Sri Lanka: সঙ্কটকালে পড়শি শ্রীলঙ্কাকে নজিরবিহীন সাহায্য ভারতের! চিনা প্রভাব কাটাতেই এই পদক্ষেপ, মত বিশেষজ্ঞদের
- Published by:Uddalak B
Last Updated:
Sri Lanka: চলতি বছরের মার্চ মাসে ভারতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ওই দ্বীপ-রাষ্ট্রে একটি সৌরশক্তির প্ল্যান্ট গড়ে তোলার উদ্যোগ চূড়ান্ত করেছিল শ্রীলঙ্কা।
#নয়াদিল্লি: ঋণের বোঝায় জর্জরিত দ্বীপ-রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা (Sri Lanka)। শপথ নেওয়ার দুই মাসের মধ্যেই পদত্যাগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন সে-দেশের প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে (Ranil Wickramasinghe)। এই চরম সঙ্কটের (Crisis) কালে বেপাত্তা দেশের প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষ (Gotabaya Rajapaksa)-ও। ধীরে ধীরে এই অর্থনৈতিক সঙ্কট চরমে পৌঁছচ্ছে। বিক্ষোভে ফুঁসছে গোটা দেশ। আর এই সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতে রবিবার নিজেদের প্রতিবেশীর পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে ভারত। শুধু তা-ই নয়, ঋণের দায়ে জর্জরিত দ্বীপরাষ্ট্রের মানুষদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক।
রবিবার বিদেশ মন্ত্রকের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে যে, এই দ্বীপ-রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এই দুর্দশা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিক্ষোভের আগুনে ফুঁসছে গোটা দেশের মানুষ। তার জন্য এই সপ্তাহ থেকে ফের শুরু হয়েছে প্রতিবাদ। এই সঙ্কট প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি (Arindam Bagchi) বলেন, শ্রীলঙ্কার দিকে ভারত নজিরবিহীন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। শ্রীলঙ্কা যাতে এই সঙ্কট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারে ৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্য দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
advertisement
স্বাধীনতার পর থেকে বোধহয় সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে শ্রীলঙ্কা। ফুরিয়ে আসছে জ্বালানি। মুদ্রাস্ফীতিও আকাশছোঁয়া। কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করেছে। আর পড়শির এমন সঙ্কট দেখে উদ্বেগে রয়েছে ভারত। সঙ্কটের প্রথম থেকেই সাধ্যমতো সাহায্যের চেষ্টাও করে গিয়েছে তারা। ৫০০ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য ১ বিলিয়ন ডলার সাহায্য পাঠিয়েছিল ভারত (India)। যদিও ভারতের পাঠানো সাহায্যের প্রভাব সে-ভাবে দেখা যায়নি। আসলে এই দ্বীপ-রাষ্ট্রের উপর চিনের চাপিয়ে দেওয়া ঋণের বোঝা এতটাই ছিল যে, ভারতের সাহায্যও সেখানে ফিকে হয়ে গিয়েছে। গত কয়েক বছরে শ্রীলঙ্কার উপর চিন যে-ভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল, তার থেকে ওই দেশকে মুক্ত করার অনুমতি নয়াদিল্লিকে দেওয়া হয়েছিল।
advertisement
advertisement
আরও পড়ুন - নিখোঁজ ছিলেন বাবা, খোঁজ মিলল বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কে! দুই ছেলের কীর্তিতে থ সবং
গত মে মাসে শ্রীলঙ্কায় সরকার বদলে জনরোষ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আর দু’মাস ধরে পরিস্থিতি কিছুটা থিতিয়ে গেলেও ফের দুদিন ধরে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে শ্রীলঙ্কা। কারণ সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে এই দেশকে ফের দেউলিয়া বলে ঘোষণা করেছেন। আর তার পরেই রাজপথে নেমেছে বিক্ষোভকারীদের ঢল। এই পরিস্থিতি দেখে গা-ঢাকা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। ইতিমধ্যেই তাঁর বাসভবন কবজা করে ফেলেছে আমজনতা। সেই ছবিই এখন ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
advertisement
চিনের ঋণের ফাঁদে শ্রীলঙ্কা:
গোটা এশিয়া এবং আফ্রিকা জুড়ে পরিকাঠামো প্রকল্পগুলিতে অর্থ ঢালার জন্য বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ নিয়েছেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং (Xi Jinping)। এর আওতায় শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মহিন্দা রাজাপক্ষ (Mahinda Rajapaksa) চিনের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হল হ্যামবানটোটা (Hambantota)-য় বন্দর তৈরির জন্য বড়সড় একটা ঋণ। নিজেদের দেশে ওই বন্দর তৈরির জন্য চিনের কাছ থেকে প্রায় ১.১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। যদিও সেই নকশা বাতিল করে দেয় বিশেষজ্ঞদের প্যানেল।
advertisement
আর চিনের ঋণ শোধ করার জন্য প্রয়োজন ছিল বৈদেশিক রাজস্বের। তবে গভীর জলের এই বন্দর বৈদেশিক রাজস্ব এনে দিতে পারেনি। যার জেরে চিনের থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি শ্রীলঙ্কার পক্ষে। এর ফলে ২০১৭ সালে সেই বন্দর এবং হাজার হাজার একর জমি ৯৯ বছরের জন্য বেজিংয়ের হাতে তুলে দিতে হয়েছে শ্রীলঙ্কাকে। আর এ-ভাবেই চিন নিজের ঘাঁটি শক্ত করে ভারতীয় উপকূলের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে।
advertisement
আরও পড়ুন - ৫০ হাজার ডলার রেখে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট, শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি ভবনে এ বার নতুন মুখ
শ্রীলঙ্কা জুড়ে চলা অর্থনৈতির সঙ্কটের জন্য শুধু এই বন্দরই দায়ী নয়। এ-ছাড়াও এই সঙ্কটের পিছনে রয়েছে হোয়াইট-এলিফ্যান্ট প্রকল্পও। কারণ এই প্রকল্পের জন্যও চিনের থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। যদিও হ্যামবানটোটা জেলার সেই প্রকল্প সেই আঁধারেই রয়ে গিয়েছে।
advertisement
আবার উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে যে, এই বন্দর উপেক্ষা করাকেই চিনা ঋণের অপচয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আসলে ১৫.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে তৈরি একটি কনফারেন্স সেন্টার রয়েছে। খোলার পর থেকে ওই কেন্দ্রটিকে সে-ভাবে ব্যবহার করা হয়নি। এর কাছেই রয়েছে রাজাপক্ষ বিমানবন্দর। যেটি বানানো হয়েছিল চিনের থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে। আর এটি এতটাই কম ব্যবহার করা হয়েছে যে, এর বিদ্যুতের বিলটা অবধি মেটানো যায়নি।
এখানেই শেষ নয়, শ্রীলঙ্কার রাজধানী শহর কলম্বোতেও রয়েছে চিনা সাহায্যপ্রাপ্ত একটি বন্দর নগরী প্রকল্প। এর আওতায় প্রায় ৬৬৫ একর দ্বীপকে কৃত্রিম ভাবে বানানো হওয়ার কথা ছিল। যা প্রায় দুবাইয়ের সমতুল্য এবং ওই কৃত্রিম দ্বীপ শ্রীলঙ্কার অন্যতম আর্থিক কেন্দ্রে পরিণত হতে পারত।
চিনের হাতে এই সব দামি প্রকল্প তুলে দিতে রাজাপক্ষরা নিজেদের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়েছে। আর এই কারণে তাঁরা হামেশাই সমালোচনার শিরোনামে থাকতেন।
ভারতের হস্তক্ষেপ:
একের পর এক ভুলভাল অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত, তার সঙ্গে কোভিড অতিমারীতে অর্থনীতির বেহাল দশা - এই সব মিলিয়ে ঋণের ভারে একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে ছোট্ট দ্বীপ-রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। আর এই দেশকে ঋণ দিয়ে সাহায্য করেছে চিন। শ্রীলঙ্কার তৃতীয় বৃহৎ ঋণদাতা হিসেবে ধরা হয় চিনকেই। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম এবং দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জাপান ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক। সমস্ত ঋণের ১০ শতাংশই এসেছে চিনের কাছ থেকে। এ-ছাড়াও কিছু অনুকূল শর্তে আরও কিছু সাহায্য দিতে রাজি হয়েছিল বেজিং।
এ-দিকে প্রধানমন্ত্রী মহিন্দা রাজাপক্ষ ইস্তফা দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী পদে বসেছিলেন রনিল বিক্রমাসিংহে। সম্প্রতি তিনি জানিয়েছেন যে, চিনের দেওয়া ১.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের অর্থ ব্যবহার করতে পারছে না শ্রীলঙ্কা। কারণ বেজিং ওই ঋণের অর্থকে শর্তসাপেক্ষ করে দিয়েছে। শ্রীলঙ্কা এবং আইএমএফ-এর আলোচনায় বেজিং একটা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করার আশ্বাস দিয়েছে। মানবিকতার খাতিরে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ইউয়ান বা ৭৫ মিলিয়ন ডলার সাহায্য দেওয়ার কথাও বলেছে তারা।
এই সঙ্কট চলাকালীনই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে থাকে ভারত। সে-দেশে যেহেতু খাদ্যসঙ্কট তৈরি হয়েছে, তার জন্য কয়েক মিলিয়ন ডলার মূল্যের চাল, গুঁড়ো দুধ-সহ প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পাঠানো হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ওষুধ পাঠানো-সহ অন্যান্য মানবিক সাহায্যও করেছে ভারত। এ-ছাড়াও ডিজেল জ্বালানি এবং গ্যাসোলিনও পাঠানো হয়েছে ভারতের তরফ থেকে। এমনকী নয়াদিল্লি ৪ বিলিয়ন ডলার সাহায্যও দিয়েছে।
শ্রীলঙ্কার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে আগেও বহু বার সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকেছেন। তাঁকে ভারতের স্ব-পক্ষে বলেই মনে করা হয়ে থাকে। যেখানে রাজাপক্ষ পরিবারকে চিনের পক্ষে বলে বিবেচনা করা হয়। আর সাম্প্রতিক এই সঙ্কট কালে বিক্রমসিংহে সে-ভাবে কিছুই করে উঠতে পারছেন না, কারণ দেশের প্রসিডেন্ট পদে আসীন ছিলেন রাজাপক্ষ পরিবারের গোতাবায়া রাজাপক্ষ। এমতাবস্থায় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, রাজনৈতিক হাওয়া এবার ঘুরছে আর তা ভারতের অনুকূলেই থাকতে চলেছে। কারণ রাজাপক্ষ পরিবার চিনের পক্ষে আছে আর সেখানে দেশের এই অবস্থার জন্য আংশিক ভাবে দায়ী চিনই। ফলে এটা ভারতের জন্য এক দিক থেকে ভালোই হবে। আবার সাম্প্রতিক কালে শ্রীলঙ্কায় বেজিংয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে ভারত।
চলতি বছরের মার্চ মাসে ভারতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ওই দ্বীপ-রাষ্ট্রে একটি সৌরশক্তির প্ল্যান্ট গড়ে তোলার উদ্যোগ চূড়ান্ত করেছিল শ্রীলঙ্কা। আবার রাজধানী শহর কলম্বোতে একটি উইন্ড ফার্ম গড়ে তোলার জন্য একটি চিনা সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল। কথা ছিল, ওই উইন্ড ফার্মটি ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বীর হাতে তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু সেই মার্চ মাসেই ১২ মিলিয়ন ডলারের ওই চুক্তি বাতিল করে দেয় কলম্বো।
ভারতের প্রাক্তন বিদেশ সচিব এবং কৌশলগত বিষয়ের বিশেষজ্ঞ কেসি সিং বলেন যে, শ্রীলঙ্কায় কৌশলগত পদক্ষেপ বজায় রাখার চেষ্টা করে চলেছে ভারত। আর বর্তমানে ভারতের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, শ্রীলঙ্কার উপর থেকে চিনা প্রভাব কিংবা চিনা ঘাঁটিগুলিকে খর্ব করা।
এ-দিকে আবার শ্রীলঙ্কার টালমাটাল দশা এবং ভবিষ্যৎও অনিশ্চিয়তার মুখে রয়েছে। ফলে ভারতের তরফ থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হলে সেই দেশ থেকে চিনকে কিছুটা হলেও পিছু হঠানো যাবে এবং শ্রীলঙ্কা চিনা প্রভাব থেকে মুক্ত হলেই সবটা নয়াদিল্লির অনুকূলেই থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দেশের সব লেটেস্ট খবর ( National News in Bengali ) এবং বিদেশের সব খবর ( World News in Bengali ) পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং টপ হেডলাইন নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ ডাউনলোড করুন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
First Published :
July 11, 2022 4:30 PM IST