বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম রক্তদানের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু! প্রস্তুতি চলবে ল্য়াবেই
Last Updated:
রক্তের আকাল ঠেকাতে এ-বার ল্যাবেই তৈরি করা হচ্ছে রক্ত। আর তা মানুষের শরীরে ইতিমধ্যেই প্রবেশ করানো হয়েছে।
রক্তের আকাল ঠেকাতে এ-বার ল্যাবেই তৈরি করা হচ্ছে রক্ত। আর তা মানুষের শরীরে ইতিমধ্যেই প্রবেশ করানো হয়েছে। আর এটাই বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম রক্তদানের ক্লিনিকাল ট্রায়াল। এমনটাই দাবি করেছেন ব্রিটেনের গবেষকরা। খুবই স্বল্প পরিমাণে, আরও সহজ ভাবে বলতে গেলে মাত্র দুই চামচ রক্ত নিয়েই এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে। আর মানুষের দেহে ল্যাবে তৈরি রক্ত সঠিক ভাবে কাজ করছে কি না, সেটা পরীক্ষা করতেই এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
আসলে রক্তদানের উপরেই সাধারণত নির্ভর করে থাকতে হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় অথচ বিরল ব্লাড গ্রুপের রক্ত সব সময় সব ক্ষেত্রে পাওয়াটা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। সেই সমস্যা যাতে না-হয়, তার জন্যই ল্যাবে বানানো হচ্ছে রক্ত।
শুধু তা-ই নয়, এটা তাঁদের জন্যও খুবই জরুরি একটা বিষয়, যাঁদের সব সময় রক্তদানের উপর নির্ভর করে থাকতে হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, সিকল সেল অ্যানিমিয়া রোগীদের কথাই। যদি রক্ত না-মেলে, তা-হলে দেহ সেই রক্ত গ্রহণ করতে অস্বীকার করে এবং চিকিৎসাও বিফলে যায়।অতিপরিচিত এ, বি, এবি এবং ও ব্লাড গ্রুপের ক্ষেত্রে ততটাও সমস্যা হয় না। কিন্তু কিছু বিরল ব্লাড গ্রুপের ক্ষেত্রে সমস্যা গুরুতর। ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যাশলে টোয়ে জানিয়েছেন যে, কয়েকটি রক্তের গ্রুপ ভীষণই বিরল। হয়তো দেশে এই গ্রুপের রক্তদানে সক্ষম মাত্র ১০ জন মানুষ। বিরলতম ব্লাড গ্রুপের মধ্যে অন্যতম বম্বে ব্লাড গ্রুপ। যা সর্বপ্রথম চিহ্নিত করা হয়েছিল আমাদের দেশেই। এই শ্রেণীর রক্ত গোটা ব্রিটেনের স্টকে রয়েছে মাত্র তিন ইউনিট।
advertisement
advertisement
কী ভাবে তৈরি করা হয়েছে এই রক্ত?
এই গবেষণা প্রকল্পে যোগ দিয়েছে ব্রিস্টল, কেমব্রিজ, লন্ডন এবং এনএইচএস ব্লাড অ্যান্ড ট্রান্সপ্ল্যান্টের বিভিন্ন গবেষক দল। মূলত এই গবেষণার লক্ষ্য ছিল দেহের লোহিত রক্তকণিকাগুলি, যা ফুসফুস থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করে গোটা দেহে।
advertisement
কীভাবে তা কাজ করে?
সাধারণ রক্তদানের মাধ্যমেই বিষয়টা শুরু হয়। যার পরিমাণ হচ্ছে প্রায় ৪৭০ মিলিলিটার।
এর পর লোহিত রক্তকণিকা হয়ে উঠতে সক্ষম, এমন নমনীয় স্টেম সেল খুঁজে বার করতে ব্যবহার করা হয় ম্যাগনেটিক বিডস।
আর ল্যাবে এই ধরনের স্টেম সেল বাড়ানো হয়ে থাকে।
এ-বার সেই স্টেম সেল থেকেই লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করা হয়।
advertisement
এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগে প্রায় তিন সপ্তাহ। প্রাথমিক ভাবে আধ মিলিয়ন স্টেম সেল থেকে তৈরি করা হয় প্রায় ৫০ বিলিয়ন লোহিত রক্ত কণিকা।
এর পর তা ফিল্টার করে প্রায় ১৫ বিলিয়ন লোহিত রক্তকণিকা বার করা হয়। যা ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য একেবারে প্রস্তুত।
অধ্যাপক টোয়ে জানিয়েছেন এই প্রসঙ্গে, "এই ভাবে ভবিষ্যতে আমরা যত বেশি সম্ভব রক্ত উৎপাদন করতে চাই। আর সাধারণ রক্তদানের মাধ্যমেই অনবরত ভাবে বিভিন্ন মেশিনের মাধ্যমে এই রক্তের উৎপাদন বাড়াতে হবে।"
advertisement
ইতিমধ্যেই প্রথম দুজন ইচ্ছুক ব্যক্তি এই ট্রায়ালে অংশগ্রহণ করেছেন। অবশ্য ১০ জন সুস্থ ভলান্টিয়ারের উপরে এই ল্যাবে উৎপন্ন রক্ত পরীক্ষা করার কথা ভাবছে ওই গবেষক দলটি। এ-ক্ষেত্রে দু বার চার মাস অন্তর ৫-১০ মিলিলিটার রক্ত দেওয়া হবে এই ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীদের। এক বার দেওয়া হবে সাধারণ রক্ত, আর দ্বিতীয় বার দেওয়া হবে ল্যাবে তৈরি রক্ত।
advertisement
ওই রক্তের সঙ্গে থাকবে একটি রেডিওঅ্যাকটিভ বা তেজস্ক্রিয় উপাদান। যা সাধারণত কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আসলে ওই রক্ত শরীরে কতক্ষণ থাকছে, তা এই উপাদানের মাধ্যমে দেখতে পাবেন বিজ্ঞানীরা। এমনকী গবেষকদের বিশ্বাস যে, সাধারণ রক্তের তুলনায় ল্যাবে তৈরি রক্ত বেশি শক্তিশালী।
প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হওয়ার আগে সাধারণত ১২০ দিন স্থায়ী হয় লোহিত রক্তকণিকা। এমনিতে সাধারণ ভাবে দান করা রক্তের মধ্যে থাকে নতুন এবং পুরনো লোহিত রক্তকণিকা মিশ্রিত থাকে। সেখানে ল্যাবে প্রস্তুত লোহিত রক্তকণিকা নতুন ভাবে তৈরি হয়, যা পুরোপুরি ১২০ দিন স্থায়ী হয়। গবেষকরা এ-ও সন্দেহ করছেন যে, এর ফলে ভবিষ্যতে ছোট এবং ঘন-ঘন রক্তদানেও সুবিধা হবে।
advertisement
এ-ছাড়াও রয়েছে কিছু যথেষ্ট আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জও। রক্ত উৎপাদনের খরচ কিন্তু অনেকটাই বেশি। তবে গবেষক দলটি এই খরচ ঠিক কত হবে, সেটা এখনও পর্যন্ত জানায়নি। শুধু তা-ই নয়, রয়েছে আর একটা চ্যালেঞ্জও। সেটা হ - সংগৃহীত স্টেম সেলগুলি ধীরে ধীরে নিজে থেকেই নিঃশেষ হয়ে যায়। যা উৎপন্ন রক্তের পরিমাণ সীমিত করে দেয়। আরও বেশি পরিমাণে ক্লিনিক্যাল কাজে ব্যবহৃত রক্ত উৎপাদন করার জন্য অনেকটা গবেষণা চালাতে হবে।
এনএইচএস ব্লাড অ্যান্ড ট্রান্সপ্ল্যান্ট-এর মেডিকেল ডিরেক্টর অফ ট্রান্সফিউশন ডা. ফারুক শাহ-এর বক্তব্য, “এই যুগান্তকারী গবেষণাটি লোহিত রক্তকণিকা তৈরির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করল। যা সিকল সেল অ্যানিমিয়ার মতো রোগাক্রান্তদের শরীরে স্থাপন করা যাবে।”
দেশের সব লেটেস্ট খবর ( National News in Bengali ) এবং বিদেশের সব খবর ( World News in Bengali ) পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং টপ হেডলাইন নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ ডাউনলোড করুন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
First Published :
November 07, 2022 9:13 PM IST