#মুম্বই: ১৯৮৫ সালের সুপারহিট ছবি 'সাগর' নানা করাণে খবরের শিরোনামে ছিল। প্রথমত, 'শক্তি', 'শান' আর 'শোনে'-র পর সেটি ছিল রমেশ সিপ্পির প্রথম রোম্যান্টিক ছবি পরিচালনা। দ্বিতীয়ত এটি ছিল ডিম্পল কাপাডিয়ার কামব্যাক ফিল্ম , তাও আবার 'ববি'-র সহকর্মী ঋষি কাপুরের বিপরীতে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি যে কারণে 'সাগর' নিয়ে চর্চা হয়েছিল, তা হল ছবির একটা দৃশ্যে ডিম্পল কাপাডিয়ার একটি অ্যাডাল্ট দৃশ্য!
আরও পড়ুন: চরম শৈত্যপ্রবাহে সুস্থ থাকবেন কী করে, রইল টিপস
কী দেখা গিয়েছিল পর্দায়? প্রথমবারের জন্য রবি উরফে ঋষি কাপুর মোনা (ডিম্পল কাপাডিয়া)-কে দেখছে। সমুদ্র থেকে স্নান সেরে উঠে আসছেন ডিম্পল। মোনার শরীরে পেঁচানো একটি তোয়ালে! আচমকাই এক সেকেন্ডের জন্য ডিম্পলের গা থেকে তোয়ালেটা খসে পড়ে! সেই সময় ফিল্ম ইউনিটের তরফে বলা হয়েছিল, 'এটি একটি অ্যাক্সিডেন্ট, আমরা বুঝতে পারিনি ক্যামেরা চলছে।' কিন্তু কেউ এই প্রশ্নটা করেনি, কী করে দৃশ্যটা ছবিতে থেকে গেল, এডিটিং-এর সময় কেন বাদ দেওয়া হল না? খোদ ডিম্পল কাপাডিয়ার-ও মেলেনি সদুত্তর!
আরও পড়ুন: এবার ছুরির আঘাত থেকে প্রাণ বাঁচাবে এই টি-শার্ট ! যত ধারালোই হোক, হবে না কিছুই
অভিনেতা কমল হাসন এক বার দক্ষিণী অভিনত্রী রেখাকে তাঁর অনুমতি ছাড়াই চুমু করেছিলেন শট চলাকালীন। অভিনেত্রীর অভিযোগ ছিল, স্ক্রিপ্টে নাকি চুম্বনের দৃশ্য ছিল না, যদি থাকত তিনি রাজি--ই হতেন না ছবিটি করতে! এই তালিকা থেকে বাদ পড়েননি ওই দক্ষিণী অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন, স্ক্রিপ্টে ওই দৃশ্যের কথা বলা হলে তিনি রাজি হতেন না। রঞ্জিত ও মাধুরী দীক্ষিত অভিনীত ‘প্রেম প্রতিজ্ঞা' সিনেমাতেও ঘটেছিল বিপত্তি! ছবিতে ধর্ষণের একটি দৃশ্য ছিল। খলনায়কের ভূমিকায় ছিলেন রঞ্জিত৷ একটি দৃশ্যে তিনি সত্যিকারের মাধুরীর ওপর জোর করার চেষ্টা করেন ৷ পরে অবশ্য অভিনেতা ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন মাধুরীর কাছে। এমন ঘটনা বহু ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সিনেমার ইতিহাসে! বাদ নেই হলিউডি ছবিও। অভিনেত্রী শ্যারন স্টোন জানিয়েছিলেন, ‘বেসিক ইনস্টিংট’ ছবিতে বিখ্যাত জেরার দৃশ্যে এক ঘর অভিনেতার সামনে তাঁকে নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাস খুলতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাঁকে বলা হয়েছিল পর্দায় তাঁর গোপনাঙ্গ দেখা যাবে না। শ্যারন আপত্তি জানিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর আপত্তি ধোপে টেকেনি, কারণ তিনি চুক্তিতে সই করেছিলেন ।
ছবিতে কতখানি যৌনতা দেখানো হবে? আদৌ তা প্রয়োজন কিনা? তা আগে থেকে জানা যাবে কী করে? যদি শর্ত ভাঙা হয়, সে ক্ষেত্রে কীভাবে আইনি পদক্ষেপ করা হবে? ঘনিষ্ঠ দৃশ্য দেখানো হলেও কীভাবে দেখানো হবে? অন্তরঙ্গ দৃশ্যে আদৌ নায়ক-নায়িকা স্বচ্ছন্দ কি না ? যদি না হন, তাহলে কী হবে? স্ক্রিপ্টের প্রয়োজনে ঘনিষ্ঠদৃশ্যে কোনও বদল হবে কি না? যদি অনিচ্ছা সত্বেও কোনও অভিনেতার অন্তরঙ্গ দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি হয়, তবে তিনি কী করবেন? এমন নানাবিধ প্রশ্ন থাকে ছবিতে দেখানো ঘনিষ্ঠ দৃশ্য ঘিরে! আর এই সবেরই সমাধান রয়েছে আস্থা খান্না-র কাছে। তিনি দেশের প্রথম ঘনিষ্ঠ দৃশ্য সমন্বয়কারী বা intimacy coordinator! অর্থাৎ, ঘনিষ্ঠ দৃশ্য কীভাবে শ্যুট করতে হবে, তাই শেখান অভিনেতাদের। তাঁর কাজ অন্তরঙ্গ কোনও দৃশ্যে অভিনয়ের সময় অভিনেতারা যাতে অস্বস্তিবোধ না করেন, তা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি, যাঁরা অভিনয় করছেন, তাঁদের অধিকার ভঙ্গ হচ্ছে কি না, বা তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করতে হচ্ছে কি না, সেই বিষয়গুলি দেখা।
ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ছবিতে এই কাজ করে ফেলেছেন আস্থা। সেটে পৌঁছে যান ঢাউশ একটা ব্যাগ নিয়ে, তার মধ্যে থাকে তাঁর বিশেষ ব্যাগে থাকে রাবারের কৃত্রিম পুরুষাঙ্গ যা ব্যবহার করা হয় মহিলার শরীরে উত্তেজনার অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলতে, থাকে পুরুষের উত্তেজনার মুহূর্তকে আড়াল করার জন্য অ্যাথলেটিক গার্ড, নগ্ন দৃশ্যে যাতে অভিনেতা অভিনেত্রীদের সম্পূর্ণ নগ্ন না হতে হয় তার জন্য বিশেষ পোশাক, মিন্ট ট্যাবলেট, দাঁতের ব্রাশ, ডিওডোরেন্ট স্প্রে, নেল কাটার, মাউথ ওয়াশ।
২৬ বছরের আস্থা নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন আস্থা। সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করছিলেন। একটি ছবিতে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে কীভাবে শট নেওয়া হবে, সেই নিয়েই রিসার্চ করছিলেন, তখনই তিনি বুঝতে পারেন অনেক সমস্যা রয়েছে! বিষয়টি অত সহজ মোটেই নয়! তাআরপরেই মাথায় আসে বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা করার। Intimacy Professionals Association (IPA)-এ ২০ সপ্তাহের একটি কোর্স করেন তিনি।
একটি ছবির সহ পরিচালকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয়ের এই সমস্যার বিষয়টি নজরে পরে আস্থার। তিনি দেখেন বিদেশে এই ধরনের দৃশ্যায়নের জন্য আলাদা পেশাদার থাকলেও ভারতে এমন কোনও পেশাদারের পরামর্শ নেওয়ার প্রচলন নেই। তিনি দায়িত্ব নেন। নিজের চেষ্টাতেই তৈরি করেন ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের বিশেষ নির্দেশিকা।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Aastha Khanna