Satyajit Ray's Birth Anniversary: পূর্ণিমা রাতে পক্ষীরাজের পিঠে বসে ব্রাউনি, বৃহচ্চ‍ঞ্চু আর গোলাপিবাবুর সঙ্গে আমরা পাড়ি দিই অন্তহীন ভালবাসার পথে

Last Updated:

Satyajit Ray's Birth Anniversary : ভালবাসতে জানলে তথাকথিত অকুলীন জীবের সঙ্গেও গড়ে উঠতে পারে হৃদয়ের সখ্য৷ এ ছবি কলমে এঁকেছেন সত্যজিৎ রায় বার বার৷ লিখছেন অর্পিতা রায়চৌধুরী

পোষ্য মানেই বিলিতি কুকুর, পশমি বিড়াল, দামি পাখি বা অ্যাকোয়ারিয়ামের রঙিন মাছ নয়৷ ভালবাসতে জানলে তথাকথিত অকুলীন জীবের সঙ্গেও গড়ে উঠতে পারে হৃদয়ের সখ্য৷ এ ছবি বার বার কলমে এঁকেছেন সত্যজিৎ রায়৷ তাঁর লেখা ছকভাঙা৷ এবং তাঁর লেখার বার্তাও গতানুগতিকতার সঙ্গে মেলে না৷ নইলে দণ্ডকারণ্যে কুড়িয়ে পাওয়া প্রাগৈতিহাসিক যুগের বীভৎসরূপী পাখি কী করে সদাগরি আপিসের আটপৌরে কেরানি তুলসিবাবুর মনে এতটা জায়গা করে নিতে পারে! বৃহচ্চঞ্চু, তাঁর আদরের চঞ্চুকে তিনি বাড়িতে রাখতে পারেননি৷ কারণ জুরাসিক পার্ক তৈরি করার সামর্থ নেই এই মধ্যবিত্ত বাঙালির৷ তাই মায়া আর না বাড়িয়ে বৃহচ্চঞ্চুকে রেখে এসেছিলেন জগদলপুরে প্রাচীন দণ্ডকারণ্যে৷ কিন্তু মনের টান কি আর সহজে যায়! চঞ্চু নিজের নিধনযজ্ঞের ঠেলায় শিরোনামে আসতেই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে তার প্রাক্তন পালক তুলসিবাবু ফের ছুটেছিলেন গহিন অরণ্যে৷ গাছড়া চক্রপর্ণের রস খাইয়ে ৩০ লক্ষ বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া অ্যান্ডর গ্যালরনিস প্রজাতির রাক্ষুসে পাখি চঞ্চুকে বরাবরের মতো নিরামিষাশী করতে৷
advertisement
তুলসিবাবুর মতো সখাহীন হতে হয়নি অসমঞ্জবাবুকে৷ তাঁর ভুটিয়া কুকুর ব্রাউনিকে পালন করা বিশেষ খরচসাপেক্ষ ছিল না৷ হাসিখুশি ব্রাউনির মতো স্বল্পে সন্তুষ্ট ছিলেন তার মালিকও৷ তাই ধনকুবের আমেরিকান সাহেবের কাছে ব্রাউনির হাসি বিক্রি করার লোভনীয় প্রস্তাব তিনি হেলায় উড়িয়ে দিতে পারেন৷ তাঁর নিঃসঙ্গ নিস্তরঙ্গ জীবনে পোষা কুকুরছানার অলৌকিক হাসি বিলাসিতার অবলম্বন নয়৷ বরং দিনের শেষে বাড়িতে ফিরে প্রিয়জনের সান্নিধ্য৷ প্রিয়জনকে কাছে পাওয়ার এই আকাঙ্ক্ষা থেকে যায় মৃত্যুর পরও৷ তাই ব্যাঙ্গালোরে সাহেব স্কুলমাস্টারের পরিত্যক্ত বাংলোয় আজও ফিরে আসে অশরীরী সাইমন৷ ফায়ারপ্লেসের পাশে তার প্রিয় কেদারায় কুণ্ডলী পাকিয়ে বসতে৷ পরপার থেকে ফিরে আসেন ব্রাউন সাহেবও৷ আজও তাদের খুনসুটি জমে ওঠে৷ ঠিক যেমন জমে উঠত উনিশ শতকের ঔপনেবেশিক সন্ধ্যাগুলোয়৷ মালিক এবং পোষ্য বিড়াল-দুজনেরই বয়স থমকে আছে একই জায়গায়৷ ব্রাউন সাহেবের বাড়ির নামের মতো তারাও ‘এভারগ্রিন’৷
advertisement
ব্রিটিশ সাহেবদের পোষ্যপ্রেমের সুতোয় বাঁধা পড়ে ব্যাঙ্গালোর থেকে বীরভূম৷ সেখানে আবার ব্রিটিশ আমলের নীলকুঠি থেকে হওয়া ডাকবাংলোয় ফিরে আসেন এক অত্যাচারী নীলকর সাহেব৷ উনিশ শতকে দোর্দণ্ডপ্রতাপ ওই সাহেবের নির্যাতনে নাভিশ্বাস উঠেছিল গ্রামবাসীদের৷ এদিকে তীব্র আন্দোলনে ক্রমশ কোণঠাসা হচ্ছিল নীলচাষ৷ সেইসঙ্গে ম্যালেরিয়ার সাঁড়াশি আক্রমণ। পূর্বাভাস বুঝতে পেরে নীলকর সাহেব আত্মঘাতী হন৷ গ্রামবাসীদের হাতে পর্যুদস্ত হতে হবে-এটা তিনি মেনে নিতে পারেননি৷ নিজেকে শেষ করার আগে সেরেছিলেন আরও একটা দরকারি কাজ৷ গুলি করে চিরতরে ঘুম পাড়িয়ে দেন পোষা কুকুর রেক্স-কে৷ কারণ তিনি জানতেন তাঁর অবর্তমানে এই বিলিতি হাউন্ডকেও বাঁচতে দেবে না গ্রামবাসীদের রোষ৷ গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত অবাক চোখে সাহেবের দিকে তাকিয়ে ছিল প্রভুভক্ত রেক্স৷ নির্মম অত্যাচারকারী নীলকর সাহেবও কী পরম স্নেহে ভাবতে পারেন প্রবাসে তাঁর একমাত্র সঙ্গী পোষা চতুষ্পদের কথা৷
advertisement
খাঁটি ব্রিটিশ সাহেব হোক বা রাজস্থানের ভরতপুরের সাধুবাবা ইমলিবাবা-পোষা প্রাণীর সঙ্গে তার পালকের ভালবাসা মাপার কোনও নির্দিষ্ট একক নেই৷ যে তীব্রতায় তিনি বিষধর কালকেউটেকে পোষ মানিয়ে ‘বালকিষণ’ নাম দেন, ঠিক সেই গাঢ় প্রতিহিংসাতেই পোষ্যের হত্যাকারীকে চরম শাস্তি দেন৷ তাঁর শাপে শেষ পর্যন্ত সাপে রূপান্তরিত হন ধূর্জটিবাবু৷ অন্ধবিশ্বাস নয়, স্রষ্টার মুনসিয়ানায় এখানে মন ছুঁয়ে যায় সাপের মতো ভয়ঙ্কর সরীসৃপের প্রতি মানবিকতাই৷ সাপ যে দর্শনমাত্রই নিধনযোগ্য নয়, বরং তারও যে কাঠপিঁপড়ের কামড়ে যন্ত্রণা হয়, সেকথাই শিখিয়ে যান ‘খগম’-এর ইমলিবাবা৷
advertisement
কিন্তু পিঁপড়েও কি শুধুই দংশনে জ্বালা ধরায়? সে নিজেও তো যন্ত্রণায় পিষ্ট হয় অনবরত৷ যখন মানুষ নির্দ্বিধায় তাদের মারিয়ে চলে যায়৷ কিংবা খেলার ছলে ভেঙে তাদের বাসা৷ সে কথাটাই অন্য কাউকে বোঝাতে পারে না সদানন্দ৷ তার খুদে জগতের বাসিন্দা হল পিঁপড়ের দল৷ তাদের যন্ত্রণাবিদ্ধ চিৎকারে রক্তাক্ত হয় সদানন্দর অপাপবিদ্ধ কিশোর মন৷ সদানন্দর মতো সমস্যা সুজনেরও৷ সদানন্দ পিঁপড়ের কথাবার্তা, হাসিকান্না শুনতে পায়৷ আর সুজন পাখি-সহ সবরকম পশুর ডাক ডাকতে পারে৷ সে হরবোলা৷ লেখাপড়ায় তার মন নেই৷ পাঠশালায় গিয়ে শেখে পাশের পুকুরে চড়তে আসা হাঁসের দলের ডাক৷ বইয়ের পড়ায় ব্যর্থ হলেও প্রকৃতিপাঠের আসরে তার মতো ভাল ছাত্র আর একজনও নেই৷
advertisement
সুজন তো হরবোলা হয়েই বিদূষী রাজকন্যার বরমাল্যবিজয়ী হতে পেরেছিল৷ কারান্ডিকার কিন্তু কোনও রাজকন্যার পাণিপ্রার্থী হননি৷ তিনি তাঁর বাধ্য ছাত্র সুলতানের মতোই একা৷ সুজনের মতোই অল্প বয়সে ঘর ছেড়েছিলেন তিনিও৷ কর্নেল সুরেশ বিশ্বাসকে আদর্শ করে জীবনের পথে ট্র্যাপিজ খেলতে খেলতে বাঘ প্রশিক্ষক হিসেবে থিতু হন গ্রেট ম্যাজেস্টিক সার্কাসে৷ সার্কাসের রিং-এ রয়্যাল বেঙ্গল বাঘ সুলতানের হাঁ মুখে অবলীলায় ঢুকিয়ে দেন নিজের মাথা৷ সেইসঙ্গে জলাঞ্জলি দেন নামী আইনজীবী মহেশ চৌধুরীর ছেলে বীরেন্দ্র চৌধুরীর পরিচয়ও৷ রিং মাস্টার কারান্ডিকারের কাছে বহুমূল্য স্ট্যাম্প অ্যালবামের থেকেও দামি হল সন্তানসম সুলতানের প্রাণরক্ষা৷
advertisement
সেই সার্কাসও নেই৷ সেই পশুপ্রাণীর খেলাও সেখানে নেই৷ তবে আজও বহাল তবিয়তে আছে পাখি পোষার শখ৷ তাই খুদে অনিরুদ্ধকে খাঁচাবন্দি চন্দনা কিনে দেন তার বাবা৷ কিন্তু সার্কাসের বাঘ সুলতানের মতো সেই চন্দনাও একদিন খোয়া গেল৷ বলা ভাল, তাকে চুরি করা হয়েছিল৷ সেই চন্দনা উধাওকে ক্লু করেই ফেলুদা উদ্ধার করে খোয়া যাওয়া দুষ্প্রাপ্য নেপোলিয়নের চিঠি৷ পাওয়া যায় ‘সাধু সাবধান’ বলা চন্দনা পাখিকেও৷ কিন্তু এ চন্দনার মতো ভাল কপাল ছিল না ঘুরঘুটিয়ার টিয়ার৷ শুধু তো ‘সাধু সাবধান’-এর মতো সহজ শব্দবন্ধ নয়৷ সে মনে রেখেছিল ‘ত্রিনয়ন ত্রিনয়ন একটু জিরোও’-এর মতো কঠিন পাসওয়ার্ড৷ এই বুলিই যেন কাল হল৷ টিয়ার মালিক কালীকিঙ্কর মজুমদারকে খুন হতে হল৷ গল্পের শেষে ফেলুদা যখন নকল কালীকিঙ্করের কাছ থেকে নেওয়া দামি ও দুষ্প্রাপ্য গোয়েন্দা বই ফেরত দিয়ে আসছে, তখনও বেচারি পাখি ফাঁকা বাড়িতে দাঁড়ে বসে সেই ত্রিনয়নকে একটু জিরোতে বলছে৷
advertisement
এভাবেই পালকের অবর্তমানে পোষ্য এবং পোষ্যর অনুপস্থিতিতে তার মালিক অসহায় হয়ে পড়ে৷ এই ভাবনা থেকেই পোষা বিড়াল নিউটনকে নিজের সঙ্গে ব্যোমযাত্রী করে নিয়েছিলেন প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু৷ শেষ অভিযানে মহাশূন্যের পথে হারিয়ে যাওয়ার সময়ও তিনি নিজেকে প্রাণপ্রিয় নিউটনের থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেননি৷ কারণ তর্কে বহুদূর হলেও মনের এই বন্ধন ছাপিয়ে যায় জন্মান্তরের পরাবাস্তব সীমানাকেও৷ তাই রাজস্থানি মণিকারের ছেলে সাড়ে সাতশো বছর পর কলকাতার ছাপোষা বইবিক্রেতার ছেলে হয়েও বুঝতে পারে নিরপরাধ ময়ূরের দিকে পিস্তল তাক করা ডক্টর হাজরা আসলে ‘দুষ্টু লোক’৷ তখনই বিশ্বাস ভঙ্গ হয় তার৷ আর সুকুমারপুত্রের কলমে আমাদের বিশ্বাস তৈরি হয়৷ যে, নিশ্চয়ই প্রতি পূর্ণিমার রাতে বিষ্ণুরাম দাসের সাদা ঘোড়া রূপান্তরিত হয় রূপকথার পক্ষীরাজ ঘোড়ায়৷ তার পিঠে চেপেই গোলাপিবাবুর সঙ্গে আমরা পাড়ি দিই অন্তহীন ভালবাসার পথে৷
( সব ছবি : সত্যজিৎ রায়ের আঁকা প্রকাশিত বিভিন্ন স্কেচ থেকে সংগৃহীত)
বাংলা খবর/ খবর/লাইফস্টাইল/
Satyajit Ray's Birth Anniversary: পূর্ণিমা রাতে পক্ষীরাজের পিঠে বসে ব্রাউনি, বৃহচ্চ‍ঞ্চু আর গোলাপিবাবুর সঙ্গে আমরা পাড়ি দিই অন্তহীন ভালবাসার পথে
Next Article
advertisement
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! তারপরেই, এই এলাকার পুজোর থিম দেখলে অবাক হবেন!
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! অন্যরকম থিম এই এলাকায়
VIEW MORE
advertisement
advertisement