অজন্তা বিশ্বাসের পর এবার বসুন্ধরা গোস্বামী৷ তৃণমূলের মুখপত্র জাগো বাংলায় এবার উত্তর সম্পাদকীয় লিখলেন প্রয়াত আরএসপি নেতা ক্ষিতি গোস্বামীর কন্যা বসুন্ধরা৷ কয়েক দিন আগেই জাগো বাংলায় উত্তর সম্পদাকীয় লিখে সিপিএমের রোষের মুখে পড়তে হয়েছে প্রয়াত অনিল বিশ্বাসের কন্যা অজন্তা বিশ্বাসকে৷ এ দিন অজন্তার পাশে দাঁড়িয়ে সিপিএম-কে সরাসরি স্টালিনিস্ট দল হিসেবেও সমালোচনা করেছেন বসুন্ধরা৷
তৃণমূলের মুখপত্রে লেখা নিয়ে সিপিএমের তরফে অজন্তাকে শাস্তি দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়েই এ দিন জাগো বাংলায় উত্তর সম্পাদকীয় লিখেছেন বসুন্ধরা৷ অজন্তাকে শাস্তি দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় সিপিএমের উপরে নিজের বিরক্তি স্পষ্ট করে দিয়েছেন ক্ষিতি গোস্বামীর কন্যা৷ পেশায় মনস্তত্ত্ববিদ বসুন্ধরা লিখেছেন, 'ইতিহাসের অধ্যাপিকা অজন্তা বিশ্বাস 'জাগো বাংলায়' একটি লেখা লিখেছেন৷ বিষয় বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তি৷ এই লেখাটির পর মিডিয়ায় দেখছি সিপিএমের তরফ থেকে অজন্তাকে আক্রমণ করা হচ্ছে৷ শোকজ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এসব বলা হচ্ছে৷ এইসব দেখে আমি বিস্মিত হয়ে যাচ্ছি৷'
বসুন্ধরার মতে, ইতিহাসের অধ্যাপিকা হিসেবে অজন্তা একটি 'সুন্দর এবং তথ্যসমৃদ্ধ' লেখা লিখেছেন৷ তাঁর কথায়, 'অজন্তার লেখায় দলমত নির্বিশেষে সবার সম্পর্কে সশ্রদ্ধ উল্লেখ রয়েছে৷ বামপন্থী নেত্রীদের কথাও রয়েছে৷ আর এটা বাস্তব যে বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তি নিয়ে লেখা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছাড়া সম্পূর্ণ হতে পারে না৷ অজন্তা এটা লিখে কোনও ভুল করেননি৷' বসুন্ধরার মতে, অজন্তার লেখায় বামপন্থীদের অংশ অটুট রেখে জাগো বাংলার সম্পাদকীয় বিভাগও উদারতার পরিচয় দিয়েছে৷ এর পরই সিপিএমকে বিঁধে বসুন্ধরা লিখেছেন, 'এ নিয়ে অজন্তাকে সিপিএমের আক্রমণ দেখে বলতে বাধ্য হচ্ছি ওরা স্টালিনিস্ট দল৷ ব্যক্তি স্বাধীনতায় ওরা বিশ্বাস করে না৷ ওকা কণ্ঠরোধ করে৷ ওরা স্বাধীন মত প্রকাশের বিরুদ্ধে৷ তৃণমূলের মুখপত্রে যদি অধ্যাপিকা অজন্তা বামপন্থী নেত্রী থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সকলের কথা লিখে থাকেন তাহলে অন্যায় কোথায়?'
বসুন্ধরার অভিযোগ, সিপিএম নেতৃত্বের এ হেন আচরণই বহু প্রতিভাকে বামফ্রন্টের স্রোত থেকে সরে যেতে বাধ্য করছে৷
প্রসঙ্গত, জাগো বাংলায় উত্তর সম্পাদকীয় লেখার কারণে সিপিএমের অন্দরেই অজন্তা বিশ্বাসকে শাস্তি দেওয়ার দাবি উঠেছে৷ সিপিএমের অধ্যাপক সংগঠন জুটা-র তরফে তাঁকে শোকজও করা হয়েছে৷ অজন্তাকে যে শাস্তির মুখে পড়তে হবে, সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন৷
আর সিপিএমের নেতাদের এই মনোভাবকেই কার্যত তুলোধনা করেছেন বসুন্ধরা৷ অজন্তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সিপিএম নেতাদের আক্রমণ করে বসুন্ধরা জাগো বাংলার পাতায় লিখেছেন, 'ওরা সবেতে চক্রান্তের গন্ধ পায়৷ বদনাম দেয়৷ তারপর শাস্তির পথে যায়৷ এই খেলা মানুষ ধরে ফেলেছেন৷ প্রকৃত বাম মনোভাবাপন্ন স্বাধীনচেতা মানুষ কোনও অবস্থায় এটা মানবেন না৷ এই করতে করতে বামফ্রন্টকে সব দিক থেকে শূন্যে নামিয়েছে সিপিএম৷ তাতেও শিক্ষা হয়নি৷ '
বিধানসভায় বামদের শূন্য হওয়ার জন্য সরাসরি সিপিএম-কেই দায়ী করেছেন অজন্তা৷ সিপিএম নেতাদের জনবিচ্ছিন্ন বলে দাবি করে তিনি লিখেছেন, বিজেপি-র বিরুদ্ধে মানুষ তৃণমূলের উপরেই আস্থা রেখেছেন৷ বসুন্ধরার কথায়, 'এটাই বাস্তব৷ আর সেই সময়ে স্টালিনীয় কায়দায় জনবিচ্ছিন্ন সিপিএম নেতারা অজন্তা বিশ্বাসের একটি নিরপেক্ষ লেখা নিয়ে অনুশাসনের নামে কূপমণ্ডুকের মতো রাজনীতি করতে ব্যস্ত৷ চিন্তাভাবনাকে জনমুখী সময়োপযোগী করার কোনও চেষ্টা সিপিএমের নেই৷'
তাঁর বাবার বাম সরকারে দীর্ঘ সময় মন্ত্রী থাকা এবং সামনে থেকে বামফ্রন্টকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথাও নিজের লেখায় উল্লেখ করেছেন বসুন্ধরা৷ একই সঙ্গে অবশ্য তিনি দাবি করেছেন, বাম নেতৃত্বের আপত্তিকর মানসিকতার জন্য পরবর্তী সময়ে তাঁদের অভিজ্ঞতাও ভাল হয়নি৷ অজন্তা বিশ্বাসকে নিয়ে সিপিএম নেতৃত্বের অতি সক্রিয়তার সরাসরি প্রতিবাদ করেছেন বসুন্ধরা৷ তাঁর অভিযোগ, এই ধরনের মানসিকতা এবং কাণ্ড কারখানায় বাংলায় বামপন্থী শক্তিকে শেষ করেছে সিপিএম৷ লেখার একেবারে শেষ দিকে অজন্তা জানিয়েছেন, 'এখনও সেই আত্মঘাতী প্রক্রিয় চলছে৷ সময় প্রমাণ করবে এসবে সিপিএম-এরই ক্ষতি৷ অজন্তারা কিন্তু মাথা উঁচু করেই কাজে ফিরবেন৷'
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Ajanta Biswas