হুগলি: এক সময় ধুমধাম করে দোল পালন হত উত্তরপাড়ায় বিড়লাদের হিন্দমোটর কারখানায়। অ্যাম্বাসেডরের আঁতুড়ঘরে ১১ হাজার পরিবার একসঙ্গে রং খেলায় মেতে উঠত। বাংলার দোলের পাশাপাশি একসঙ্গে উদযাপিত হত হোলি। বিহার ও উত্তরপ্রদেশ থেকে আগত অবাঙালি শ্রমিকরা হোলি উপলক্ষে লোকগীতি ফাগুয়া গান ধরতেন। সঙ্গে পরিবেশন করা হত সদ্য ভাজা গরম গরম জিলিপি ও ঠান্ডাই।
সে এক দিন ছিল হিন্দমোটরের। ঠান্ডাই খেয়ে শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ কেউ কেবলই হাসতে থাকতেন। আর তা দেখে মজা পেতেন বাকিরা। কিন্তু সেই সময় পেরিয়ে গেছে বহুদিন। দীর্ঘদিন বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের জীবন যা হয় হিন্দমোটরের কর্মচারীদের অবস্থাও ঠিক তেমনই। বারবার কারখানা খোলার আশ্বাস ভেসে উঠলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। আর তাতেই একটু একটু করে মুছে গিয়েছে জীবনের যাবতীয় রং। ফলে সেখানে দোল বা হোলি কিছুই আর ঘটা করে উদযাপন করা হয় না।
সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া মানুষগুলির জীবনে আনন্দ বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে এল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বন্ধ হিন্দমোটরের শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের মুখে একটু হাসি ফোটানোর জন্য তাঁরা আয়োজন করলেন প্রি হোলি সেলিব্রেশন। ফলে অনেকদিন পর বীরেন্দর, মনোজ, রাজকুমাররা আবার গেয়ে উঠলেন ফাগুয়া গান। আর সেই শুনে আনন্দে মেতে উঠলেন শ্রমিক মহল্লার সকলে।
আরও পড়ুন: করোনার পর ভেষজ আবিরে চাহিদা একলাফে অনেকটাই বেড়েছে
হিন্দমোটরের শ্রমিক মহল্লাতেই বসবাস করেন বেশ কয়েকজন ফাগুয়া লোকগীতি শিল্পী। একসময় এখানে দোলের দিন এই শিল্পীদের আখড়া বসত। বর্তমানে সেসব আর কিছুই না হলেও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে আবারও ফাগুয়া গানে ভেসে গেল গোটা হিন্দমোটর।
সঙ্কল্প নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি রবিবার সন্ধেয় হিন্দমোটরের বন্ধ কারখানা চত্বরের ভেতরের একটি মন্দির প্রাঙ্গনে আয়োজন করে এই আগাম হোলি উৎসব। সেখানে অতীতের মত গরম গরম জিলিপি ভাজা হয়, গান গাওয়া হয়। শেষে আবির খেলায় মেতে ওঠেন সকলে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির সদস্য পঙ্কজ রায় বলেন, একসময় হিন্দমোটর কারখানার দোল উৎসব উপলক্ষে উৎসবে মেতে উঠতেন হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু বর্তমান তাঁদের মুখের হাসি ম্লান হয়ে গেছে। সেই তাঁদের মুখেই একটু হাসি ফুটিয়ে তোলার জন্য এই উৎসবের আয়োজন।
রাহী হালদার
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।