১৯৬২ সালেও পিছু হঠেছিল চিনারা, লাল ফৌজকে বিশ্বাস করে কীভাবে ঠকেছিল ভারত?
- Published by:Debamoy Ghosh
- news18 bangla
Last Updated:
১৯৬২ সালের ২০ অক্টোবর চিনা বাহিনী ভারতীয় সেনাদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে৷ এর ফলে ৩৬ জন ভারতীয় জওয়ান প্রাণ হারান৷
#লাদাখ: প্রায় দু' মাস ধরে চলা সংঘাতের পরিস্থিতির পরে সোমবারই গালওয়ান উপত্যকায় পিছু হঠেছে চিনের সেনাবাহিনী৷ দুই বাহিনীর মধ্যে হওয়া বৈঠকের শর্ত মেনে পিছু হঠেছে ভারতীয় সেনাও৷ চিনা বাহিনী পিছু হঠার পরই ১৯৬২ সালের ভারতের একটি ইংরেজি সংবাদপত্রের শিরোনাম সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে৷ ঘটনাচক্রে সেটিও ছিল জুলাই মাস৷ রবিবার ১৫ জুলাই, ১৯৬২ সালের সেই 'দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া'-র সংবাদ শিরোনামে লেখা হয়েছিল, 'গালওয়ান পোস্ট থেকে বাহিনী প্রত্যাহার করল চিনা সেনা৷'

এই ঘটনার ঠিক ৯৬ দিন পর সেই বছরই ২০ অক্টোবর থেকে ভারত চিন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল৷ অতীতের সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই এ বার তাই চিনকে সহজে বিশ্বাস করছে না ভারতীয় সেনা৷ লাদাখ এবং গালওয়ানে চিনা বাহিনীর প্রতিটি পদক্ষেপে সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে৷ চিনের বিশ্বাসঘাতকতার কথা মাথায় রেখেই সম্ভবত লাল ফৌজের পিছু হঠা নিয়ে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি ভারতীয় সেনাবাহিনী৷
advertisement
advertisement

ভারতীয় সেনা মনে করছে, ফের একবার সরাসরি সংঘাত এড়াতেই পিছু হঠেছে চিনা সেনা৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেনা আধিকারিক বলেন, 'এটা খুব ছোট একটা পদক্ষেপ৷ আমাদের সতর্ক থাকতে হবে৷ চিনাদের বিশ্বাস করা যায় না৷'
১৯৬২ সালে গ্রীষ্মকাল পড়ার পরই লাদাখের গালওয়ানে নিরাপত্তা বাড়িয়েছিল ভারতীয় সেনা৷ গালওয়ান উপত্যকার উপরের অংশে সাহসী গোর্খাদের নিযুক্ত করে ভারতীয় সেনা৷ ৬ জুলাই চিনা সেনার একটি দল গোর্খাদের উপস্থিতি দেখে সদর দফতরে খবর পাঠায়৷ এর চারদিন পরেই ৩০০ চিনা সেনা ১/৮ গোর্খা রেজিমেন্টকে ঘিরে ফেলে৷
advertisement
১৫ জুলাই সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে লেখা হয়, চিনা বাহিনী গালওয়ান পোস্ট থেকে ২০০ মিটার পিছিয়ে গিয়েছে৷ কিন্তু চিনা সেনার এই পিছু হঠা ছিল সাময়িক৷ কিছুদিন পরই শক্তিবৃদ্ধি করে ফিরে আসে তারা৷
এর পরবর্তী তিন মাসে ভারত এবং চিন গালওয়ান নিয়ে নিজেদের মধ্যে একের পর এক প্রতিবাদ পত্র চালাচালি করে৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও নায়েক সুবেদার জং বাহাদুরের নেতৃত্বে গোর্খারা গালওয়ানে এক ইঞ্চি জমি ছাড়েনি৷ গোর্খাদের সেই সাহসিকতার কাহিনি ভারতীয় সেনাবাহিনির ইতিহাসে ঊজ্জ্বল হয়ে আছে৷
advertisement
কিন্তু অক্টোবর মাসের শুরুতেই লাদাখে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে নামতেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহওরলাল নেহেরু গোর্খাদের গালওয়ান থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ তার বদলে মেজর এস এস হাসানবিসের নেতৃত্বে ৫ নম্বর জাঠ আলফা বাহিনীকে সেখানে পাঠানো হয়৷ ৪ অক্টোবর থেকে এমআই ৪ কপ্টারে করে এই বাহিনী বদলের কাজ শুরু হয় এবং কয়েকদিনের মধ্যেই সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়৷
advertisement
১৯৬২ সালের ২০ অক্টোবর চিনা বাহিনী ভারতীয় সেনাদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে৷ এর ফলে ৩৬ জন ভারতীয় জওয়ান প্রাণ হারান৷ চিনা সেনার হাতে বন্দি হন মেজর হাসানবিস৷ শুরু হয়ে যায় ১৯৬২ সালের ভারত চিন যুদ্ধ৷ সাত মাস চিনা সেনার হাতে বন্দি থাকার পর যুদ্ধ শেষ হলে মেজর হাসানবিসকে মুক্তি দেওয়া হয়৷ সেই মেজর হাসনবিসের ছেলে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাসানবিস এখন ডেপুটি চিফ অফ আর্মি স্টাফ পদে রয়েছেন৷

advertisement
লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এস হাসানবিস, সঙ্গে তাঁর ছেলে ডেপুটি চিফ অফ আর্মি স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাসানবিস
১৯৬২ সালের সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এবার ভারতীয় সেনা লাল ফৌজকে নিয়ে বাড়তি সতর্ক৷ কারণ অতীতটা জেনেও ফের একবার বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হতে চায় না ভারতীয় সেনাবাহিনী৷
Location :
First Published :
July 07, 2020 2:12 PM IST