North Korea News: রহস্যে ঘেরা উত্তর কোরিয়ায় চার দিন, কী অভিজ্ঞতা হল ভারতীয় ব্লগারের? ফেরার আগে বেড়ে গেল রক্তচাপ
- Published by:Debamoy Ghosh
- news18 bangla
Last Updated:
বাকি পৃথিবীর কাছে উত্তর কোরিয়া মানেই রহস্য৷ গোটা বিশ্বের থেকে কার্যত নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে একনায়ক কিম জং উনের দেশ৷ ফলে উত্তর কোরিয়ার ভিতরে ঠিক কী চলে, সেখানকার মানুষ কীভাবে বেঁচে আছেন, সত্যিই কতটা স্বৈরাচারী দেশের সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন,তা নিয়ে গোটা পৃথিবীরই কৌতূহল রয়েছে৷
সেই উত্তর কোররিয়াতেই চার দিন কাটানোর সুযোগ হল ভারতীয় এক ট্রাভেল ব্লগারের৷ উত্তর কোরিয়ায় চার দিন কাটানোর সেই অভিজ্ঞতাই নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ভাগ করে নিয়েছেন তিনি৷
ভারতীয় ওই ট্রাভেল ব্লগারের নাম ভুবানি ধরন৷ তিনি জানাচ্ছেন উত্তর কোরিয়ায় পা দেওয়ার পরেই কয়েকটি কথা তাঁদের ভাল ভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ সেগুলি হল, কোথাও একা যাওয়া যাবে না৷ সেনাবাহিনীর কোনও সদস্যের ছবি, ভিডিও করা যাবে না৷ অশ্লীল বা খারাপ কোনও বার্তা দেয় এমন কিছু ক্যামেরাবন্দি করা যাবে না৷ কেউ কঠোর পরিশ্রম করছেন, এমন ছবিও তোলা যাবে না৷ উত্তর কোরিয়া না বলে সবসময় গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া বা ডিপিআরকে বলতে হবে৷ আর শেষ এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, দেশের শাসক কিম জং উন সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে৷
advertisement
advertisement
করোনা অতিমারির পর পাঁচ বছরের জন্য বহির্বিশ্বের জন্য নিজেদের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল উত্তর কোরিয়া৷ সেই নিষেধাজ্ঞা ওঠার পর প্রথম যে ২২ জন বিদেশি পর্যটক এবং ট্রাভেল ব্লগারদের দল উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশের অনুমতি পান, তাঁদের মধ্যে ছিলেন ভুবানি ধরন৷ ৩ মার্চ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ায় ছিল এই দলটি৷ তার পর ফের আবার বিদেশিদের প্রবেশের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে উত্তর কোরিয়া৷
advertisement
ভুবানি জানিয়েছেন, বিমানে প্রথমে চিনের ইয়ানজি শহরে পৌঁছন তাঁরা৷ তার পর সেখান থেকে একটি বাসে উত্তর কোরিয়ার রাসন শহরের উদ্দেশ্যে তাঁরা রওনা দেন৷ কারণ উত্তর কোরিয়ার ওই শহরটিতে কোনও বিমানবন্দর নেই৷ ২২ জনের ওই দলে ভুবানি ছাড়াও আরও একজন ভারতীয় ছিলেন৷
advertisement
সীমান্ত পেরিয়ে উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশের পর থেকেই কড়া নজরদারির আওতায় চলে আসেন তাঁরা৷ সর্বক্ষণের জন্য তাঁদের সঙ্গে দু জন সরকার নিযুক্ত গাইডকে দিয়ে দেওয়া হয়, যাঁরা ইংরেজিতে সাবলীল৷ উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশের পরই সেনাবাহিনী তন্ন তন্ন করে ওই পর্যটক দলটির সঙ্গে থাকা মালপত্রের তল্লাশি চালায়৷ বিশেষত পর্যটকদের সঙ্গে থাকা ইলেক্ট্রিক সরঞ্জামগুলি খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হয়৷ জিপিএস ডিভাইস, কোনও ধর্মীয় গ্রন্থ অথবা পর্নোগ্রাফিক কোনও বই বা ম্যাগাজিন পর্যটক দলটির সঙ্গে আছে কি না, তা ভাল ভাবে দেখে নেওয়া হয়৷ কারণ এই জিনিসগুলি উত্তর কোরিয়াতে নিষিদ্ধ৷ এই পরীক্ষা নিরীক্ষার পরই ভূবানির পাসপোর্টে উত্তর কোরিয়ার স্ট্যাম্প পড়ে৷ যে সুযোগ বিশ্বের খুব মানুষেরই হয়েছে৷ কারণ বিদেশিদের পাসপোর্টে নিজেদের স্ট্যাম্প মারাও বন্ধ ছিল উত্তর কোরিয়ায়৷
advertisement
উত্তর কোরিয়ায় থাকাকালীন সবকিছুই ভীষণ সাজানো এবং চাপিয়ে দেওয়া বলে মনে হয়েছে ওই ট্রাভেল ব্লগারের৷ রাসনে পৌঁছনোর পর প্রথমে হোটেলে না নিয়ে গিয়ে তাঁদের একটি মিনারেল ওয়াটার তৈরির প্ল্যান্টে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানকার জল তাঁদের পান করানো হয়৷ কিন্তু বিশাল ওই কারখানায় মাত্র দু জন কর্মী চোখে পড়ে ভারতীয় ওই ট্রাভেল ব্লগারের৷
advertisement
আরও মজার বিষয় হল, ওই ট্রাভেল ব্লগারের মনে হয়েছে, রাসন শহরে থাকাকালীন যে জায়গাগুলিতে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়, সেগুলি যথেষ্ট কাছাকাছির মধ্যে হলেও অনেকটা ঘুরিয়ে তাঁদের সেখানে নিয়েয যাওয়া হয়৷ যাতে ওই পর্যটকদের মনে হয় তাঁরা অনেক দূরে কোথাও যাচ্ছেন৷
ওই চারদিনের মধ্যে পর্যটকদের এই দলটিকে মিউজিয়াম, ডিয়ার পার্ক, কয়েকটি কারখানা, স্কুল, শিক্ষাকেন্দ্রের ভিতরে থাকা আদালত কক্ষ- এসবই ঘুরিয়ে দেখানো হয়৷ অন্যান্য দেশে অত্যন্ত সাধারণ জিনিসগুলিই উত্তর কোরিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং গর্বের বলে ধরে নেওয়া হয়৷
advertisement
এরকমই একটি স্কুলে গিয়েও অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে এই ভারতীয় ট্রাভেল ব্লগারের চোখে৷ তাঁদের ওই স্কুলের একটি মাত্র ক্লাসে নিয়ে গিয়ে শিক্ষক এবং পড়ুয়াদের সঙ্গে আলাপ করানো হয়৷ অন্য কোনও ক্লাসেই এই পর্যটকদের নিয়ে যাওয়া হয়নি৷ আবার স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠানও উপস্থাপন করা হয় এই বিদেশি অতিথিদের সামনে৷ তখনও ওই খুদে পড়ুয়াদে চোখেমুখে কোনও আনন্দ দেখতে পাননি ওই ভারতীয় ব্লগার৷
শুধু তাই নয়, যখনই স্থানীয় যে দু একজনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের ভারত সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করলেই প্রত্যেকে বাহুবলি সিনেমার কথা বলেছেন৷ ভুবানির মনে হয়েছে, উত্তর কোরিয়ায় বিদেশি সিনেমা দেখার সুযোগ রয়েছে, সেটা বোঝাতেই এই চেষ্টা করা হয়েছে৷
আবার হোটেলেও তাঁদের যে খাবার পরিবেশ করা হত, সেগুলি খেতে ঠিকঠাক হলেও একেবারে ঠান্ডা থাকত৷ ওই ফুড ব্লগারের মতে, সম্ভবত ওই খাবারগুলি অন্য কোথাও রান্না করে তাঁদের কাছে নিয়ে আসা হত৷ কারণ হোটেলে খাবার রান্না করলে তা অতটা ঠান্ডা হওয়ার কথা নয়৷
যে হোটেলে তাধের রাখা হয়েছিল, সেটির ঘরে ছোট্ট একটি জানলা ছিল৷ সেখান দিয়েই ভুবানি বাইরের দৃশ্য দেখার চেষ্টা করতেন৷ তাঁর কথায়, রাত হলেই রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যেত৷ আবার ভোর হতে না হতেই কয়েকজন এসে একই ধরনের কাজ রোজ করতে শুরু করতেন৷
ঘোরার ফাঁকে একবার এই বিদেশি পর্যটকদের কিম জং উনের মূর্তি দেখাতেও নিয়ে যাওয়া হয়৷ আগে থেকেই তাঁদের বলে দেওয়া হয়েছিল, যদি কিম জং উনকে প্রকৃত সম্মান না দেখাতে পারেন, তাহলে যেন কেউ বাস থেকে না নামেন৷ মূর্তির সামনে গিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য পর্যটকদের প্লাস্টিকের ফুল কিনতে হয়৷ সেই ফুল মূর্তির নীচে রেখে সামনে ঝুঁকে কিম জং উনকে সম্মান জানাতে হয়েছিল বিদেশি পর্যটকদের৷
উত্তর কোরিয়ায় থাকাকালীন বাঘের হাড়, ভল্লুকের হাড় এবং মরা সাপ দিয়ে তৈরি মদ খেয়ে দেখার সুযোগ এসেছিল ওই পর্যটকদের সামনে৷ যদিও ভুবানি আর তা চেখে দেখার সাহস করেননি৷
উত্তর কোরিয়া ঘুরতে ভারতীয় এই ট্রাভেল ব্লগারের সবমিলিয়ে ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়৷ তার মধ্যে উত্তর কোরিয়া যাওয়া, থাকাখাওয়া, ঘোরার জন্য খরচ হয় ১ থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা৷ বাকি টাকা খরচ হয় বিরল মদ, স্মারক, উত্তর কোরিয়ার দামি পোস্টকার্ড কিনতে৷ উত্তর কোরিয়া থেকেই নিজের পরিবার এবং বন্ধুদের চারটি পোস্টকার্ড পাঠান ওই ভারতীয় ব্লগার৷ উত্তর কোরিয়ার এটিএম কার্ড নিতেও তাঁকে মোটা টাকা জমা দিতে হয়৷ যদিও কোনও এটিএম দেখতে না পাওয়ায় সেই কার্ড আর ব্যবহারই করতে পারেননি ভুবানি৷
উত্তর কোরিয়ায় থাকাকালীন গোটা সময়টাই বহির্বিশ্বের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ছিল না এই পর্যটকদের৷ কিন্তু সফরের একেবারে শেষ দিনে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে চিন এবং রাশিয়ার সীমান্ত এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানে কিছুক্ষণের জন্য মোবাইলে সিগন্যাল আসে৷ তখনই তিনি মোবাইল আসা নিউজ অ্যালার্টে দেখেন, ফের উত্তর কোরিয়ায় বিদেশিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে৷ এই খবর দেখেই নিজেদের ফিরে আসা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে পর্যটকদের দলটি৷ যদিও তাঁদের জানানো হয়, নির্ধারিত সূচি মেনেই উত্তর কোরিয়া ছাড়তে পারবেন তাঁরা৷
Location :
Kolkata,West Bengal
First Published :
July 12, 2025 9:15 PM IST