১৬ কেজি চালের নৈবেদ্য হয় গিরিশ ভবনে, দশমীতে মা’কে প্রদক্ষিণ করেন পৈতেধারী বাড়ির ছেলেরা

Last Updated:

এখানে দশমীর দিন সকালে রয়েছে আরও একটি অভিনব আচার ৷ ওই দিন মায়ের প্রাণ বিসর্জনের আগে পৈতেধারী ব্রাহ্মণরা দুর্গাস্তোত্র উচ্চারণ করতে করতে দেবীকে প্রদক্ষিণ করেন ৷ আর দশমীর দিন সন্ধেবেলা বিসর্জনের আগে বাড়ির এয়োস্ত্রীরা তাঁদের সবচেয়ে ভাল শাড়ি আর প্রচুর গয়না পরে মা’কে বরণ করেন ৷

#কলকাতা: দক্ষিণ কলকাতার সুউচ্চ কংক্রিটের জঙ্গলের মধ্যে হঠাৎ পথ হারিয়ে দেয় এই বাড়ি ৷ চারপাশের আকাশছোঁয়া ইমারতকে হেলায় দিকশূন্যপুরে পাঠিয়ে দেয় ৷ মনে হয় মরুভূমির মধ্যেকার একটা মরীচিকা যেন ৷ সাদা ধবধবে, বিস্ত‌ৃত ঠাকুরদালানটা এখন আগমণী গান গাইছে ৷ দালানের দু’পাশে এ জানলা-ও জানলা দিয়ে কথা চালাচালি হচ্ছে চুটিয়ে ৷ যৌথ পরিবারের সবাই ভুলে গিয়েছেন কে কার আপন ভাই, আর কার আপন বোন ৷ এখন শুধু পুজোর সাজ, প্রতিমার রং, কেনাকাটা, সেলফির গল্প কলকলিয়ে উঠছে ১৮৭ বছরের পুরনো প্রাচীন বনেদিয়ানায় ভরপুর এই পুজোটাকে ঘিরে৷
ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে (দক্ষিণ) ২৪ পরগনার ধামুয়া থেকে রাঢি শ্রেণির ব্রাহ্মণ হরচন্দ্র মুখোপাধ্যায় কলকাতায় এসেছিলেন। তাঁর ছিল পৌরোহিত্যের পেশা। পরিবারসূত্রে জানা যায়, তিনি অর্থ সঞ্চয় করে ভবানীপুরের চক্রবেড়িয়া অঞ্চলে ঠাকুরদালান-সহ ভদ্রাসন নির্মাণ করে ১৮৩২ থেকে দুর্গাপুজো আরম্ভ করেন। বাড়ির বর্তমান ঠিকানা ৩৯ গিরিশ মুখার্জি রোড। পুত্র গিরিশচন্দ্র ছিলেন সে যুগের নামকরা উকিল।
advertisement
আবার স্নামধন্য সংস্কৃত পণ্ডিত-ও বটে ৷ তাঁর আমল থেকে পুজোর জৌলুস বৃদ্ধি পায়। আগে পুজো হত মাটির আটচালায় ৷ বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কাছ থেকে জলপানির টাকা পেয়ে এই ঠাকুরদালানটি তৈরি করিয়েছিলেন গিরিশচন্দ্র ৷
advertisement
একচালার মহিষমর্দিনী মূর্তি ১৮৬ বছর ধরে একই কাঠামোতে পুজো হয়ে আসছে ৷ তবে সিংহ এখানে আধুনিক রূপে ৷ আগে প্রতিপদ থেকেই ঘট বসত পুজোর ৷ তবে এখন পঞ্চমী থেকে বসে ৷ এ বাড়ির পুজোর সংকল্প হয় বাড়ির পুত্রবধূদের নামে ৷ যাঁর নামে সংকল্প হয় তিনি পঞ্চমীর দিন শুধু ঠাকুরের অন্নভোগ আর রাতে ফলমূল আহার করেন ৷ আর ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত তিনি শুধুমাত্র রাতে আরতির পর প্রসাদ খান ৷ এ বাড়ির কুলদেবতা অষ্টধাতুর জগদ্ধাত্রী মাতা ৷ এ বাড়ির মেয়ে-বৌরা জগদ্ধাত্রী মন্ত্রে দীক্ষিত হন ৷ দীক্ষিত হলে তবেই তিনি বাড়ির ভোগ রাঁধতে পারেন ৷4
advertisement
আগে একচালার প্রতিমায় সাবেকি ডাকের সাজ হত ৷ এখন অবশ্য মা’কে বেনারসী শাড়ি পরানো হয় ৷ শুধু দুর্গা নন, সকলেই পরেন শাড়ি আর কার্তিক-গণেশ পরেন ধুতি ৷ বাড়ির সমস্ত সদস্যরা একজোট হয়ে মা’কে সাজান নিজের হাতে ৷ ভাসানে পর সেই বেনারসী নিয়ে এসে কোনও গরীব-দুঃখীকে দান করা হয় ৷ এখানে নবপত্রিকাকে গঙ্গায় নিয়ে গিয়ে স্নান করানো হয় না ৷ বাড়িতেই হয় স্নান ৷ তারপর বাড়ির সদস্যরা কলা বৌকে বরণ করে ঠাকুরদালানে তোলেন ৷ বাড়িতে রয়েছে প্রতিষ্ঠা করা বেল গাছ ৷ সেখানেই ষষ্ঠীর দিন প্রথমে শুরু হয় পুজো ৷ তারপর মা’কে সিঁদুর পরিয়ে, বরণ করে শুরু হয় পুজো ৷
advertisement
8
অষ্টমীর দিন ১৬ কেজি চালের আর সেরা ফল দিয়ে নৈবেদ্য সাজানো হয় ৷ বাড়ির পুরুষ মানুষরাই এই কাজটা করে থাকেন ৷ আর এখানে দশমীর দিন সকালে রয়েছে আরও একটি অভিনব আচার ৷ ওই দিন মায়ের প্রাণ বিসর্জনের আগে পৈতেধারী ব্রাহ্মণরা দুর্গাস্তোত্র উচ্চারণ করতে করতে দেবীকে প্রদক্ষিণ করেন ৷ আর দশমীর দিন সন্ধেবেলা বিসর্জনের আগে বাড়ির এয়োস্ত্রীরা তাঁদের সবচেয়ে ভাল শাড়ি আর প্রচুর গয়না পরে মা’কে বরণ করেন ৷
advertisement
7
এই বাড়ির ঠাকুর এখনও কাঁধে করে বিসর্জনে যান ৷ নিরঞ্জনের পরে কাঠামো থেকে মূর্তিকে আলাদা করে আবার সেটি তুলে নিয়ে আসা হয় ৷ পরের বছরের অপেক্ষায় আবারও শুরু হয় দিন গোনা ৷
ছবি সৌজন্য: গিরিশ ভবন
বাংলা খবর/ খবর/ফিচার/
১৬ কেজি চালের নৈবেদ্য হয় গিরিশ ভবনে, দশমীতে মা’কে প্রদক্ষিণ করেন পৈতেধারী বাড়ির ছেলেরা
Next Article
advertisement
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! তারপরেই, এই এলাকার পুজোর থিম দেখলে অবাক হবেন!
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! অন্যরকম থিম এই এলাকায়
VIEW MORE
advertisement
advertisement