ঝাড়খন্ডের আদিবাসী মেয়েদের কাছে এখনও পৌঁছায়নি স্যানিটারি প্যাডস! তারা এখনও রয়েছে অন্ধকারে! লিখছেন শ্রীলেখা চক্রবর্তী।

Last Updated:
মেয়েদের স্বাস্থ্য সর্ম্পকিত নীতিগুলো আমাদের দেশে এখনও মাতৃত্বের সঙ্গেই জড়িত। তাই মেনস্ট্রুয়াল স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থা বা সমস্যার কথা এখন সবার সামনে আসছে বা দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। যা আরও আগে সামনে আসার কথা ছিল। মেনস্ট্রুয়েশন এবং মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন ম্যানেজমেন্ট (MHM) তাদের পযর্বেক্ষণে দেখেছে যে গ্রামাঞ্চলেও বর্তমানে মেনস্ট্রুয়েশন নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে। তবে ঋতুচক্র নিয়ে সচেতনতা বাড়লেও তার প্রয়োগ এবং সাস্থ্য সচেতনতা এবং সচ্ছতা নিয়ে ভাবনার বিকাশে সমস্যা রয়ে গিয়েছে। এই রির্পোটের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতাও মিলে যায়। ঋতুচক্রে ঠিক হাইজিন ব্যাপারটা কি তা অনেকের কাছেই স্পস্ট নয়। সবার আগে যেটা বলার তা হল এখনও পিরিয়ডসকে মেয়েলি সমস্যা হিসাবেই ধরা হয়। এখনও এটি মেয়েলি রোগ হিসেবেই থেকে গিয়েছে। এটিকে এখনও সাধারণ স্বাস্থ্যর সঙ্গে সমান তালিকায় গণ্য করা হয় না। আমি ৬ বছর ধরে ঝাড়খন্ডে একজন জেন্ডার রাইটস কর্মী হিসেবে কাজ করছি। কিন্তু যখনই সরকারি ভাবে মহিলাদের সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে চেয়েছি তখনই বাঁধা এসেছে। এখনও এই বিষয়ে কথা বলতে চাইলে সবাই ফিসফিস করতে শুরু করে। আমি অনেকদিন ধরে কাজ করে চেষ্টা করছি ঋতুচক্রের পরিচ্ছন্নতা সুস্থতা এবং আমাদের সার্বজনিন স্বাস্থ্যের মধ্যে যে ভাবনার দূরত্ব রয়েছে তা দূর করার। আমরা সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছি এই বিষয়ে মানুষের ভাবনা চিন্তার প্রসার ঘটানোর। এটা কোনও রোগ নয়। মানুষের মধ্যে সচেতনতা না বাড়লে মেয়েদের দূরে সরেই থাকতে হবে।
ঝাড়খন্ড ভারতের গরীব রাজ্যের একটি। না খেতে পাওয়া মানুষের সংখ্যাই এখানে বেশি। ১৭র মধ্যে ১৬ নম্বর পাবে এই রাজ্য দারিদ্রতার জন্য। আমি এখানকার  আদিবাসী মেয়েদের জন্য সেক্সুয়াল রিপ্রোডাকটিভ স্বাস্থ্য নিয়ে গত ৫ বছর ধরে কাজ করে যা দেখেছি তা আমাকে চমকেছে বার বার। তাদের সঠিক জ্ঞান না থাকার জন্য অনেক মিথ এবং ভুল ধারণা রয়েছে পিরিয়ডস নিয়ে। যার জন্য এখানকার মেয়েরা এখনও মানসিক এবং শারীরিক ভাবে কষ্ট পাচ্ছেন। আমাদের কেন্দ্রীয় সরকার তাদের সচ্ছ ভারত অভিযানের মাধ্যমে এই অঞ্চলগুলোতে অভিযান চালায়। এবং তারা ২০১৪ থেকে মেয়েদের মধ্যে পিরিয়ডস নিয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা ও ব্যবস্থা বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তা কতদূর সফল হয়েছে? এবং যে অঙ্গনারী কর্মীরা রয়েছেন তাদের ট্রেনিংটাই বা কতটা ঠিক? আবার ভারত সরকার থেকে সারা ভারতে এবং ঝাড়খন্ডের এই সব অঞ্চলেও স্যানিটারি প্যাড দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্কুলে স্কুলে মেয়েদের জন্য প্যাডের ব্যবস্থা করা হলেও এখানকার মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। প্যাড তো দূরের কথা স্কুলগুলোতে একটা ডাস্টবিন ও নেই।
advertisement
MHM স্কিমের মাধ্যমে ভারত সরকার প্রত্যেক স্কুলে স্কুলে মেয়েদের কাছে স্যানিটারি ন্যাপকিন পৌঁছে দিতে চেয়েছেন। কিন্তু বিষয়টা হল আমি ঝাড়খন্ডের যেখানে কাজ করেছি সেখানে নিয়মিত ভাবে প্যাডের সাপ্পালাই নেই। তাদের কাছে প্যাড আসছেই না। ASHA-কর্মীদের এই সব এলাকার মেয়েদের নিয়ে একটা মিটিং বা আলোচনা করার কথা যার নাম 'কিশোরি সমুহ বা বৈঠক। কিন্তু এই আলোচনা গুলো শুধু কাগজ কলমেই থেকে গেছে। বাস্তবায়িত হয়নি। কারণ মেয়েরা এই সব সচেতনতা মুলক বৈঠকে আসতেই চায় না। সম্প্রতি MHM পাকুর নিয়ে আমি একটি রিসার্চ করি। সেখানে আমি বলেছি যে, ঝাড়খন্ডে গিয়ে আমি বুঝতে পেরেছি যে ASHA কর্মীদের তেমন কোন ভাল ট্রেনিং হয়নি। তাদেরও কাজের পদ্ধতি নিয়ে এখনও অনেক ধার‍ণা দরকার। এবং গ্রামের মেয়েদের সঙ্গে খোলাখোলি পিরিয়ডসের বিষয়ে কেউ কথা বলে কতটা কাজ করছে তা দেখারও কেউ নেই। আমি একটা ক্যাম্পেন করতে শুরু করি মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াবার জন্য। নাম রাখি 'পিরিয়ডসপে চর্চা'। আমি আদিবাসী মেয়েদের সঙ্গে নিজে গিয়ে কথা বলি। তাদেরকে বোঝাতে চেষ্টা করি পিরিয়ডস লুকিয়ে রাখার বিষয় নয়। এই সময় পরিস্কার থাকাটা স্বাস্থ্যের জন্য দারকারি। প্যাডস ব্যবহার করলে শরীরে ব্যাকটিরিয়া ঘটিত সমস্যা হয় না। মানসিক এবং শারীরিক ভাবে সুস্থ্য থাকাটা এই সময় খুব জরুরি। আমি অনলাইন পিটিশনও দিই। change.org/PeriodsPeCharcha তে অনেকেই সাড়া দেন। এই পিটিশন মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়। অনেকে এই পিটিশনের সঙ্গে নিজেদের নাম যোগ করেন। এই পিটিশনে ঝাড়খন্ড সরকার যাতে স্যানিটারি ন্যাপকিনস গ্রামের স্কুল গুলোতে এবং অঙ্গনারীদের কাছে ঠিক মতো পৌঁছে দেয় সেদিকে নজর দিতে বলা হয়। তাছাড়া ঝাড়খন্ডের ৫২ শতাংশ মেয়েরই ১৮ বছর পেরোনোর আগেই বিয়ে হয়ে যায়। তাই শুধু মাত্র স্কুলে স্কুলে ন্যাপকিন পাঠিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। গ্রামের প্রত্যেকটা মেয়ের কাছে গিয়ে গিয়ে পিরিয়ডস নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। সব মিলিয়ে মেয়েরা এখনও অন্ধকারেই রয়েছে। এই অন্ধকার দূর করার সময় এবার এসেছে। আমার এই কাজ সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরায় মানুষের সাড়া পাই। আমার এই কাজকে মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের তরফ থেকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। কিন্তু সবার আগে দরকার ওখানকার বা দলিত মেয়েদের উন্নতি করা। বিশেষ করে স্বাস্থ্য সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
advertisement
view comments
বাংলা খবর/ খবর/ফিচার/
ঝাড়খন্ডের আদিবাসী মেয়েদের কাছে এখনও পৌঁছায়নি স্যানিটারি প্যাডস! তারা এখনও রয়েছে অন্ধকারে! লিখছেন শ্রীলেখা চক্রবর্তী।
Next Article
advertisement
Australia Woman Cricketer Molestation: বিশ্বকাপ খেলতে আসা অস্ট্রেলিয়ার মহিলা ক্রিকেটারের শ্লীলতাহানি, ইনদৌরের রাস্তায় কী ঘটল? ধৃত অভিযুক্ত
বিশ্বকাপ খেলতে আসা অস্ট্রেলিয়ার মহিলা ক্রিকেটারের শ্লীলতাহানি, ইনদৌরের রাস্তায় কী ঘটল?
  • অস্ট্রেলিয়ার মহিলা ক্রিকেটারের শ্লীলতাহানি৷

  • ইনদৌরের রাস্তায় আক্রান্ত দুই মহিলা ক্রিকেটার৷

  • অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল পুলিশ৷

VIEW MORE
advertisement
advertisement