Hooghly: হিন্দু মানুষের শেষকৃত্য এক সংখ্যালঘু মানুষের হাতে
- Published by:Soumabrata Ghosh
Last Updated:
শ্রীরামপুর: মোরা একই বৃন্তে দুইটি কুসুম হিন্দু মুসলমান। কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতাটির জানো সাক্ষ্য প্রমাণ দিয়ে গেলেন শ্রীরামপুরের বাসিন্দা আনোয়ার শেখ। শ্রীরামপুর বল্লভপুর শ্মশান ঘাটে মৃত্যুপথযাত্রী হিন্দু বৃদ্ধের শেষকৃত্য সম্পন্ন করে নজির গড়লেন আনোয়ার। এবং শুধু মুখাগ্নি নয় শ্রাদ্ধের সমস্ত নিয়ম ও পালন করবেন তিনি হিন্দুশাস্ত্র মিনেই এমনটাই জানালেন সমাজসেবক আনোয়ার শেখ।পেশায় একজন মার্বেল মিস্ত্রি , নেশায় তিনি একজন সমাজ সেবক। কোন মুমূর্ষ রোগী অবহেলিত হচ্ছে জানতে পারলেই ছুটে যান তিনি তাদের কাছে। জাত পাত ধর্মের ঊর্ধ্বে রয়েছে মানবধর্ম তার জ্বলন্ত উদাহরণ শ্রীরামপুর মুসলমান পাড়া লেন এর বাসিন্দা আনোয়ার। কোন রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার থাকলে তিনি নিজেই চলে যান তাদেরকে নিয়ে। এবং যদি কোন দুস্থ গরিব রোগীর পরিবার হয় তাহলে তাদেরকে নিজের খরচেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া এবং নিয়ে আসার সমস্ত দায়িত্বভার তুলে নেন নিজের কাঁধে।
রিষরা লায়ন্স ক্লাবের সদস্য তনময় ভট্টাচার্য বলেন, কর্মসূত্রে দিল্লির বাসিন্দা ছিলেন প্রয়াত সুজিত হালদার। কর্মজীবনের অবসর নিয়ে শ্রীরামপুরের দে স্ট্রীটে নতুন বাসায় অবসর জীবন কাটাচ্ছিলেন স্ত্রী শিপ্রা দেবীর সঙ্গে। একমাত্র কন্যা চৈতালি বাগের বিয়ে হয়েছে শুদূর সাইপ্রাসে। কয়েক বছর আগে সুজিত বাবু ক্যান্সার ধরা পড়ে। বৃদ্ধ সুজিত বাবু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আসা করার জন্য কোন মানুষের প্রয়োজন ছিল তারপরে শুরু হলো লকডাউন। এমন সময় আনোয়ারের কাছে তনময় বাবু খবর পৌঁছান একজন বৃদ্ধের তাকে প্রয়োজন। তারপর থেকেই আনোয়ার প্রতিবার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আসার সমস্ত কাজ করতেন নিঃস্বার্থভাবেই। গত মঙ্গলবার সুজিত হালদারের দেহান্ত হয় । মারা যাওয়ার আগে সুজিত হালদার তার পরিবার পরিজনকে জানিয়ে গিয়েছিলেন যদি তার মেয়ে মুখাগ্নি না করতে আসতে পারে তাহলে যেন এই কাজটি আনোয়ার করে। সেই কথা মেনেই সুজিত হালদারের শেষ ইচ্ছা পূরণ করেন আনোয়ার। সমস্ত নিয়ম মেনে মুখাগ্নি করেন তিনি। এ বিষয়ে আনোয়ার বলেন, আমি জাতপাত ধর্ম এসব মানি না। বাড়িতে আমরা মা-বাবা সমেত পাঁচ ভাই-বোন। সুজিত হালদারের শেষ ইচ্ছা পূরণ করার আগে আমি আমার নিজের বাবাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন এই কাজটি করতে।
advertisement
তিনি আরো বলেন, এরপর আগামীতে শ্রাদ্ধের সমস্ত কাজ তিনি নিয়ম মেনেই করবেন। তিনি বরাবরই অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। রাজ্যে বা রাজ্যের বাইরে কোন রোগীর চিকিৎসার প্রয়োজন হলে তিনি তাদেরকে দায়িত্ব নিয়ে নিয়ে যান ও বাড়ি নিয়ে আসেন। তিনি বিগত ২৫ বছর ধরে এই কাজ করে আসছেন। বছর দুই আগে এই কাজের সূত্রেই আলাপ হয় সুজিত হালদারের পরিবারের সঙ্গে। সুজিত বাবুকে নিজের পরিবারের মতন মনে করতেন তিনি। তাই তিনি মারা যাবার পর তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছেন আনোয়ার। আগামী দিনে মে মাসে শেষ সপ্তাহে হায়দ্রাবাদের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চক্ষু চিকিৎসার জন্য রাজ্য থেকে চার জনকে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নিউজ ১৮ ডিজিটালের সাংবাদিকের সাক্ষাৎকারের সময় প্রিয় মানুষের জন্য একটি বার্তা দিতে চান। তিনি বলেন জনগণের কাছে তার একটি বিশেষ আবেদন রয়েছেন 'মানুষ মানুষকে দেখুক' তাতে মানুষের কি ভালো হবে।
advertisement
Location :
First Published :
March 31, 2022 7:07 PM IST