বিরিয়ানির হাঁড়িতে লাল কাপড় কেন জড়ানো থাকে ?
Last Updated:
#কলকাতা : শহরের অলিতে গলিতে এখন বিরিয়ানির দোকান। দোকানের একশো মিটারের মধ্যে এসে পড়লেই নাকে বিরিয়ানির গন্ধ আর লাল শালুতে মোড়া বিরিয়ানির বিশাল হাঁড়ি চোখে পড়তে বাধ্য। আর পেটে সামান্য জায়গা খালি রয়েছে, অথচ অবলীলায় বিরিয়ানির দোকান পেরিয়ে চলে যাচ্ছেন... এমন সাধ্যি কার!
লাল কাপড়ে মোড়া ইয়াব্বড় হাঁড়ি ৷ ওইটুকই সিগন্যাল হিসেবে যথেষ্ট বিরিয়ানিপ্রেমীদের জন্য ৷ লাল শালু দেখে বিরিয়ানিপ্রেমীরা স্পেনীয় ষাঁড়ের মতো দৌড়বেন, এমনটাই কি ভাবেন পরিবেশকরা?
হাড়ির মুখের জম্পেশ করে এঁটে থাকা ঢাকনাটি খুলতেই সুগন্ধে ভরে চারপাশ ৷ লম্বা লম্বা চাল,মোলামেয় মাংসের টুকরো ৷ সঙ্গে একটা বড় আলুর টুকরো আর ধবধবে সাদা সিদ্ধ ডিম ৷ ব্যাপারটা এক্কেবারে জমে ক্ষীর! থুরি জমে বিরিয়ানি ৷ আর লোভনীয় খাবারটির তো কত প্রকারভেদ রয়েছে ৷ চিকেন বিরিয়ানি, মটন বিরিয়ানি, আন্ডা বিরিয়ানি, আলু বিরিয়ানি, ভেজ বিরিয়ানি কিংবা ফিশ বিরিয়ানি ৷ কত ধরনের তো বিরিয়ানি হয়, কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন কী বিরিয়ানির হাঁড়ির গায়ে জড়ানো কাপড়টির রং বদলায় না কেন! সব সময়ই বিরিয়ানির হাড়িতে জড়ানো হয় লাল শালুই! আসুন না একটু বিশ্লেষণ করা যাক এই বিষয়টি নিয়ে ৷
advertisement
advertisement
বিদেশি অতিথি যখন আসেন তখন তাকে কেন লালগালিচা (রেড কার্পেট) সংবর্ধনা দেয়া হয়? নীল বা হলুদ নয় কেন? এই যে এত মাজার, উরস হচ্ছে সেখানে বাঁশের মাথায় লাল শালুর পতাকা ঝোলে কেন? বিরিয়ানি, হালিমের ডেগেই বা লাল কাপড় কেন? কালো বা চকমকে মখমল বা দামি কারুকাজ কাপড়ও তো ব্যবহার করা যায়? পান ও পনিরওয়ালারাও এই লাল শালু ব্যবহার করেন কেন?
advertisement
কারণ, মানুষের ভাষার মতো রংয়েরও কিন্তু ভাষা আছে। আপনার চিন্তায় কিন্তু রং প্রভাব রাখে। তাই নয় কি? তেমনি পৃথিবীর প্রত্যেক দেশেই রংয়ের ভিন্ন ভিন্ন অর্থ ও ব্যবহার রয়েছে। পতাকাগুলো দেখুন, বেশির ভাগ ইসলামি রাষ্ট্রগুলোর পতাকার রঙ সবুজ ও সাদা। কেন?
কারণ সবুজকে শান্তি আর সাদাকে স্বচ্ছন্দতা ও শুদ্ধতার প্রতীক বলে মানা হয়। তেমনই লাল রংয়ের ব্যবহার একেক দেশে ভিন্ন ভিন্ন। কোনও দেশে লাল শৌর্য, আক্রমণ, বিপদ অর্থে ব্যবহার হয়। যেমন, যুদ্ধে লাল নিশানা সৈন্যদের নির্দেশনা দান করত শত্রুর মোকাবিলায়। আবার দেখুন ট্রেনের বা রাস্তার সিগনাল। শুধু কি তাই! মাঠে ফুটবল রেফারীও কিন্তু প্রথমে সতর্কতা হিসাবে হলুদ পরে বিপদজনক আচরণের জন্য লাল কার্ড ব্যবহার করেন।
advertisement
তবে লাল রংকে সাধারণত ধরা হয় সৌভাগ্য, উষ্ণতার, আনন্দ-উত্সব ও ভালবাসার আবেগের প্রতীক হিসেবে। হৃদয়ের রং কী? শুধু তাই নয়, উষ্ণ অভ্যর্থনা প্রকাশের ক্ষেত্রেও হৃদয়ের লাল রং ব্যবহার হয়। গোড়ার দিকের মুঘল শাসকরা ছিলেন পারস্য সংস্কৃতি প্রভাবিত। তাঁরা তাঁদের জীবনে এই ধারা অনুকরণ করতেন। সম্রাট হুমায়ুন হলেন এর পথপ্রদর্শক। কারণ তিনি যখন রাজ্য হারিয়ে ইরানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তখন তাকে পারস্য সম্রাট সেই লালগালিচার উষ্ণ অভ্যর্থনাই দিয়েছিলেন। খাদ্য পরিবেশনে দরবারি রীতিগুলোতে বিশেষত্ব, রুপোলি পাত্রের খাবারগুলোর জন্য লাল কাপড় আর ধাতব ও চিনামাটির জন্য সাদা কাপড় দিয়ে ডেকে নিয়ে আসা হতো। যা মুঘলরাও তাঁদেরর দরবারে চালু করেন। শুধু তাই নয় সম্মানিত ব্যক্তি বা আধ্যাত্মিক সাধকদের জন্য ছিল লাল পাগড়ির ব্যবস্থা।
advertisement
বিরিয়ানি ভারতে পা রাখে মুঘল আমলে। খাদ্য পরিবেশনে এই প্রথা ও রঙের ব্যবহার শহর লখনউয়ের নবাবরাও অনুসরণ করতেন। সমাজ জীবনে তাই অভিজাত্য, বনেদি, উষ্ণতা প্রকাশে লাল বা লাল শালুর ব্যবহার চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। রঙের শহর কলকাতা ব্যতিক্রম হয়, এটা কেমনভাবে হয়!
view commentsLocation :
First Published :
January 27, 2019 1:11 PM IST

