কলকাতা: শিক্ষা দফতরের নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে এবার পুরসভায় নিয়োগে বড়সড় চাকরি দুর্নীতির খোঁজ পেল ইডি। রাজ্যের অন্তত ৬০টি পুরসভায় ৫ হাজার চাকরি বিক্রি হয়েছে বলে এ দিন আদালতে দাবি করেছে ইডি৷ এই নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে অন্তত ৫০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বলেও অভিযোগ ইডি-র৷
শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ প্রমোটার অয়ন শীলকে এ দিন ভোররাতে গ্রেফতার করে ইডি৷ তার মাধ্যমেই পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির এই বিস্ফোরক তথ্য ইডি গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। এ দিন আদালতে ইডি-র আইনজীবী দাবি করেন, শুধু শিক্ষক নয়, রাজ্যে শ্রমিক থেকে টাইপিস্ট নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বলে আদালতে অভিযোগ করা হয়েছে ইডি-র পক্ষ থেকে।
অয়ন শীলকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে এ দিন ইডি-র আইনজীবী আদালতে বলেন, শিক্ষা দফতরের নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছিলেন তারা৷ কিন্তু তদন্তে নেমে দেখা যাচ্ছে, রাজ্য সরকারের সব দফতরেই নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে৷ ইডির আইনজীবী আরও বলেন, যা পরিস্থিতি, তাতে স্বয়ং ভগবান শ্রী কৃষ্ণ এসেই রাজ্যকে রক্ষা করতে পারেন!
প্রায় ৩৭ ঘণ্টার তল্লাশির পর অয়ন শীলকে গ্রেফতার করেছিল ইডি৷ সেই তল্লাশি অভিযানে অয়ন শীলের সল্টলেকের অফিস থেকে রাজ্যের অন্তত ষাটটি পুরসভায় নিয়োগ পরীক্ষার আসল ওএমআর শিট উদ্ধার করেন ইডি আধিকারিকরা৷ নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃতদের বাড়ি থেকে এর আগে ওএমআর শিটের কপি মিলেছিল৷ কিন্তু অয়নের কাছ থেকে আসল ওএমআর শিট দেখে রীতিমতো চমকে গিয়েছেন ইডি কর্তারা৷ শুধু পুরসভার নিয়োগ নয়, অয়নের অফিস থেকে ২০১৪ এবং ২০১২ সালের টেট পরীক্ষার নথিও উদ্ধার হয়েছে৷ ইডি-র আইনজীবীর কথায়, অয়ন শীলের অফিস আসলে সোনার খনি। যে পরিমাণ টাকার লেনদেনের হদিশ তারা অয়ন শীলের সূত্রে পাওয়া গিয়েছে, তা চমকে দেওয়ার মতো বলেই আদালতে দাবি করেছে ইডি।
আরও পড়ুন: এখনও গ্রেফতার নন, নিয়োগ দুর্নীতিতে ৬ প্রভাবশালী খুঁজে পেল ইডি! এবার? ব্যাপক চাঞ্চল্য
এ দিন আদালতে পেশ করে অয়ন শীলকে ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে চায় ইডি৷ আদালতে এ দিন ইডি-র আইনজীবী যা বলেছেন তাতে রাজ্য সরকার এবং রাজ্যের শাসক দলের অস্বস্তি নিঃসন্দেহে আরও বাড়বে৷
আদালতে এ দিন ইডি-র আইনজীবী দাবি করেছেন, অন্তত ৬০টি পুরসভায় ৫ হাজার চাকরি বিক্রি হয়েছে এই অয়ন শীলের মাধ্যমে৷ এর জন্য অন্তত ৫০ কোটির লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ ইডি-র৷ অয়নের অ্যাকাউন্টের নিয়োগ দুর্নীতির ২৫ কোটি টাকা ঢুকেছে বলে অভিযোগ ইডি৷ অয়নকে বিভিন্ন পুরসভার কাজের টেন্ডার পাইয়ে দেওয়া হত বলেও অভিযোগ ইডি-র৷ তাঁর সঙ্গে প্রভাবশালীদের যোগ ছিল বলেও অভিযোগ৷ অয়নের ল্যাপটপ, মোবাইল, ম্যাকবুক থেকে চমকে দেওয়ার মতো তথ্য মিলেছে বলেও আদালতে বিচারককে জানিয়েছেন ইডি-র আইনজীবী৷ অন্তত চার থেকে পাঁচ জন প্রভাবশালীর সঙ্গে অয়নের যোগ ছিল বলে দাবি ইডি-র।
আরও পড়ুন: পুরসভার চাকরিতেও দুর্নীতি? ৭০টি পুরসভার নিয়োগের ওএমআর শিট প্রোমোটার অয়নের অফিসে
পুরসভাতেও চাকরি বিক্রির এই তথ্য ইডি-র পক্ষ থেকে সিবিআই-কেও জানানো হবে বলে আদালতে জানিয়েছে ইডি৷ ইডি-র আইনজীবীর দাবি, গোটা রাজ্য জুড়ে চাকরি বিক্রির এই চক্র ছড়িয়ে রয়েছে৷
ইডি আদালতে জমা দেওয়া নথিতে দাবি করেছে, এখনও পর্যন্ত দক্ষিণ দমদম, উত্তর দমদম, পানিহাটি, কামারহাটি এবং বরানগর পুরসভায় চাকরি বিক্রি হয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছেন৷ সবমিলিয়ে রাজ্যের প্রায় ৬০টি পুরসভা এই তালিকায় রয়েছে৷ ২০১৪-১৫ সাল থেকে অয়ন শীল পুরসভায় এই চাকরি বিক্রির কারবার চালাচ্ছিলেন বলে ইডি-র দাবি৷ ঠিক যেভাবে শিক্ষা দফতরে নিয়োগের ক্ষেত্রে ওএমআর শিটে কারচুপি করে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়া হয়েছিল, ঠিক একই ভাবে পুরসভাতেও ওএমআর শিটে কারচুপি করে চাকরি বিক্রি হয়েছিল৷ যদিও অয়ন শীলের আইনজীবী দাবি করেছেন, অয়ন শীলের সংস্থাকে রাজ্যের বেশ কিছু পুরসভার নিয়োগ পরীক্ষার ওএমআর শিট তৈরির বরাত দিয়েছিল রাজ্য সরকার৷ টেন্ডারের মাধ্যমেই এই বরাত পেয়েছিল অয়নের সংস্থা৷
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।