিড করানো ছাড়া পুরোটাই তো এক৷ এখন ছেলেদের জন্য নিজেকে অনেক পাল্টাতে হচ্ছে৷ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরি৷ ওদের জন্য রাতে ১০টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ছি৷ তবে আমার যমজ সন্তান তো৷ একজন রাতে আলো নেভালে কেঁদে ওঠে তো অন্যজন ঘুমোয়ে৷ তাই মা থাকেন৷ একজনকে আমি সামলাই তো অন্যজনকে মা৷ লকডাউনে বাড়িতে দিদা রয়েছে৷ বাজার থেকে বাড়ির কাজ সব আমি করছি৷ সঙ্গে ছেলেদের দেখভাল৷ আপাতত ব্যবসার কাজ কাকা সামলাচ্ছেন'৷ একসুরে নিজের রুটিন বললেন অভিষেক৷ ফোন করার জন্যও তিনি সময় বেছে দিয়েছিলন৷ কারণ এখন ছেলেদের সময় মেপে তাঁকে সব কাজ করতে হচ্ছে যে৷
আচ্ছা কাছের মানুষরা তো জানতেন সন্তান জন্মের কথা, কিন্তু আত্মীরা কী প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন? 'তাঁরা প্রথমে বুঝতে পারেননি ব্যাপারটা৷ ভেবেছিলেন বিয়ে ছাড়া নিজের সন্তান কীভাবে সম্ভব! দেখুন, বলিউডে করণ জোহর, তুষার কাপুরের এভাবে সন্তান হয়েছে৷ কিন্তু মধ্যবিত্ত বাড়িতে এটা ভাবা একটু মুশকিল ঠিকই৷ অন্য যোশদা বলে একটি ধারাবাহিক হত৷ সেখানে এমন ছিল গল্পটা৷ মা সেই সিরিয়ালের কথা বলে বোঝাতেন সকলকে '৷ বলেই হাসলেন অভিষেক৷
বাবার তো এখন অনেক দায়িত্ব৷ সামনে অনেকটা পথ বাকি৷ কোনও পরিকল্পনা রয়েছে সন্তানদের নিয়ে? 'দেখুন ধাপে ধাপে ভাবতে চাই৷ একসময় অনেক কিছু প্ল্যান করেছিলাম৷ তাতে ভগবান জল ঢেলে দিয়েছিলেন৷ তাই বহুদূরের পরিকল্পনা করি না৷ কিন্তু সন্তানদের ভালভাবে মানুষ করতে চাই৷ আর চাই ওদের ভাল হোক '৷ ফাদার্স ডে-তে সত্যিই শহরের বুকে এই সিঙ্গল ফাদারের স্বপ্নপূরণ হয়, চাই আমরাও৷
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Fathers Day 2020