#মক্কা: গত দু’বছর চোখ রাঙিয়েছে অতিমারী করোনা। তবে এ বার খানিকটা কমেছে অসুখের প্রাবল্য। তাই অনুমতি মিলেছে হজের (Hajj 2022)। ২০২২ সালের হজের প্রথম আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। প্রায় ১০ লক্ষ তীর্থযাত্রী তাঁদের আজীবনের আধ্যাত্মিক যাত্রা শুরু করেছেন।
হজ উপলক্ষে ইসলাম ধর্মের পবিত্র স্থান মক্কার কাবা মসজিদ প্রদক্ষিণ করেন লক্ষ লক্ষ পূণ্যার্থী। প্রচণ্ড গরমেও ভাটা পড়েনি উৎসাহে। ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় চড়া রোদ উপেক্ষা করেই কাবা প্রদক্ষিণ করেন আগত দর্শনার্থীরা। তবে অনেককেই দেখা গিয়েছে ছাতা মাথায় দিয়ে পবিত্র কাবা প্রদক্ষিণ করতে।
আরও পড়ুন- ১৮ দিনে ৮ বার বিমান বিভ্রাট, স্পাইসজেটকে নোটিশ পাঠাল ডিজিসিএ
বৃহস্পতিবার, তীর্থযাত্রীরা পবিত্র মিনা শহরের দিকে যাত্রা শুরু করবেন। পবিত্র কাবা থেকে মিনার দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। তার আগে আরাফৎ পাহাড়ে পালিত হবে প্রধান আচার। এখানেই নবি মহম্মদ তাঁর শেষবারের মতো ধর্মোপদেশ প্রদান করেছিলেন।
পূণ্যার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার দিকে কড়া নজর রাখছে সৌদি প্রশাসন। সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রক ইতিমধ্যেই ২৩ টি বিশেষ হাসপাতাল তৈরি রেখেছে। রয়েছে ১৪৭টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। মক্কা এবং মদিনায় যাতে কোনও রকম সমস্যা না হয় সে জন্যই এই দুই জায়গায় স্বাস্থ্য পরিষেবা নিশ্ছিদ্র করার কথা ভাবা হয়েছে।
মিনা শহরে তৈরি করা হয়েছে ২৬টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র। বিশেষত গরমে অসুস্থতা নিয়ে চিন্তিত প্রশাসন। জানা গিয়েছে, হাজারেরও বেশি শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে ইনটেনসিফভ কেয়ার (Intensive Care) হিসেবে। হিট স্ট্রোকে আক্রান্তদের জন্য ২০০টি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রায় ২৫ হাজার স্বাস্থ্য কর্মীকে এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে ৷
মিশর থেকে এসেছেন বছর ৬৫-র ফাতেন আবদেল মনিম। চার সন্তানের জননী মনিম বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত তো সব ঠিকই আছে। আমি অনেক জায়গায় ঘুরে ফেলেছি। দেখেছি, আইন মেনেই সব কিছু হচ্ছে।’
একই দেশ থেকে আসা বছর ৪২-এর নাইমা মহসেন বলেন, ‘আমার জীবনের সব থেকে সেরা মুহূর্তটা উপভোগ করছি। এখানে আসতে পেরেছি। সমস্ত আচার পালন করার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে রয়েছি। তবে আবহাওয়া খুব কষ্ট দিচ্ছে। অসম্ভব গরমে শরীর খারাপ লাগছে।’
করোনা অতিমারীর আবহে বিধি নিষেধের কারণে গত দুই বছরে পূণ্যার্থীর সংখ্যা হ্রাসের পেয়েছিল। এ বছর সম্পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরই বিদেশ থেকে আসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ৮,৫০,০০০ মানুষকে হজে আসার অনুমতি দিয়েছিল প্রশাসন।
২০১৯ সালে সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ২.৫ কোটি মুসলমান হজে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু এর পরে করোনা অতিমারীর প্রকোপে বন্ধ হয়ে যায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ২০২১ সালে বার শুধুমাত্র ৬০ হাজার সম্পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত সৌদি নাগরিককে হজে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ২০২০ সালে সংখ্যাটা ছিল মাত্র কয়েক হাজার।
তবে এ বছর ছবিটা একেবারে অন্য রকম। খানিকটা হলেও ছন্দে ফিরেছে সারা বিশ্ব। একই সঙ্গে সারা পৃথিবীর জন্য খুলে যাচ্ছে পবিত্র কাবা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর ইসলাম ধর্মাবলম্বী প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ আসবেন পবিত্র কাবায়। তবে তাঁরা প্রত্যেকেই টিকা প্রাপ্ত। এঁদের মধ্যে সাড়ে ৮ লক্ষ মানুষই আসবেন বহির্বিশ্বের নানা দেশ থেকে। যদিও করোনার প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে খানিকটা বিধিনিষেধ থাকছেই।
সবটাই অবশ্য সুখকর নয়। এ বার হজে এসেছেন ইন্দোনেশিয়ার দুই শিক্ষক সুত্রিসনো এবং শ্রী ওয়াহিউনিংসিহ। তাঁদের আবেগ মথিত জীবন ইতিহাসে খানিকটা হলেও ভারী হয়ে উঠেছে পূণ্যভূমির বাতাস। শ্রী জানিয়েছেন তাঁর বাবা-মায়ের খুব ইচ্ছে ছিল হজে যাওয়ার। ২০২০ সালে তাঁরা পবিত্র কাবায় পৌঁছবেন বলে সব স্থির ছিল। করোনা অতিমারীর প্রকোপে বানচাল হয়ে যায় সেই পরিকল্পনা। শ্রীর আক্ষেপ বাবা আর আসতেই পারলেন না। কারণ, গত মার্চ মাসে স্ট্রোকে মারা যাওয়ার গিয়েছেন তাঁর বাবা। এ দিকে শ্রীর মাও এ বছর আসতে পারেননি। কারণ তাঁর বয়স ৬৫ পেরিয়ে গিয়েছে। এ বছর এটিই হজে আসার সর্বোচ্চ বয়সসীমা।
তবুও, ৫৪ বছরের সুত্রিসনো এবং ৫১ বছরের শ্রী খুশি হজে যোগ দিতে পেরে। শ্রী বলেন, ‘এটা আমার কাছে অনেক বড় নৈতিক বোঝা। বাবা মা আসতে চেয়েও পারলেন না। আমাকে আসতেই হত।’ তিনি বলেন, ‘আমার মা আমাকে তাঁর আশীর্বাদ দিয়েছেন। সব কিছু আল্লাহর সিদ্ধান্ত। তিনিই আমাকে হজে নিয়ে যাবেন।’
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Hajj 2022