#কলকাতা: এ যেন আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ। মাস শেষে বেতনের সময় হলেই জ্বলে উঠবে প্রদীপ, মিলবে বেতন। আর তারপর স্কুলের খোঁজ করতে গেলেই ম্যাজিক। কোথায় স্কুল? তা তো নেই! স্কুল নেই। স্কুলের ভবন নেই। স্কুলের পড়ুয়া নেই। শুধু রয়েছেন ৩ শিক্ষক। আর আছে তাঁদের বেতন। ২০১৩ সালে চাকরিতে যোগদানের পর থেকে নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন তাঁরা। ৯ বছরেও সেখানে ছেদ নেই। স্কুলে ক্লাস হল না। চক ডাস্টারের ছোঁয়া পায়নি ব্ল্যাকবোর্ড।
এ হেন রায়পুর জুনিয়র হাইস্কুলের ঘটনায় তাজ্জব হয়ে গেছেন গ্রামের বাসিন্দারাও। সূত্রের খবর, ৩ শিক্ষককেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কাছাকাছি অন্য স্কুলে শিক্ষকতার কাজ করতে দেওয়া হয়। একটানা ৮-৯ বছর ৩ শিক্ষককে নিয়ে অন্য স্কুলে অস্থায়ী ভিত্তিতে পড়াশোনার কাজ করানো হচ্ছে। সোনারপুর সার্কেলের সাব ইন্সপেক্টরের মৌখিক নির্দেশে এমন কাজ করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: ক্রেতা সুরক্ষায় নজর, রাজ্যের স্কুলে স্কুলে তৈরি নয়া ক্লাব, কী ভূমিকা ক্লাবের?
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বারুইপুর মহকুমার সোনারপুর থানার অন্তর্গত চম্পাহাটি পোস্ট অফিসের রায়পুর গ্রাম। সবুজে ঘেরা একটা জনপদ। গ্রামে ৪ টি স্কুল থাকলেও দিনভর ঘুরেও খুঁজে পাওয়া যায়না রায়পুর জুনিয়র হাইস্কুলের হদিশ। অথচ কাগজে-কলমে ২০১১ সাল থেকে স্কুলটি রয়েছে শিক্ষা দফতরে হিসেবে। ২০১৩ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশন নিয়োগ সুপারিশপত্র দেয় স্কুলের ৩ জন শিক্ষককে। ২০১৩ সালেই ৩ জন শিক্ষক, গণিতের পঙ্কজ কুমার দাস, ইতিহাসের প্রকাশ সর্দার এবং ইংরেজির শিক্ষিকা দেবলীনা সেন নিযুক্ত হন রায়পুর জুনিয়র হাইস্কুলে।
রায়পুর গ্রামের দীপ বিশ্বাস। ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া। সেও জানাচ্ছে তাঁদের গ্রামে রায়পুর জুনিয়র হাইস্কুল বলে কোনও বিদ্যালয় নেই। গ্রামের একমাত্র হাইস্কুল রায়পুর জিতেন্দ্র বিদ্যামন্দির। মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ানো হয় সেখানে। সেই স্কুলের পরিচালন সমিতির অন্যতম সদস্য সুকান্ত মণ্ডলের কথায়, রায়পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়কে উন্নিত করে জুনিয়র হাইস্কুল করার কথা তিনি শুনেছিলেন। তবে বাস্তবিক তার কোনও অস্তিত্ব আজ পর্যন্ত খুঁজে পাইনি আমরা। ৩ শিক্ষক তাঁদের নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কায়। তাঁদের আইনজীবী উজ্জ্বল রায় তিনি নিজেও বিস্মিত এমন স্কুলের কথা জেনে। উজ্জ্বল রায়ের কথায়, পরীক্ষায় সফল হয়ে শিক্ষক পদে যোগ দিয়েছেন ৩ জন।
আরও পড়ুন: 'পথ কুকুরদের প্রতি যত্নবান না হলে ভোট বিরুদ্ধে যাবে', কাদের সতর্ক করলেন ফিরহাদ হাকিম?
স্কুল না থাকলে শিক্ষকরা কী করবেন? স্থানীয় স্কুল এসআই কীভাবে নির্দেশ দিয়ে কাছাকাছি অন্য স্কুলে ৩ শিক্ষককে ক্লাস করাচ্ছেন সেই নিয়েও প্রশ্ন তাঁর। সবুজে ঘেরা জনপদের নতুন আশ্চর্যের শুরুটা ২০১১ সালে। এখনও পর্যন্ত রায়পুর জুনিয়র হাইস্কুলের ২০১১ সাল থেকে ঘটে চলা ঘটনাক্রম। ২২ জুন ২০১১ নতুন এই উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের জন্য প্রভিশনাল রেকগনিশন দায় রাজ্যের মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। সাব-ইন্সপেক্টর স্কুল, সোনারপুর সার্কেল (SE) দক্ষিণ ২৪ পরগনাকে স্কুলের অ্যাড হক কমিটির সদস্য সম্পাদক বানিয়ে স্কুল বাড়ি নির্মাণে হাত লাগাতে বলে। এডুকেশন ডিরেক্টরেট ২৬ অগাস্ট ২০১১ স্কুলের জন্য ৩ জন শিক্ষক এবং ১ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদের অনুমোদন দেয়।
আরও পড়ুন: নজরে উত্তর-পূর্ব ভারত, আজ অসম যাচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
২০১৩ সালে স্কুলের জন্য ৩ জন শিক্ষক গণিতের পঙ্কজ কুমার দাস, ইতিহাস প্রকাশ সর্দার এবং ইংরেজি দেবলীনা সেন নিযুক্ত করার জন্য সুপারিশ করে স্কুল সার্ভিস কমিশন। এরপরই ৩ জন শিক্ষক নিযুক্ত হয়। ৩১ জানুয়ারি ২০১৪ স্কুল ইন্সপেক্টর সোনারপুর সার্কেল, জেলা স্কুল পরিদর্শককে চিঠি দিয়ে জানায় রাইপুর জুনিয়র হাইস্কুল নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ার কথা। কারণ হিসেবে বলা হয়, প্রায় এক উঠোনে থাকা রায়পুর জিতেন্দ্র বিদ্যামন্দিরের করা মামলার কথা।
৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৪ জেলা স্কুল পরিদর্শককে চিঠি দিয়ে, রায়পুর জুনিয়র হাইস্কুলের টিচার ইনচার্জ অনুরোধ করেন শিক্ষকদের অনলাইন অনুমোদন দেওয়ার জন্য। ফেব্রুয়ারি ২০১৫, সর্বশিক্ষা মিশনের আধিকারিকরা পরিদর্শন করেন এবং অনুসন্ধান রিপোর্টে জানান কোনও স্কুল বাড়ি নির্মাণ হয়নি। ২ মার্চ ২০২১, অ্যাসিস্ট্যান্ট ইনস্পেক্টর অফ স্কুল, জেলা স্কুল পরিদর্শককে রিপোর্ট দিয়ে জানান স্কুলের কোনও বাড়ি নেই। স্কুলের জন্য বরাদ্দ অর্থ ফেরত এসেছে এবং এই নতুন স্কুল তৈরির কোনও সম্ভাবনাও নেই। যে ৩ শিক্ষক নিযুক্ত হয়েছিলেন, তাঁদের কাছে-পিঠে স্কুলে কাজ করার কথা বলা হলেও ওই সমস্ত স্কুল ইতিমধ্যেই শিক্ষক হিসেবে সম্পৃক্ত।
ARNAB HAZRA
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Sonarpur Rajpur