কলকাতা: নবান্নের বিরুদ্ধে ২.৩ লক্ষ কোটি টাকার হিসেব চেয়ে করা জনস্বার্থ মামলায় নতুন মোড় নিল মঙ্গলবার। তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত সরকার আঙুল তুলল ৩৪ বছরের বাম সরকারের দিকে৷ ব্যবহারিক শংসাপত্র (ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট) ছাড়া হিসেব ২০০২ সাল থেকেই হয়ে আসছে। নতুন কিছু নয়। এদিন চাঁছাছোলা ভাবে তীক্ষ্ণ সওয়ালে আক্রমণ শানালেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়।
তাঁর কথায়, ক্যাগ রিপোর্ট রাজভবন ঘুরে পৌঁছয় বিধানসভায়। তারপর তা যায় পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটিতে। CBI তদন্ত চেয়ে করা বিজেপি সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের করা জনস্বার্থ মামলায় সঠিক ন্যায়বিচার করতে হলে রাজ্যের বিধানসভাকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন রাখেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল।
প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব রাজ্যের কাছে জানতে চান, পিএসি-তে কী হয় তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে তবে আদালতকে ? না কি, সরাসরি সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সেখান থেকে রিপোর্ট চাইবে আদালত? অন্য দিকে, এই মামলায় আদালত নির্দেশ দিলে আর্থিক অনিয়ম হয়েছে কি না তার প্রাথমিক অনুসন্ধান করতে প্রস্তুত বলে জানায় এদিন সিবিআই আইনজীবী কেন্দ্রের ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল বিল্বদল ভট্টাচার্য। আগামী সপ্তাহে আবার এই মামলার শুনানি।
কেন্দ্রের পাঠানো টাকায় আর্থিক অনিয়ম হয়েছে এই অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়-সহ তিন ব্যক্তি। মামলকারীদের অভিযোগ, প্রায় ২ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকার হিসাব দিতে পারছে না রাজ্য সরকার। বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ৩১ মার্চ ক্যাগের রিপোর্টে ওই অসঙ্গতির কথা উল্লিখিম রয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের পাঠানো টাকার নয়ছয় হয়েছে।
মামলকারীদের দাবি, ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় অর্থ খরচের কোনও ব্যবহারিক শংসাপত্র (ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট) প্রকাশ করেনি রাজ্য। পরের বছরগুলির শংসাপত্র ২০২২ সালের মার্চ মাসে এক সঙ্গে প্রকাশ করা হয়। যদিও নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি আর্থিক বছরে ব্যবহারিক শংসাপত্র প্রকাশ করা উচিত।
মঙ্গলবার এই মামলায় রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের সওয়ালে তুলে ধরেন," ২০১১ সালের আগেরও শংসাপত্র নেই। ২০০২ সাল থেকে এটা চলছিল। এই মামলা ২০২০-২১ সালের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে করা। সেখানে বিগত বছরগুলির প্রসঙ্গ টানার প্রয়োজন নেই।"
ডিভিশন বেঞ্চের অন্য বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের প্রশ্ন, ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত কেন প্রকাশ করা হয়নি? সেই অর্থের খরচ কী ভাবে হয়েছে? পিএসি-র এ নিয়ে কী সিদ্ধান্ত?উত্তরে এজি বলেন, এই মামলাটি অন্য বছরের। আগে কেন প্রকাশ করা হয়নি তা নিয়ে কোনও নির্দেশ আমার কাছে নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিধানসভার দায়িত্ব প্রশ্ন ওঠে। এমতাবস্থায় আদালত চাইলে বিধানসভাকে মামলায় যুক্ত করতে পারে।
অন্যদিকে, এই জনস্বার্থ মামলাটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। তাঁর যুক্তি, ক্যাগ রাজ্যের কাছে রিপোর্ট জমা দেয় না! ক্যাগের রিপোর্ট যায় রাজভবনে। সেখান থেকে আসে বিধানসভায়। তার পর কোন খাতে কত খরচ হয়েছে বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পিএসি)-তে তা নিয়ে আলোচনা হয়। ২০২০-২১ সালের ক্যাগের রিপোর্ট এখন বিধানসভার পিএসি রয়েছে। এটা এখন একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে চলছে। আদালতের এখন হস্তক্ষেপ করার দরকার নেই।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Calcutta High Court