Umbrella Industry: ‘ছাতা গ্রাম’! গ্রীষ্ম বর্ষার ভরসা ছাতা তৈরি করেই সুদিন ফিরেছে ঘরে ঘরে
- Published by:Arpita Roy Chowdhury
- hyperlocal
- Written by:Bangla Digital Desk
Last Updated:
Umbrella Industry: হাওড়ার ছাতা গ্রাম! গ্রামবাসীদের মাথার উপর ভরসা ছাতা,ছাতার উপর ভর করেই হাল ফিরেছে গ্রামে। ছাতার কাজ করেই এই গ্রামে মহিলারা হয়ে উঠেছে স্বনির্ভর
রাকেশ মাইতি, হাওড়া: হাওড়ার ছাতা গ্রাম! গ্রামবাসীদের মাথার উপর ভরসা ছাতা। ছাতার উপর ভর করেই হাল ফিরেছে গ্রামে। ছাতার কাজ করেই এই গ্রামে মহিলারা হয়ে উঠেছেন স্বনির্ভর। হাওড়া জেলার বাগনান ১ নম্বর ব্লকের সাবসিট পঞ্চায়েতের কাঁকটিয়া ও মাসিয়াড়া পাশাপাশি দুটি গ্রাম। দুই গ্রামের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ ছাতা তৈরির কাজে যুক্ত। বিশেষ করে মহিলারা সংসারের কাজ সামলে ছাতার কাজ করেন। গ্রামের ঘরে ঘরে ছাতা তৈরি, বদলে দিয়েছে গ্রামীণ অর্থনৈিক পরিকাঠামো।
জানা যায়, ছাতা তৈরিতে বেশ দক্ষ হয়ে উঠেছে গ্রামের পুরুষ মহিলা উভয় কারিগর। একটি ছাতা তৈরিতে কাপড় কাটা থেকে কাপড় সেলাই, শিক বাঁধাই, ছাতার বাঁট লাগানো থেকে শিকে কাপড় গাঁথা পর্যন্ত প্রায় ৩০ রকমের কাজ করার পর তবেই একটি পূর্ণাঙ্গ ছাতা তৈরি হয়। জানা যায়, প্রায় প্রতিটি পর্যায় আলাদা আলাদা হাতে অর্থাৎ কাপড় কাটিং থেকে শিক বাঁধাই -প্রতি পর্বে অনেকের সহযোগিতা নিয়ে তবেই একটি ছাতা তৈরি হয়। প্রায় সমস্ত রকমের ছাতা তৈরি হয় এখানে।
advertisement
জেলার কৃষি প্রধান বাগনান ব্লকের কাঁকটিয়া এবং মাসিয়ারা কয়েক বছর আগে পর্যন্ত অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল। মাত্র কয়েক বছরে বদলে যায় গ্রামের মানুষের জীবন জীবিকা। গ্রাম থেকে শহরে পাড়ি জমিয়ে ছাতার কাজ শিখে গ্রামে ফেরেন কিছু মানুষ। তাঁদের মাধ্যমেই ছাতার কাজ ছড়িয়ে পড়ে বলে জানা গিয়েছে। সেই সমস্ত কারিগরের হাত ধরে গ্রামের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটে। কলকাতা থেকে ছাতার কাজ শিখে গ্রামে নিজেরা করতে শুরু করেন। তাঁদের দেখা দেখি অনেকই আগ্রহ দেখান। তার পর একটু একটু করে ছাতার কাজ ছড়িয়ে পড়ে গোটা অঞ্চল জুড়ে।
advertisement
advertisement
বর্তমানে দু’টি গ্রামের অধিকাংশ পরিবার ছাতার কাজ করছেন। স্থানীয় মানুষের কথায় জানা যায়, কয়েক বছর আগে পর্যন্ত গ্রামের পুরুষ মহিলা কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সে সময় কঠোর পরিশ্রম করেও সেভাবে হাতে টাকা থাকত না। তবে যেদিন থেকে ছাতার কাজ শুরু করেছেন মহিলারা, সেদিন থেকে তাঁরা নিজেদের হাতখরচের পাশাপাশি সংসারের অর্থনৈতিক হালও ধরেছেন। সংসারের কাজ মিটিয়ে মহিলারা ১০০, ১৫০ থেকে ২৫০, ৩০০ টাকারও কাজ করতে পড়েন দিন প্রতি।
advertisement
ফলেই এক এক করে পুরুষ ও মহিলা এই পেশায় যুক্ত হয়েছেন।স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কলকাতার বড়বাজার থেকে ছাতা তৈরির অর্ডার নিয়ে আসেন। তাঁদের কাছ থেকেই গ্রামের মহিলারা কাজ নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। ভিন জেলা জেলা থেকেও কারিগর এসে কাজ করেন।
স্থানীয় ছাতা ব্যবসায়ী রাজু পাত্র জানান, ‘‘ প্রায় ১০-১২ বছর ছাতার ব্যবসা করছি। প্রথমে কলকাতা থেকে শিখে আসি। তারপর এলাকায় হাতে ধরে শিখিয়ে কাজ দিই। বর্তমানে প্রায় কুড়ি জন মহিলা কাজ করে। বর্তমানে গোটা গ্রামে জুড়ে ছাতার কাজ। তিনি আরও জানান, মহাজনের থেকে অর্ডার পাওয়ার পর সাধারণত লেবার বা মজুরির কাজ হয়ে থাকে গ্রামে। অর্ডার মত মহাজনদের থেকে কাঁচামাল নিয়ে এসে তা থেকে ছাতা তৈরি করে দিয়ে মজুরি মেলে।’’
advertisement
ছাতা ব্যাবসায়ী তরুণ মাইতি জানান, ‘‘জালি, বাঁশ কটন, সিঙ্গল ফোল্ডিং, থ্রি ফোল্ড , টু ফোল্ড নানা রকমের ছাতার তৈরি হয়। মূলত লেবারের কাজ হয়ে থাকে। তিনি আরও জানান, অধিকাংশ মহাজনের অর্ডার মতো কাজ হয়। তবে তিনি কাঁচামাল কিনে অল্প ছাতা তৈরি করে বিক্রি করেন। পুঁজি না থাকার কারণে ছাতা প্রোডাকশন করতে পারছেন না।’’
advertisement
গ্রামের এক মহিলা ছাতা কারিগর সৌমী পাত্র জানান, ‘‘ ছাতা তৈরিতে কুলপি টাঁকা এবং মাঝের টাঁকার কাজ করি। এগুলি সাধারণত মহিলারা করে থাকেন। বিভিন্ন রকমের ছাতা তৈরি হয়। ছাতা অনুযায়ী ডজন প্রতি টাকা পাওয়া যায়।’’
জানা যায়, বিশ্বকর্মা পুজোর পর থেকে কাজের নতুন সিজন শুরু হয়। সারা বছর প্রায় ৯ মাস কাজ থাকে। তবে এবার বর্ষা বা বৃষ্টি কম হওয়ার জন্য সেভাবে চাহিদা নেই ছাতার। উপার্জন খুব বেশি নেই বলেই জানাচ্ছেন গ্রামবাসীরা।
Location :
Kolkata,West Bengal
First Published :
July 22, 2023 11:20 AM IST