#নয়াদিল্লি: আইসোলেশন (Isolation)। কোয়ারেন্টাইন (Qurantine)। গত দু' বছর ধরে করোনা-কাঁটা থেকে বাঁচতে সতর্কতার অঙ্গ হিসেবে এই দু'টি শব্দ শোনা যাচ্ছে। করোনা আবহ শুরু হওয়ার পর থেকেই আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টাইন আমাদের কাছে খুব পরিচিত শব্দ হয়ে উঠেছে৷ কার্যত আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে সুস্থ ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের (Coronavirus) সংক্রমণ রোধ করতে আইসোলেশন (Isolation) এবং কোয়ারেন্টাইনিং (Qurantine) হল দু'টি গুরুত্বপূর্ণ কোভিড নিয়ম।
মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকেই, কোভিড-১৯ ভাইরাসে (Covid 19) পজিটিভ হলেই সংক্রমিত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে কারও শরীরে করোনার লক্ষণ প্রকাশ পেলে, সোয়াব টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ হলে অর্থাৎ করোনা ধরা পড়লে আইসোলেশনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে ১৪ দিনের জন্য সংক্রামিত ব্যক্তিকে কারও সংস্পর্শে না আসার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। আবার কোনও ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত দেশ থেকে ঘুরে এলে বা সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে তার শরীরেও কোভিড-১৯ বাসা বেঁধেছে কি না বুঝতে তাকে কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হয়। এখানেও কমপক্ষে ১৪ দিনের সময়সীমায় কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (US) সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) আমেরিকাবাসীদের জন্য আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টাইনের এই সময়ের মেয়াদ অর্ধেক করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন - Explained: Egg Freezing: ৩০-৪০ বছরে এগ ফ্রিজিংয়ের প্ল্যান? পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
সিডিসি-র নতুন নিয়ম
এর আগে আমেরিকার স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ আক্রান্ত ব্যক্তির আইসোলেশন (Isolation) এবং কোয়ারেনটাইনের (Qurantine) সময় ১৪ থেকে ১০ দিনে কমিয়ে দিয়েছিল এবং এখন এটি আরও কমিয়ে ৫ দিনে আনা হয়েছে৷ সিডিসি তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে জানিয়েছে যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৫ দিন আলাদা থাকা উচিত এবং যদি উপসর্গ না থাকে বা উপসর্গগুলি ঠিক হয়ে যায় এবং জ্বর না থাকে তাহলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে মাস্ক পড়ে পরবর্তী পাঁচ দিন অন্যদের কাছাকাছি যেতে পারে তারা। আবার যাদের টিকা দেওয়া হয়নি বা দ্বিতীয় ডোজের পর ছয় মাস হয়ে গিয়েছে তাদের ৫ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে এবং তার পরে অতিরিক্ত ৫ দিনের জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
আরও পড়ুন - Ban vs NZ: কিউয়িদের দেশেই কিউয়ি বধ বাংলাদেশি বাঘদের, এবাদতের আগুনে বোলিংয়ে বাজিমাত
কেন পরিবর্তন করা হয়েছে নিয়ম
সিডিসি বিবৃতিতে জানিয়েছে যে প্রাথমিক পর্যায়ে সার্স-কোভ-২ (SARS-CoV-2) বেশি সংক্রমিত হওয়ার ফলাফলের ভিত্তিতে আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টাইনের সময় কমানো হয়েছে। দেখা গিয়েছে, একজন সংক্রামিত ব্যক্তির সংক্রমণের প্রথম ২-৩ দিনের মধ্যে ভাইরাসটি অন্য কারও শরীরে যেতে পারে৷ তাই এই সময়ে আলাদা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্দিষ্ট ওই সময়ের পরে, তাদের অন্যদের সংক্রামিত করার সম্ভাবনা কম থাকে এবং তাদের আইসোলেট এবং কোয়ারেন্টাইনে থাকার প্রয়োজন হয় না। তবে এই অবশ্যই সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে মাস্ক পরা জরুরি।
ভারতও কি একই নিয়ম মানবে
কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভয়াবহতা থেকে সবে সামলে উঠেছে দেশবাসী। আর সেই আতঙ্কের মধ্যেই দরজায় কড়া নাড়ছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। ভারতে ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ নভেম্বর ওমিক্রন সংক্রমণ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে প্রথম একটি রিপোর্ট পেশ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২৬ নভেম্বর ওমিক্রনকে করোনার নতুন ভ্যারিয়ান্ট হিসেবে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। এর পরই ওমিক্রন ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্ব জুড়ে। একাধিক জায়গা থেকে আসতে শুরু করে ওমিক্রন আক্রান্তের হদিশ। ইতিমধ্যে সংখ্যার নিরিখে ভারতে ওমিক্রন আক্রান্ত পার করেছে ২০০-এর গণ্ডি। সমগ্র দেশের জন্য যথেষ্ট চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। সব চেয়ে তাৎপর্য্যপূর্ণ বিষয় হল, প্রাথমিকভাবে ওমিক্রনকে 'মৃদু' বলে মনে হলেও অল্প সময়ের মধ্যে বেশ বিপর্যয় তৈরি করায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বিশেষজ্ঞদের কপালে। সেক্ষেত্রে বর্তমানে দেশে ক্রমবর্ধমান কোভিড-১৯-এ আক্রান্তের সংখ্যা এবং ওমিক্রন ভ্যারিয়ান্টের দীর্ঘস্থায়ী হুমকির দিকে নজরে রাখলে ভারতে আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টাইনের সময় কমানো নিরাপদ না-ও হতে পারে। সেক্ষেত্রে আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টাইনের সময় কমালে ক্ষতির সম্ভাবনা বাড়তে পারে। পাশাপাশি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের পরিস্থিতির মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে৷ আমাদের দেশে এখনও ১৮ বছরের কম বয়সীদের টিকা দেওয়া হয়নি এবং প্রাপ্তবয়স্কদের বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়নি। তাই এই অবস্থায় অতিমারীর নিয়মগুলি লাঘব করলে সমস্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কতদিন ইমিউনিটি থাকবে জানা নেই
যদিও প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার একটি বড় অংশকে টিকা দেওয়া হয়ে গিয়েছে, তবে টিকা বা প্রাকৃতিক সংক্রমণ থেকে অনাক্রম্যতা কতদিন স্থায়ী থাকবে সে বিষয়ে কোনও ধারণা নেই। পাশাপাশি, বর্তমানে করোনার নতুন ভ্যারিয়ান্ট ওমিক্রনের বিষয়ে এখনও সীমিত জ্ঞান রয়েছে৷ নতুন এই স্ট্রেনের স্পাইক প্রোটিনে ৩০টিরও বেশি মিউটেশন রয়েছে, যা আগের অন্য স্ট্রেইনের মতো নয়। ফলে বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে মানুষের শরীরে ভ্যাকসিনের প্রতিরোধ ক্ষমতাতে এই ভাইরাস আটকানো যাবে না বা তা কাজ করবে না। যার জন্য এটি এত তাড়াতাড়ি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। আবার ভারত সহ সারা বিশ্ব ডেল্টা (Delta) ভ্যারিয়ান্টের ভয়াবহতা টের পেয়েছে। এবার ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে আরেক নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন (Omicron)। ইতিমধ্যে করোনার এই নতুন প্রজাতি নিয়ে বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন সংস্থা নতুন এই ভাইরাসের সংক্রমণযোগ্যতাকেই নির্দেশ করেছে।
যেখানে দ্বিতীয় ঢেউয়ে ডেল্টার ভয়াবহতায় সারা দেশের মানুষ ভুক্তভোগী, সেখানে ওমিক্রনের কী প্রভাব পড়বে তা এখনই বলা যাচ্ছে না৷ তবে বিশেষজ্ঞরা আগেরবারের চেয়ে ওমিক্রনের তীব্রতা, সংক্রমণের হার এবং উপসর্গে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন। ভবিষ্যতে ডেল্টার মতো ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে কি না তা নিয়ে আপাতত চিন্তায় রয়েছেন বিশ্বের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। তবে আতঙ্কের বদলে যেহেতু সতর্কতাই এই ভাইরাসের হাত থেকে রেহাই দিতে পারে। তাই এই ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে সাধারণ মানুষের ওয়াকিবহাল থাকা জরুরি। যদিও এখনও পর্যন্ত ওমিক্রনে হালকা উপসর্গই দেখা গিয়েছে কিন্তু আগামী দিনে কোনও রকম বাড়াবাড়ি যাতে না হয় তাই প্রাথমিক অবস্থাতে ডাক্তারের পর্যবেক্ষণে আসা জরুরি। সেক্ষেত্রে কোনও উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে হবে। একই সঙ্গে আপাতত সংক্রামক ভাইরাস থেকে নিজেদের রক্ষা করতে ১৪ দিনের আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম মেনে চলাই উচিত হবে।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Coronavirus, Isolation, Quarantine