#কলকাতা: ফের বামফ্রন্ট-লিবারেশন কাছাকাছি! বিধানসভা নির্বাচনের পর প্রথম বৈঠকে বেশকিছু কর্মসূচি নিয়ে যৌথ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে খবর। ২৭ তারিখ ধর্মঘট ও ত্রিপুরায় বামেদের উপর বিজেপির আক্রমণের প্রতিবাদে নেওয়া কর্মসূচিতেও থাকছে লিবারেশন। গতকাল, ১২ সেপ্টেম্বর বামফ্রন্টের সব শরিক দল ও সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের ঐক্যবদ্ধ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার পরে বামফ্রন্ট সভাপতি বিমান বসু বিবৃতি দিয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
২) ত্রিপুরায় শাসক দলের দুর্বৃত্ত বাহিনী বামপন্থীদের বিরুদ্ধে হিংসার বেনজির আক্রমণ সংগঠিত করেছে। গত ৮-৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ সিপিআই(এম)-র রাজ্য দপ্তর, জেলা কমিটি, মহকুমা কমিটি-সহ প্রায় ৫০টি অফিসে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর করা হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে অন্যান্য বামপন্থী দলের দপ্তর, গণ সংগঠনের অফিস। ত্রিপুরার শ্রদ্ধেয় জননেতা কমরেড দশরথ দেবের মূর্তি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বামপন্থী কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে ঢুকে আক্রমণ করা হয়েছে, অনেকের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের অফিসেও হামলা, ভাঙচুর চালানো হয়েছে। গোমতী জেলার উদয়পুরে আরএসপি এবং সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের জেলা দপ্তর নৃশংস আক্রমণ করে ধ্বংস করা হয়েছে।
এই আক্রমণ ঘটেছে পুলিশের সামনে, তারা নীরব, নিষ্ক্রিয় থেকেছে। এমনকী তান্ডবে মদতও দিয়েছে। যেভাবে এই আক্রমণ চালানো হয়েছে তা থেকে স্পষ্ট পূর্বপরিকল্পিতভাবে এবং রাজ্য প্রশাসনের মদতে বিরোধীদের ওপরে এই জঘন্য আক্রমণ চালানো হয়েছে। ঘটনার পরে একজনও দুষ্কৃতী গ্রেপ্তার হয়নি, বরং রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে এই আক্রমণকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিজেপি-বামের চেয়ে অনেক 'এগিয়ে' থাকতে ভবানীপুরে বিশেষ কৌশল তৃণমূলের!
ত্রিপুরায় গণতন্ত্র বিপন্ন। বিজেপি সরকারে আসীন হওয়ার পর থেকেই বামফ্রন্টের নেতা-কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন, অনেকে খুন হয়ে গেছেন। বিরোধীদের স্বাভাবিক রাজনৈতিক কাজকর্ম করার অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের নাগরিক অধিকার বারংবার আক্রান্ত হচ্ছে। সংবিধান মেনে আইনের শাসনের বাতাবরণ নেই। এরই মধ্যে জীবনজীবিকা, কাজের দাবি, খাদ্যের দাবিতে মানুষ ক্রমশ প্রতিবাদে সোচ্চার হচ্ছেন। সভা-সমাবেশ, মিছিল, বিক্ষোভ হচ্ছে। এই প্রতিবাদের কণ্ঠরোধ করতেই বিজেপি ভয়াবহ আক্রমণ নামিয়ে এনেছে।
বামফ্রন্ট ও সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের যৌথ সভা এই আক্রমণের তীব্র নিন্দা করছে। এই হিংসার অবসান ঘটাতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ত্রিপুরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারও দেশের একটি রাজ্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপরে এই আক্রমণে নীরব থাকতে পারে না। আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে তাদের হস্তক্ষেপ করতে হবে। ত্রিপুরার সংগ্রামী জনগণের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করছে পশ্চিমবঙ্গ বামফ্রন্ট ও সিপিআই(এমএল) লিবারেশন। ত্রিপুরায় আক্রমণের বিরুদ্ধে এরাজ্যেও প্রতিবাদী কর্মসূচী হয়েছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে।
৩) পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী দলসমূহ কলকাতার বনহুগলীতে অবস্থিত কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর দ্য অর্থোপেডিক্যালি হ্যান্ডিক্যাপড এনআইওএইচ (এনআইএলডি)-এর সদর দপ্তর অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সদর দপ্তর স্থানান্তরের প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর উদ্যোগে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভকে সমর্থন করছে বামপন্থী দলসমূহ। প্রসঙ্গত, ১৯৭৮ সালে রাজ্য সরকারের দেওয়া জমিতে এই কেন্দ্রীয় সংস্থাটি তৈরি হয়। পশ্চিমবঙ্গ সহ পূর্ব ও উত্তর পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ চিকিৎসার জন্য এই সংস্থাটির ওপর খুবই নির্ভরশীল। এছাড়া এই সংস্থাটিতে বিভিন্ন বিষয়ের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা এবং ট্রেনিংয়ের সুযোগ রয়েছে, সদর দপ্তর স্থানান্তরিত হলে তা ব্যাহত হবে। বামপন্থী দলসমূহ দাবি করছে, এনআইএইচও’র সদর দপ্তর বনহুগলী থেকে স্থানান্তরিত করা যাবে না। দেশের অন্যান্য জায়গায় এই ধরনের সংস্থা কেন্দ্রীয় সরকার গড়ে তুলতে চাইলে করতেই পারে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত সংস্থাটির সদর দপ্তর পশ্চিমবঙ্গেই রাখতে হবে।
৪) এদিনের সভায় আলোচনায় আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টেয় কলকাতায় লেনিন মূর্তির সামনে জমায়েত হয়ে ত্রিপুরায় আক্রান্ত মানুষের প্রতি সংহতি জানাতে ও ধর্মঘটের সমর্থনে একটি সংক্ষিপ্ত সভা অনুষ্ঠিত হবে।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Left Front