হোম /খবর /স্বাস্থ্য /
সন্তান কি খাওয়ার সময় টিভি দেখে? সাবধান, এই অভ্যেসই ডেকে আনতে পারে ওবেসিটি!

Obesity in Children: সন্তান কি খাওয়ার সময় টিভি দেখে? সাবধান, এই অভ্যেসই ডেকে আনতে পারে ওবেসিটি!

সন্তান কি খাওয়ার সময় টিভি দেখে? সাবধান, এই অভ্যেসই ডেকে আনতে পারে ওবেসিটি!

সন্তান কি খাওয়ার সময় টিভি দেখে? সাবধান, এই অভ্যেসই ডেকে আনতে পারে ওবেসিটি!

রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্তমানে ভারতে ১০ থেকে ১২ শতাংশ শিশু ওবেসিটির সমস্যায় ভুগছে। আর এই সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যাটা প্রতি বছর বাড়ছেও। শুধু তা-ই নয়, ওবেসিটিতে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে বিভিন্নসমস্যাও দেখা দিচ্ছে। (Obesity in Children)

আরও পড়ুন...
  • Share this:

#নয়াদিল্লি: ওবেসিটি বা স্থূলত্ব এই মুহূর্তের অন্যতম বড় একটি সমস্যা। খুব কম বয়স থেকেই এই সমস্যায় ভুগছেন অনেকে। শুধু তাই নয়, যাঁরা ওবেসিটিতে ভুগছেন, তাঁরা অন্য নানান রোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন। তার মধ্যে রয়েছে মধুমেহ, রক্তচাপ-সহ বিভিন্ন সমস্যা। এ নিয়ে রীতিমতো গবেষণা চলছে। সম্প্রতি ওবেসিটি নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে।

শিশুদের (Children) খাবার খাওয়ার অভ্যাস নিয়ে একটি গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করে এনভায়রনমেন্ট জার্নাল অফ হেল্থ (Environmental Journal of Health)। বিশ্বের তাবড় তাবড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এই গবেষণায় অংশ নিয়েছিল। সেই রিপোর্টে যে তথ্য উঠে এসেছে, যা রীতিমতো চিন্তায় ফেলেছে বিশেষজ্ঞদের। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, যে সব শিশু খাবার খেতে খেতে টিভি দেখে বা মোবাইল ফোন দেখে অথবা ল্যাপটপে কিছু দেখে, সে ক্ষেত্রে তাদের ব্যবহার পরবর্তী কালে সাংঘাতিক ভাবে পরিবর্তন হয়। তারা অত্যন্ত বদমেজাজি হয়ে ওঠে, অল্পতেই রেগে যায়। শুধু তা-ই নয়, ১০ বছর বয়সি পর্যন্ত শিশুরা যদি মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বা টিভিতে কিছু দেখতে দেখতে খাবার খায় তা হলে তাদের ওবেসিটি পর্যন্ত দেখা দিতে পারে। কিন্তু যারা দুপুর বা রাতে খাবার খাওয়ার সময় পরিবারের সকলের সঙ্গে গল্প করতে করতে খায় অথবা টিভি দেখে না , তারা তুলনামূলক ভাবে অনেক কম বদমেজাজি হয় এবং তাদের ক্ষেত্রে ওবেসিটির লক্ষণ সে ভাবে দেখা দেয় না।

ভারতের ১০ থেকে ১২ শতাংশ শিশু স্থূলকায়:

বায়োমেড সেন্ট্রাল জার্নালে (BioMed Central Journal) একটি সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। সেখানে একটি তথ্য প্রকাশ করে দেখানো হয়েছে যে,ভারতে ওবেসিটি সংক্রান্ত সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা আর প্রতি বছর এই সংখ্যাটা বাড়তে থাকছে। যারা স্থূলকায়, তাদের ক্ষেত্রে বড় রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ওই সমীক্ষার রিপোর্টে আরও জানা গিয়েছে যে, ভারতে ১০ থেকে ১২ শতাংশ শিশু ওবেসিটির সমস্যায় ভুগছে।

ওই রিপোর্টে আরও একটি তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে সারা দেশের অর্ধেক শিশু এই সমস্যায় আক্রান্ত হবে। অন্য একটি সমীক্ষার রিপোর্টে আবার দাবি, গত ৫০ বছরে ভারতে তৈলাক্ত খাবারের পরিমাণ ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ৮০ শতাংশ ছেলে-মেয়ে, যাদের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে, তারা চকোলেট, পিৎজা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, মিষ্টি ইত্যাদি খাওয়ার ফলে ওবেসিটিতে ভুগছে।

ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশন বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র বক্তব্য কী?

এ বিষয়ে সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশন বা WHO একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে তারা বলেছে, শিশুদের ক্ষেত্রে যাদের বয়স ৫ বছরের নীচে, তাদের স্ক্রিন টাইম নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। যদি নির্দিষ্ট সময়ের অতিরিক্ত সময় ধরে কোনও শিশু টিভি দেখে বা মোবাইল এবং ল্যাপটপে কিছু দেখে, তা হলে তাদের ক্ষেত্রে মানসিক এবং শারীরিক প্রভাব পড়বে। এই প্রসঙ্গে অভিভাবকদের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ, এই ধরনের ডিভাইস শিশুদের থেকে যতটা দূরে রাখা যায়, ততই মঙ্গল।

WHO-এর গাইডলাইনে কী কী বলা হয়েছে?

শিশুদের স্ক্রিন-টাইম বা কোনও ডিভাইস দেখার সময়সীমা সংক্রান্ত যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে WHO, তাতে তারা জানিয়েছে--

যাদের বয়স এক বছরের নীচে, তাদের ক্ষেত্রে স্ক্রিন-টাইম জিরো হওয়া উচিত। যার অর্থ, তাদের কোনও ভাবেই টিভি, মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপে কিচ্ছু দেখানো যাবে না।

যাদের বয়স ১ থেকে ২ বছর, তাদের ক্ষেত্রে সারা দিনে ১ ঘণ্টার বেশি কোনও ডিভাইসে কিছু দেখা যাবে না।

যাদের বয়স ৩ থেকে ৪ বছর, তাদের স্ক্রিন-টাইম যেন কোনও ভাবে ১ ঘণ্টা অতিক্রম না-করে, সে দিকে নজর রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

খাওয়ার সময় টিভি দেখলে কী কী সমস্যা হতে পারে?

খাওয়ার সময় টিভি দেখার ফলে শিশুদের খাবার হজম হতে সমস্যা হয়। যার ফলে শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট জমতে থাকে। এ ছাড়াও খাওয়ার সময় টিভি দেখার ফলে মনটা থাকে টিভি দেখার উপর। এর ফলে শিশুর খেয়াল থাকে না যে, তারা ঠিক কতটা খেয়েছে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, টিভি বা কোনও ইলেকট্রনিক গ্যাজেট দেখতে দেখতে শিশুরা মূলত জাঙ্ক ফুড খেতে বেশি পছন্দ করে। যার ফলে শিশুরা অতিরিক্ত মোটা হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে WHO-এর তরফে একটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আগে দ্রুত খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে এবং তার পর টিভি দেখতে হবে। আর সন্তানের মধ্যে যাতে এই অভ্যেস তৈরি হয়, সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে তাদের মা-বাবাদেরই।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এ বিষয়ে কী বলছেন?

এ বিষয়ে পরশ হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, এক জন শিশু, যার ৫ বছরেরও কম বয়স সে বুঝবে না যে, কোনটা ঠিক এবং কোনটা ভুল। তারা সেটাই বোঝে, যেটা তারা দেখে। অনেক সময় দেখা যায়, শিশুরা কার্টুনের মতো কথা বলার চেষ্টা করছে। এই ভাবেই শিশুরা অনেক সময় কথা বলতে শেখে। তাই তারা যখন খেতে খেতে টিভি দেখে, তখন তাদের মন টিভি দেখার উপরেই থাকে। ফলে তারা বুঝতে পারে না যে, তারা কতটা খেয়েছে। যার ফলে তারা ওবেসিটির মতো রোগে আক্রান্ত হয়।

মনোবিদরা কী বলছেন?

এক মনোবিদ জানিয়েছেন, অনেক বাবা-মা তাঁদের কাছে বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে আসেন। তাঁরা জানিয়েছেন, অনেক সময় ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে তাঁদের সন্তানরা খুব রেগে যাচ্ছে। আর উপায়ান্তর না-দেখে তখন তাদের বাবা-মায়েরা টিভির সামনে বসিয়ে বা হাতে ফোন দিয়ে খাওয়াচ্ছে। যা অত্যন্ত খারাপ অভ্যাস বলে মত মনোবিদদের। এই ধরনের পরিস্থিতিতে শিশুদের মনোসংযোগও ব্যাহত হয় এবং তারা পরিমাণে অনেক খাবার খেয়ে ফেলে। এ ক্ষেত্রে পুরোনো দিনের বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বনের কথা জানিয়েছেন তাঁরা। বলেছেন, গল্প বলতে হবে। খাওয়ার সময় কোনও শিশু না-খেতে চাইলে, তাকে বিভিন্ন ধরনের গল্প বলে খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে।

ওবেসিটির উপসর্গগুলি কী কী?

খুব দ্রুত দুর্বল হয়ে যাওয়া

ঘুমের সমস্যা হওয়া

অনিয়ন্ত্রিত রক্ত চাপ

মধুমেহ রোগে লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া

শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা তৈরি হওয়া

শিশুদের ক্ষেত্রে কী ভাবে ওবেসিটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব?

ওয়েট ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম করা

শিশুদের স্কিম দুধ খাওয়ানোর অভ্যাস করা

খাওয়ার অভ্যাস বদলানো

জাঙ্ক ফুড খাওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করা

টিভি দেখা সম্পূর্ণ বন্ধ করা

আউটডোর গেম খেলার অভ্যাস করা

আরও পড়ুন: দীর্ঘক্ষণ মাস্ক পরে থাকলে মাথার যন্ত্রণা হচ্ছে? জানুন কারণ এবং সমাধান

Published by:Raima Chakraborty
First published:

Tags: Children, Lifestyle, Obesity