২০১৯ সালের ৩১ অগস্ট৷ বউবাজারের বি বি গাঙ্গুলী স্ট্রিট, বউবাজার স্ট্রিট, দুর্গা পিতুরি লেন, স্যাঁকরা পাড়া লেনের বাসিন্দারা বাস্তুহারা হয়েছিলেন। তলপি-তলপা গুটিয়ে পালিয়েছিলেন হোটেলের দিকে৷ মেট্রো রেলের কাজের জন্য একের পর এক বাড়িতে বিশাল ফাটল,বাড়ি হেলে পড়েছিল। ফিরে আসছে সেই দুঃস্বপ্নের দিনরাত্রি৷
বৌবাজারের আসল রহস্য লুকিয়ে আছে দুর্গা পিতুরী লেনের কাছে তৈরি হওয়া প্রকোষ্ঠে৷ আর মাটির ৩৩ মিটার নীচে প্রকোষ্ঠের সেই মাটিতেই এখন নজর সকলের৷ একাধিক সিঁড়ি পেরিয়ে নিচে নামতেই দেখা গেল বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে গোটা অংশ জুড়ে। প্রকোষ্ঠের একদিকে রয়েছে টানেল বোরিং মেশিনের শেষ করে যাওয়া অংশ। চান্ডির তৈরি করা সেই টানেলের মুখ। অন্যদিকে রয়েছে টানেল বোরিং মেশিন উর্বির তৈরি করা টানেলের অংশ। আর এই দুই অংশের মধ্যে দূরত্ব বজায় রয়েছে ৩৮ মিটারের৷ এই ৩৮ মিটার অংশেই বানানোর কথা একটা কংক্রিটের বক্স৷ যাকে বলা হচ্ছে জয়েন্ট বক্স৷ সেই বক্স তৈরি করার আগেই মাটিতে কংক্রিটের একটা আস্তরণ বা বেস স্ল্যাব বানানো হচ্ছিল। নকশা অনুযায়ী বেস স্ল্যাব বানাতে গেলে বা ঢালাই করতে গেলে মাটি খোঁড়া প্রয়োজন ছিল। কারণ তিনটি স্তরের কংক্রিটের বেস স্ল্যাব বানানো হচ্ছিল। আর সেই সময়েই ঘটে বিপত্তি। মাটির নীচ থেকে ক্রমাগত জল উঠতে শুরু করে।
আরও পড়ুন : ৪ জনের মধ্যে কে সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমান বলুন তো? উত্তর থেকেই বোঝা যাবে আপনি কেমন!
নিউজ ১৮ বাংলা অবশ্য সুড়ঙ্গে পৌঁছে দেখল জল বেরিয়ে আসা কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় ১১টি উৎস্যমুখ থেকে জল ক্রমাগত বেরিয়ে আসছিল। লাগাতার গ্রাউটিং করে সেই মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সিমেন্ট আর রাসায়নিকের সংমিশ্রণ কার্যত উচুঁ হয়ে আছে এসপ্ল্যানেডের দিকে থাকা টানেলের সামনে। এই স্তূপীকৃত অংশ সরানো হবে ভবিষ্যতে। তার পরেই শুরু করা যাবে বৌবাজারে মেট্রোর টানেলের কাজ।
কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে করপোরেশন লিমিটেডের ডাইরেক্টর প্রজেক্ট,প্ল্যানিং এন সি কারমালি জানিয়েছেন, "এই নয় মিটার অংশের কংক্রিটের বেস স্ল্যাববানানোর কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল আগামী সাত দিনে। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি তাতে আগামী ছয় মাসে বউবাজারের গোটা কাজ সম্পন্ন করা হয়ে যাবে৷ এই কাজ আগামী তিন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল।"
তবে প্রতি ২৪ ঘণ্টার শিফটে কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে। চারিদিকে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে৷ চান্ডি টানেলের দিকে অল্প কিছুটা জল আছে। তবে তা কোনও ভাবেই ক্ষতিকারক নয়৷ নয় মিটার অংশে গার্ডওয়াল তৈরি করে রাখা হয়েছে। যাতে কোনও ভাবেই জলের সঙ্গে আসা বালি, সিমেন্ট বা অন্য উপকরণ না চলে আসে৷ আপাতত প্রকোষ্ঠের মধ্যে যে অংশে গ্রাউটিং চলেছে সেটি কঠিন হয়েছে। আগামী দিনে এই অংশে কাজ করতে গেলে পুরো ভেঙে ফেলে। মাটির নীচে যাতে আর জল না আসে সেটা দেখে। জিও টেকনিক্যাল পরীক্ষা করে ভবিষ্যতের কাজ শুরু করা হবে।
আরও পড়ুন : ব্লেডের এই নকশার আসল রহস্য জানেন? নেপথ্যের কারণ শুনলে চমকে যাবেন!
বাসিন্দাদের প্রশ্ন, 'প্রাণ ভয়ে আমরা রাস্তায় নেমে এসেছি৷ কিন্তু কার ভরসায় কোথায় যাব? আগে যাঁরা বাড়ি ছেড়ে গিয়েছেন, তাঁরা এখনও ফিরতে পারেননি৷ 'ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর দায়িত্বে থাকা কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশনের ডাইরেক্টর প্রজেক্ট এন সি কারমালি জানিয়েছেন, 'বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে৷ হোটেলে নিয়ে রাখা হবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে৷ ১৪টি মতো পরিবার রয়েছে৷ আমাদের পক্ষ থেকে যা করণীয়, করা হচ্ছে৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে৷' তাঁর আরও দাবি, 'ফাটল সবে ধরতে শুরু করেছিল৷ খুব ভয়ের কিছু নেই৷ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবেই ওই পরিবারগুলিকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে৷'
Abir Ghoshal
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Bowbazar, Bowbazar Tragedy