'হে চিরসারথি, তব রথচক্রে...' ১৯৪৪-২০২৪ : সাদা পোশাকের মুকুটহীন সম্রাট...
- Published by:Rachana Majumder
- news18 bangla
Last Updated:
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সক্রিয় রাজনীতিতে হাতেখড়ি খাদ্য আন্দোলন দিয়ে। তার আগে প্রেসিডেন্সি থেকে সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা। না, ছাত্র রাজনীতির ময়দানে লড়াই তিনি করেননি। ১৯৬৬ সালে সিপিএমে যোগ। ঠিক দু-বছর পরেই পশ্চিমবঙ্গের দ্য ডেমোক্রেটিক ইউথ ফেডারেশনের সেক্রেটারি হিসেবে নির্বাচন। এরপর তিনি হলেন সিপিএমের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য।
কলকাতা: সে কোন সকাল…
সূর্যোদয়ের ইতিহাসটা বড় অদ্ভুত। আজকের অস্তমিত সেই সূর্যকে পুব-দিক দেখিয়ে দিয়েছিলেন যিনি, তিনি প্রমোদ দাশগুপ্ত। কে এই প্রমোদবাবু? আমৃত্যু সিপিএমের রাজ্যকমিটির সম্পাদক। দৃঢ় সংগঠকও বটে। তিনি দ্রোণাচার্য হলে বুদ্ধ ছিলেন একলব্য। গুরুদক্ষিণাও তিনি দিয়েছিলেন বৈ কী! মনে পড়ে যায়, রোগশয্যায় একটি বই লিখেছিলেন বুদ্ধবাবু। ‘স্বর্গের নীচে মহাবিশৃঙ্খলা।’ বইটি উৎসর্গ করেছিলেন প্রমোদ দাশগুপ্তকে। প্রমোদ ছিলেন সংগঠনের মুখ। আর পরে, সেই মুখ বানাতে চেয়েছিলেন বুদ্ধদেবকে। সেই বুদ্ধই পরে হয়ে উঠেছিলেন সংগঠন শুধু না, সরকারেরও মুখ। বামেদের স্বর্ণযুগ বলে যদি কিছু থেকে থাকে, তা এসেছিল বুদ্ধদেবের হাত ধরে। পাশে থেকেছেন অনিল বিশ্বাস। সঙ্গে ছিলেন আরও তিনজন। সুভাষ চক্রবর্তী, শ্যামল চক্রবর্তী, বিমান বসু।
advertisement
প্রমোদবাবু ঠিক সময়েই বুঝেছিলেন রাজ্যে লালদুর্গের ইটগাঁথা শুরু করা দরকার। তাঁর অসীম দূরদর্শিতা আর বিচক্ষণতা তাঁকে বুঝিয়ে দিয়েছিল ভবিষ্যতে যখন তিনি বা জ্যোতি বসু থাকবেন না, তখন পার্টি চালাবেন অনিল বিশ্বাস আর সরকার চালাবেন বুদ্ধদেব। সেখানেই তৈরি হয়েছিল বুদ্ধ-জমানার ভিত্তি-প্রস্তর।
advertisement
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সক্রিয় রাজনীতিতে হাতেখড়ি খাদ্য আন্দোলন দিয়ে। তার আগে প্রেসিডেন্সি থেকে সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা। না, ছাত্র রাজনীতির ময়দানে লড়াই তিনি করেননি। ১৯৬৬ সালে সিপিএমে যোগ। ঠিক দু-বছর পরেই পশ্চিমবঙ্গের দ্য ডেমোক্রেটিক ইউথ ফেডারেশনের সেক্রেটারি হিসেবে নির্বাচন। এরপর তিনি হলেন সিপিএমের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য।
advertisement
এরপর পশ্চিমবঙ্গ প্রবেশ করল নতুন এক পর্বে। ১৯৭৭। রাজ্যে বামফ্রন্টের দায়িত্বগ্রহণ। সাধারণ মানুষ আঁকড়ে ধরল এক লাল পতাকা। ৭৭-এর নির্বাচনে কাশীপুরের বিধায়ক নির্বাচিত হলেন বুদ্ধবাবু। দায়িত্ব মিলল তথ্য-সংস্কৃতি বিভাগের। ১৯৮২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হন বুদ্ধদেব। তারপর ১৯৮৭-তে পেলেন পুরো ও নগরোন্নয়নের দায়িত্ব। দীর্ঘ ২৪ বছর যাদবপুরে বিধায়ক হিসাবে রাজ করেছেন বুদ্ধদেব।
advertisement
১৯৯৯। জ্যোতিবাবু অসুস্থ। উপমুখ্যমন্ত্রী হলেন বুদ্ধদেব। ২০০০ সালের ৬ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে প্রথম অধিষ্ঠান। সেই চেয়ার থেকে আর অবতরণ হল না। ২০০১-এর ১৮ মে ১৩তম পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন। ২০০৬ সালেও এল প্রবল জয়। সেই জয়ের ইতিহাস আজও সারা বঙ্গবাসীর গায়ে কাঁটা দেয়। ২৩৫! রাজ্য জুড়ে সেদিন শুধু লাল-রং আর লাল আবির। রেকর্ড আসন জিতে সপ্তমবার সরকার গঠন। জয়গাথা এখানেই শেষ।
advertisement
বামদুর্গ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ায় কতটা দায়ী ছিলেন বুদ্ধদেব?
রাজ্যজুড়ে দানা বাঁধছে সন্ত্রাস, অসন্তোষ। সিঙ্গুরে টাটাদের কারখানার জমি অধিগ্রহণ চলছে। দিনের পর দিন অনশনে বসছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্রমশ মারমুখী হচ্ছে আন্দোলন। রাজনীতির কারবারিরা জানাচ্ছেন, বুদ্ধবাবু আলোচনার টেবিলে যখন এলেন তখন বোধহয় অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। যে কথা এখনও ঘুরপাক খায় মানুষের মুখে মুখে। অভেদ্য জালে মোড়া লাল দুর্গে তিনি এনেছিলেন তারুণ্যের হাওয়া। যেই বামের আশা ভরসা ছিল কৃষি, সেখানে শিল্প গড়ার ভাবনাতেই কি কাল হল? নাকি রাজ্যের প্রধান বিরোধী নেত্রীর প্রতি তাঁর সহকর্মীদের কুৎসিত আক্রমণে তাঁর নীরবতা, বাংলার মানুষকে ভাবাল আরও একবার? সেটাই বোধ হয় কাল হয়েছিল। নাকি ঘুণটা ধরেছিল ৩৪ বছর ধরেই? এই পতন শুধু সেটুকুরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র?
advertisement
রাজ্যজুড়ে শিল্পায়নের স্বপ্ন দেখেছিলেন বুদ্ধদেব। আর এই কৃষি-বনাম শিল্পের যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল, সেই আগুনে ঘি ঢেলেছিল সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম। রাজনীতির অঙ্গনে উঠে এসেছিলেন লড়াকু এক নেত্রী। ফাঁকা পড়ে থাকেনি ক্ষমতার মসনদ। রাজা বদলেছে, বদলেছে রাজত্বের মানচিত্র। সক্রিয় রাজনীতির অলিন্দ থেকে বুদ্ধদেব ততদিনে নিজেকে তিনি সরিয়ে নিয়েছেন শত হস্ত দূরে। তাঁর দল পিছিয়ে পড়ল ক্রমশ। তারপর কিয়দংশে নিশ্চিহ্নই হয়ে গেল। তবু সেই সাদা ধুতি আর সাদা পাঞ্জাবী পরা মানুষটা শেষ দিন পর্যন্ত চেয়ে এসেছেন শুধু শিল্প আর সংস্থান। পাম এভিনিউয়ের ছিমছাম, সাদামাটা, দু-কামরার আবাসনে বসে শেষ দিন পর্যন্ত তিনি বিশ্বাস করেছেন, মানুষের ভাবনা বদলাবে। ক্ষমতা হারানোর আট বছর পরেও ধুঁকতে থাকা বাম রাজনীতিতে অক্সিজেন দিতে তিনি পৌঁছেছিলেন ব্রিগেডে। মুখে অক্সিজেন নল লাগিয়ে হাত নেড়েছিলেন গাড়ি থেকেই। তাঁকে দেখার পর তাঁরই কমরেডদের প্রতিক্রিয়া চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল, বামেদের একমাত্র মুখ আজও, এখনও তিনি। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার ছাড়ার দশ বছরের মধ্যে মহাকরণ ছাড়তে হয়েছে বামেদের। তাঁর বিকল্প মুখ যে আর তৈরি করতে পারেনি বামেরা, তা প্রমাণ হয়েছে বারবার। পতন-অভ্যুদয়-বন্ধুর পন্থায় প্রতি মুহূর্তে তিনিই রয়ে গিয়েছেন বামেদের সংকট-দুঃখ ত্রাতা।
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
Kolkata,Kolkata,West Bengal
First Published :
August 08, 2024 2:02 PM IST