#কলকাতা: বাংলা নিয়ে অনেক আশা ছিল নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহদের। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তার কাছে ধরাশায়ী হতে হয়েছে বিজেপিকে। শুধু তাই নয়, ২০০ আসনের স্বপ্ন দেখে মাত্র ৭৭ আসনে থেমে যেতে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। এই পরিস্থিতিতে হঠাৎই পৃথক উত্তরবঙ্গের দাবি তুলেছেন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বার্লা। উত্তরবঙ্গ বঞ্চনার শিকার বলে অভিযোগ তুলে আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা হোক, এমনই দাবি বার্লার। যদিও বাংলায় বিচ্ছিন্নতাবাদের সুর তোলা হচ্ছে বলে পাল্টা সুর চড়িয়েছে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে জন বার্লার পাশাপাশি এবার অপর সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বললেন, 'পশ্চিমবঙ্গবাসী হিসেবে বলব, মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে বহিরাগত শব্দ এনেছেন বাংলায়, তাতে এই দাবি ওঠা অস্বাভাবিক নয়। কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে ৫০ কিমির মধ্যে ২৩ জন মন্ত্রী রয়েছেন। আর রাঢ়বঙ্গের যুবকদের চাকরি নেই। আমাদের এলাকার সম্পত্তি রাজ্যের কোষাগারে চলে যাচ্ছে। অথচ আমরা কিছু পাচ্ছি না। আগামী দিনে রাঢ়বঙ্গ থেকেও একই দাবি উঠবে।' অর্থাৎ, উত্তরবঙ্গের পর এবার রাঢ়বঙ্গের কথা শোনা গেল অপর বিজেপি সাংসদের মুখে। যদিও বিজেপির লক্ষ্য অখণ্ড পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন, দিলীপ ঘোষদের মুখে এখন এই বাণীই ফুটছে। বাঙালি ভাবাবেগের কথা মাথায় রেখেই 'বিচ্ছিন্নতাবাদে' সায় দিতে পারছে না গেরুয়া শিবির। আর ঠিক এই জায়গাতেই মুকুল রায়ের 'হাতযশ' দেখছে রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ।
বিধানসভা ভোটের ফলপ্রকাশ হয়েছে দুমাসও হয়নি। সদ্য গঠিত হওয়া সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে গিয়ে এমন বঙ্গভঙ্গের ডাক যে জনমানসে ভুল প্রভাব ফেলবে, তা বিজেপি নেতারাও জানেন। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের জন্য বাংলায় প্রাপ্ত ভোট ধরে রাখাই এখন গেরুয়া শিবিরের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু যেভাবে বিজেপি সাংসদরা বাংলাকে ভাগের কথা বলছেন, তাতে গেরুয়া শিবিরের উপর মানুষের বিরক্তি আরও বাড়তে পারে বলেই মনে করছেন অনেকে। গেরুয়া শিবিরের অন্দরের খবর, হঠাৎ আলাদা আলাদা রাজ্যের দাবি তোলা দলের পরিকল্পনাতেও ছিল না। তাহলে কেন জন বার্লা, সৌমিত্র খাঁ'রা এ ধরনের মন্তব্য করে চলেছেন?
রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছে, জন বার্লা ও সৌমিত্র খাঁ দুজনেই বিজেপিতে মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসার আগে সৌমিত্রকেও বলতে শোনা গিয়েছিল, মুকুল রায় তাঁর রাজনৈতিক গুরু। সেই গুরু দলবদল করার পর অবশ্য মুকুলকে মীরজাফর বলেছিলেন সৌমিত্র। তবে, ওই আক্রমণকে গুরুত্ব দিতে নারাজ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তাঁদের মতে, জন বার্লা, সৌমিত্রদের মন্তব্য আদতে বিজেপিকেই অস্বস্তিতে ফেলছে। দলের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে তাতে। আর বিজেপির অন্দরে দলীয় কোন্দল বাড়ানো আসলে মুকুলেরই কৌশল হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। আবার অপর একটা মহল থেকে বলা হচ্ছে, গোটা বিষয়ে তৃণমূলের সুচারু কৌশলও থাকতে পারে। মুকুল অনুগামীরা যখন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছিলেন, সেই সময়ও তৃণমূল বলেছিল, কেন্দ্রীয় এজেন্সি থেকে বাঁচতেই বিজেপিতে যাওয়া তাঁদের। রাজনৈতিক কোনও সংঘাত ছিল না। সেই তাঁরাই এখন বিজেপির অন্দরে 'বঙ্গভঙ্গের' সুর তুললে তা যেমন বিজেপিকে বিপাকে ফেলবে, অপরদিকে, রাজ্য সরকারই সেই সমস্যা মিটিয়ে ফেলে অ্যাডভান্টেজ নিতে পারবে।
শুধু তাই নয়, সোমবার আলিপুরদুয়ারের বিজেপি জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। সেই যোগদান পর্ব থেকেই মুকুল রায় বলেছেন, 'গত লোকসভা ভোটে প্রথম আসন বিজেপি পেয়েছিল উত্তরে। আজ সেই উত্তরবঙ্গ থেকেই শেষের শুরু হল বিজেপির।' বস্তুত মুকুল তৃণমূলে যাওয়ার পর থেকেই ভাঙনের আশঙ্কায় কাঁপছে গেরুয়া শিবির। বহু বিজেপি বিধায়ক ও সাংসদ তৃণমূলে আসতে পারেন বলে জল্পনা চলছে। এই পরিস্থিতিতে পাল্টা দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে উঠেপড়ে লেগেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন, এই পরিস্থিতিতে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে অনেক নেতাই দলবিরোধী বা দলের নীতি বিরোধী মন্তব্য করতে পারেন। তাঁরা আসলে চাইবেন দল তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। আর তাহলেই সুগম হয়ে যাবে তৃণমূলে যাওয়ার পথ। যদিও প্রকাশ্যে এই ধরনের 'পরিকল্পনা' স্বীকার করতে চাইছেন না কেউই। তবে, 'বঙ্গভঙ্গের' ডাক আসলে বিজেপিভঙ্গ হতে পারে বলেই মনে করছেন অনেকে।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Bengal BJP, BJP MP, Mukul roy