Hooghly News: চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে 'মার্কেট' থেকে তুলেছিলেন লক্ষ লক্ষ টাকা! অয়ন শীলের জন্য আত্মঘাতী হয়েছিলেন 'এজেন্ট'ও
- Published by:Satabdi Adhikary
- hyperlocal
Last Updated:
অভিযোগ, ২০১৮ সালে অয়ন শীলের কারণেই আত্মহত্যা করেছিলেন দেবানন্দপুরের স্থানীয় তৃণমূল নেতা শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়। ছেলে রুপকুমারকে নিয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন তিনি। মারা যাওয়ার সময় সুইসাইড নোটেও লিখে গিয়েছিলেন অয়ন শীলের নাম
হুগলি: নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে সামনে আসছে একের পর এক পাণ্ডার নাম। সব দেখেশুনে আপাতদৃষ্টিতে যা বোঝা যাচ্ছে, এই নিয়োগ দুর্নীতির ২টো এপিসেন্টার ছিল। একটা হুগলি এবং অন্যটা সল্টলেক। আপাতত, সামনে এসেছে নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের আরও এক নতুন চরিত্র। হুগলির বলাগড়ের বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা তথা নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত শান্তনু বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার অয়ন শীল। হুগলির চুঁচুড়ার বাসিন্দা এই অয়ন শীলের সল্টলেকের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা লেনদেনের নথি। ২০১২ এবং ২০১৪ এর টেট সংক্রান্ত নানা নথি, ওএমআরশিট-এর জেরক্স কপি, এমনকি, রাজ্যের ৬০ টি পুরসভায় নিয়োগের আসল ওএমআর শিটও উদ্ধার হয়েছে অয়নের ফ্ল্যাট থেকে।
গত শনিবার হুগলির চুঁচুড়ার বাড়ি থেকে অয়নকে আটক করে নিয়ে যান ইডি-র আধিকারিকেরা। তারপরে, সল্টলেকে, অয়নের ফ্ল্যাট কাম অফিসে প্রায় ৩৭ ঘণ্টা ধরে চলে তল্লাশি। অবশেষে, সোমবার ভোররাতে গ্রেফতার হন অয়ন।
আরও পড়ুন: মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে শান্তনু-অয়নের মধ্যে সাড়ে ৭ কোটি টাকার লেনদেন! চাকরি বিক্রি করেই এত টাকা, বলছে ED
ইডি-র তদন্তকারীদের অনুমান, সল্টলেকের এই অফিসেই চাকরিপ্রার্থীদের নিয়ে আসতেন রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এজেন্টরা। অয়নের কম্পিউটার অফিসেই চলত চাকরি বিক্রির রমরমা কারবার। ইডির জালে অয়ন শীল ধরা পড়তেই একে একে সামনে আসতে শুরু করেছে আরও চাঞ্চল্যকর সব অভিযোগ।
advertisement
advertisement
জানা গিয়েছে, শুধু চাকরির বিনিময়েই নয়, চাকরি করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও লক্ষ লক্ষ টাকা লুটেছেন অয়ন। আর তার এই কর্মের খেসারত নাকি পোহাতে হয়েছে এক পরিবারকে। অভিযোগ, চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য যে এজেন্টদের অয়ন ব্যবহার করতেন, তেমনই দু'জন বাবা ও ছেলেকে আত্মঘাতী হতে হয়েছে অয়নের কারণে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ঘটনার সূত্রপাত ২০১৬ থেকে। অয়নের প্রলোভনে পা দিয়ে ব্যান্ডেলের দেবানন্দপুরের তৃণমূল নেতা শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর জন্য চাকরিপ্রার্থী জোগাড় করতে শুরু করেন। কোনও প্রার্থীর থেকে ৯ লক্ষ টাকা, কারও থেকে তিন লক্ষ টাকা নেন। শ্রীকুমারবাবুর ঘনিষ্ঠদের দাবি, শ্রীকুমারকে যার কাছ থেকে যেরকম পারেন, তেমন টাকা তুলতে বলেছিলেন অয়ন। অয়নের কথামতোই শ্রীকুমার চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল ও তা পৌঁছে দিয়েছিল অয়নের কাছে। কিন্তু, টাকা দেওয়ার পরেও চাকরি হয়নি অনেকেরই।
advertisement
আরও পড়ুন: কম্পিউটার অফিসের আড়ালে নিয়োগ দুর্নীতির আখড়া! অয়নের বাড়িতে মিলল ২০১২ টেট-এর নথিও
তারপরেই, শ্রীকুমার ওরফে গুরুর বাড়ির বাইরে ধরনায় বসতে শুরু করেন চাকরির জন্য টাকা দেওয়া ব্যক্তিরা। অভিযোগ, সেই মানসিক চাপ সহ্য না করতে পেরেই ২০১৮ সালে আত্মহত্যা করেন শ্রীকুমার ও তাঁর ছেলে রূপকুমার। এমনকি, শ্রীকুমারের সুইসাইড নোটেও নাকি সবকিছু লেখা ছিল। তবে অভিযোগ, তখন বলাগড়ের তৃণমূলনেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'প্রবল' ক্ষমতা-প্রতিপত্তি থাকায় সে সবকিছুই ধামাচাপা পড়ে যায়।
advertisement
শ্রীকুমারের নিজের ভাগ্নে সুরজিৎ চক্রবর্তীও চাকরির জন্য তিন লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন মামাকে। সঙ্গে দিয়েছিলেন মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক স্তরের ওরিজিনাল অ্যাডমিট কার্ড ও মার্কশিট। সুরজিতের অভিযোগ, "টাকার বদলে চাকরি না পেয়ে যখন চাকরিপ্রার্থীরা মামার বাড়ির বাইরে ধর্না দিচ্ছেন, তখন তিনি অয়নবাবুর ফ্ল্যাটেও গিয়েছিলেন সব জানাতে। কিন্তু, সেই সময় অয়ন শ্রীকুমারবাবুকে ফ্ল্যাট থেকে ধাক্কা মেরে বাইরে বের করে দেন।"
advertisement
দেবানন্দপুরে বাসিন্দা স্নেহাশিষ মুখোপাধ্যায় ছিলেন শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিবেশী। পেশায় আইনজীবী স্নেহাশিসবাবুও দাবি করেন, এই সব ঘটনাই তাঁর জানা। তিনি বলেন, "গুরুর (শ্রীকুমার) নিজে ডিএম অফিসে চাকরি করতেন। তাঁর স্ত্রী পূরবীও সরকারি চাকরি করতেন। ছেলে রূপকুমার একদম সাদাসিধে ছেলে ছিল। সে এসবের মধ্যে ছিল না। আমাদের মনে হয় গুরু তাঁর ছেলেকে মেরে নিজে আত্মঘাতী হয়েছিল। আমরাই সব করেছি সেদিন। গুরুর মৃতদেহের পাশে একটি সুইসাইড নোটও পাওয়া গিয়েছিল। তখন তদন্ত কিছুই এগোল না। গুরুর আত্মসম্মান ছিল তাই হয়ত আত্মহত্যা করেছিল। কিন্তু অয়নের মতো লোকেদের কী হবে? আমরা চাই সবকিছুর নিরপেক্ষ তদন্ত হোক।"
advertisement
রাহী হালদার
Location :
West Bengal
First Published :
March 20, 2023 7:43 PM IST