BJP: পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী চাই না! শাহি বৈঠকের পরই কেন ভোলবদল বিজেপি-র?
- Published by:Debamoy Ghosh
- Reported by:ARUP DUTTA
Last Updated:
অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর দাবি জানল না বিজেপি।
কলকাতা: পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রশ্নে হটাৎই সুর বদল কেন বিজেপির? নাকি এটা কোনও কৌশল? শুক্রবার রাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দলের কোর কমিটির বৈঠকে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে কোনও দাবিই জানাল না বঙ্গ বিজেপি।
পঞ্চায়েত ভোটে আসন সংরক্ষনে গরমিল ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি নিয়ে হাইকোর্টে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সংরক্ষণের নিয়ম নীতি নিয়ে বিরোধী দলনেতার তোলা প্রশ্ন কমিশনকে বিবেচনা করে দেখার কথা বললেও, শুভেন্দুর দাবি মেনে পঞ্চায়েত ভোটে স্থগিতাদেশ দিতে চায়নি হাইকোর্ট। আর, কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিষয়টি নিয়ে আলাদা করে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট।
advertisement
advertisement
হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েও পঞ্চায়েত ভোটে স্থগিতাদেশ আদায় করতে ব্যর্থ হন শুভেন্দু। সুপ্রিম-রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে শুভেন্দু বলেছিলেন, ''সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্টের রায়কেই মান্যতা দিয়েছে। তবে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি আদায় করতে আমি সুপ্রিম কোর্টে মমলা করবেন।" যদিও, এখনও সেই মামলা করেননি শুভেন্দু বা রাজ্য বিজেপি। আর, গতকালের পর মামলা তো দূরস্ত, কমিশনের কাছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি জানানোও বিজেপির কাছে কঠিন হবে বলে মনে করছে দলেরই একাংশ।
advertisement
রাজ্যে দু' দিনের সফরে এসে, শুক্রবার বীরভূৃমে অনুব্রত গড়ে সভা করে কলকাতায় ফেরেন অমিত। গরু পাচার কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়ার পর, অনুব্রত গড়ে সভা করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও নরেন্দ্র মোদির বিশ্বস্ত সেনাপতি অমিত শাহ। সভার শেষে বিজেপির বীরভূম জেলার এক নেতা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, 'বীরভূমে অমিত শাহের সভাকে ঘিরে আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু, সিউড়ির সভা থেকে কেষ্টকে কেন এখনও জেলার সাংগঠনিক দায়িত্বে রাখা হয়েছে তা নিয়ে তৃণমূলকে একটু খোঁচা দেওয়া ছাড়া বিশেষ তোড়ফোড় করলেন না শাহ। সভায় আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রশ্নে বিজেপি কর্মীদের দাবি নিয়ে কোন রা- কাটতে শোনা গেল না। রাজ্যের নেতারা নিশ্চয়ই এর অর্থ বুঝে ভবিষ্যতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়াই করার জন্য আমাদের নির্দেশ দেবেন, এটাই আশা করব।'
advertisement
এরপর, রাতে এয়ারপোর্টের কাছে, একটি পাঁচতারা হোটেলে সুকান্ত, শুভেন্দুকে দু পাশে রেখে রাজ্যের পঞ্চায়েত পূর্ব পরিস্থিতি নিয়ে দলের কোর কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন অমিত। বৈঠকের শেষে, রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, "কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিষয়টি আদালতের এক্তিয়ারে। পঞ্চায়েত ভোট সুষ্ঠু ও অবাধ করতে আদালত কেন্দ্রীয় বাহিনীর অনুমতি দেবে কি না, সেটা তাদের বিষয়ে। এ বিষয়ে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই। সাংসদ এবং রাজ্য পঞ্চায়েত নির্বাচনের লক্ষ্যে গড়া বিশেষ কমিটির আহ্বায়ক, দেবশ্রী চৌধুরী বলেন, 'কেন্দ্রীয় বাহিনী পাওয়া নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। আমাদের দলের নিজস্ব বাহিনী তৃণমূলের সন্ত্রাসের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।' বিধায়ক এবং রাজ্যের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল জানান, তাঁরা কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে আলাদা করে কোন দাবি জানাননি।
advertisement
পঞ্চায়েতে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি নিয়ে সওয়াল করেছিলেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্য নির্বাচন কমিশন তাদের দাবি মেনে না নিলে, আদালতে গিয়ে সেই দাবি আদায় করবেন বলেও জানিয়েছিলেন সুকান্ত, শুভেন্দুরা। কিন্তু গতকাল, শাহের সঙ্গে বৈঠকের পরেই আচমকা ভোলবদল বিজেপির। কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রশ্নে, দলের এই অবস্থান বদল, রাজনৈতিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে পর্যবেক্ষকরা।
advertisement
পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে এই অবস্থান বদল বিজেপির একটি সুচিন্তিত কৌশল হতেই পারে।ওই পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব পঞ্চায়েত নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার বিষয়ে যে প্রতিশ্রুতি দিন না কেন, নিচুতলায় তা ১০০ শতাংশ বাস্তবায়িত করা খুবই কঠিন। ফলে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে অশান্তি ও রক্তপাতের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিকে আদলত মান্যতা দিলে, শাসক দল হয়তো রাজনৈতিকভাবে মেনে না নিলেও, তা নিয়ে বিশেষ কোন জোরাজুরির রাস্তায় নাও যেতে পারত। সেক্ষেত্রে নির্বাচনকে ঘিরে অশান্তি ও গন্ডগোলের দায় সহজেই কেন্দ্রীয় বাহিনী উপর চাপিয়ে রাজনৈতিক ভাবে কেন্দ্রকে নিশানা করতে পারত তৃণমূল।
advertisement
অন্যদিকে, নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকলে, ভোটের অশান্তির জন্য রাজ্য প্রশাসন ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেতে পারবে বিজেপি সহ বিরোধীরা। সেক্ষেত্রে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বড়সড় কোন অশান্তি হলে ২৪- এর লোকসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক ভাবে তার ফায়দা নিতে পারবে বিজেপি সহ বিরোধীরা।
গতকাল অমিত শাহের সভা ও রাজ্যে দু দিনের সফরকে কেন্দ্র করে যে চিত্র উঠে এসেছে তাতে অনেকেই মনে করছেন, বিজেপির আসল লক্ষ্য ২০২৪ -এর লোকসভা নির্বাচন। পঞ্চায়েত নয়। তাই, শাহরা মনে করছেন, দুর্বল সংগঠন নিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে অযথা তৃণমূলের সঙ্গে হানাহানিতে জড়িয়ে পড়ে দলের শক্তিক্ষয় করা ঠিক হবে না। বরং, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে বাইরে থেকে উস্কে দিয়ে রাজনৈতিক লাভ ওঠানোই শ্রেয়। হতে পারে, সে কারণেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি নিয়ে, রাজ্য নেতৃত্বকে সেভাবে সক্রিয় হতে নিষেধ করেছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
২৪ এর নির্বাচনে বাংলাকে পাখির চোখ করে ৩৫ আসনের লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছেন অমিত শাহ। রাজনৈতিক মহলের মতে, লোকসভায় ওই লক্ষ্য ছুঁতে গেলে, পঞ্চায়েত ভোটেই তৃণমূলকে কার্যত' দুরমুশ' করতে হবে বিজেপিকে। ২০১১- র বিধানসভায় সিপিএমকে পর্যুদস্ত করার আগে ২০০৮ -এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষ্মিন ২৪ পরগণার জেলা পরিষদ দখল করেছিল তৃণমূল। পুরভোটেও একাধিক পুরসভা বামেদের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল তৃণমূল। ফলে, ২৪- এর লোকসভায় সফল হতে গেলে বিজেপিকে আসন্ন পঞ্চায়েতে ধস নামাতে হবে শাসক দলে। তা না করে, ৩৫ আসনের স্বপ্ন দেখা নিরর্থক। সেক্ষেত্রে, পঞ্চায়েতে বিরোধীদের ভোট দেওয়া নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুরুত্ব যথেষ্টই। তাকে উপেক্ষা করলে আদপে ভুল বার্তা যাবেনা তো?
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
Kolkata,West Bengal
First Published :
April 15, 2023 4:33 PM IST