প্রাণের সঙ্গে হোলি খেলা
Last Updated:
#কলকাতা:ঘরের আগল ঠেলে রাইকিশোরী বেরিয়ে পড়েছেন হোরি খেলার অঙ্গনে। সখীদের সঙ্গে আবির, ফাগ, গুলালের রঙে মাতোয়ারা। এবারই তো আসবেন মনচোরা কানাইয়া...! সখীরা উল্লাসে ঝাঁপিয়ে পড়বেন, আগুনরঙা পলাশ আবিরে... 'রাঙাবো তোমারই তনু, ওগো বঁধুয়া রে...'
ফাগুন লেগেছে বনে বনে। কুমকুমে রাঙা ফাগে আবিরের অনুরাগ। নিধুবনে একাকী শ্যামকে পেয়ে মন মানেনা রাধারানির। দু'হাতে আবির নিয়ে মনের সুখে মাখিয়ে চলে রাইকিশোরী তার বধুঁয়াকে...
দোল উৎসব প্রাণের উৎসব, মনের উৎসব, ভালবাসার উৎসব। মহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী যাকে বলেছেন, ঋতুর উৎসব। সত্যিই তো গীতাতেও স্পষ্ট বলেছেন ভগবান 'ঋতুনাং কুসুমাকরঃ'। পদ্মপূরানেও একই সুরের অনুকরণ। স্কন্দপুরাণের উৎকল খণ্ডে ষোলো থামওয়ালা মণ্ডপ তৈরি করে দোল খেলারও উল্লেখ রয়েছে।
advertisement
advertisement
দোল কি শুধু বাংলার উৎসব ? নয়তো! কালে কালে ভারতের নানা প্রদেশে নানা নামে জনপ্রিয় হয়েছে তা। কেউ বলে ফাল্গুনিকী, কেউ-বা বলে হরি, কারওর কাছে মেটে হোলি, আহেরিয়া, ফল্গুৎসব বা মদনোৎসব। রাজস্থানের রাজপুত্র বাপ্পাদিত্য একদা এইসময়ে নিজের আঁচলের সঙ্গে গ্রামের যুবতীদের আঁচল বেঁধে নিয়ে দোলা দুলতেন। করতেন বিয়ে বিয়ে খেলা। এই প্রাণরাঙানো মন্ত্র কিন্তু মানব-মানবী উচ্চারণের সাহস পেয়েছিল রাধা-কৃষ্ণের হোরিলীলা থেকেই। এ তো ললিত রঙ্গে, রস তরঙ্গে প্রাণের সঙ্গে হোরি খেলার মুহূর্ত!
advertisement
মহাভার, শ্রীমদ্ভাগবত, হরিবংশ, বিষ্ণুপুরাণে যেমন শ্রীরাধার কোনও উল্লেখ আমরা পাই না, তেমনই ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণ, গর্গসংহিতা, পদ্মপুরাণের পাতাল খণ্ড, দেবী ভাগবতে কৃষ্ণ-রাধার প্রণয়লীলার কথা আছে।
গীতগোবিন্দে কবি জয়দেব বললেন,
'বসন্তে বাসন্তীকুসুমসুকুমারবৈরবয়বৈ-
র্ভ্রমন্তীং কান্তারে বহুবিহিতকৃষ্ণাণুসরণাম।
অনদং কন্দর্পজ্বরজনিতচিন্তাকুলতয়া
বলদ্ধাধাং রাধাং সরসমিদমূচে সহচরী।'
রাইকিশোরী তাঁর ঘনশ্যামকে বন থেকে বনান্তরে খুঁজে বেড়াচ্ছেন...বসন্তের ফুলের মতো তাঁর কোমল তণু বড়ই ক্লান্ত! মন ভারাক্রান্ত! সখীদের স্বান্তনা তাঁর প্রেমজ্বালা নিবারণ করতে পারে না! অবশেষে তিনি প্রাণবল্লভের সান্নিধ্য পেলেন। শ্রীহরিকে আলিঙ্গন করলেন 'প্রাণনাথ' সম্বোধনে... প্রেমচুম্বন...মন রাঙানো, বাঁধভাঙা উত্তাল উচ্ছ্বাস...
advertisement
এই বসন্তে মথুরা বৃন্দাবনের আকাশ রঙিন হয়ে উঠেছে! সলজ্জ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ব্রজশ্বরী। রং ভরা পিচকারি তাঁর দিকেই তাঁক করে আছেন ব্রজেশ্বর। সখীরা আহ্লাদিত। রঙের পাত্র উপুড় করে দিচ্ছেন শ্যামসুন্দরের গায়ে। ব্রজগোপী খেলে হোরি...! শ্যাম-দুলালীর এই বসন্তলীলাই রূপ বদলে হোলি খেলা বা দোলের রূপ নিয়েছে।
হোলির উৎসব নিয়ে বিদগ্ধজনেরা কোনও ক্ষেত্রেই একমত পোষণ করেননি। অনেকে বলেন, অনার্যদের থেকেই নাকি আর্যদের মধ্যে হোলি উৎসব পালন করার রীতি এসেছে। ফাল্গুনের শুক্লা চতুদর্শীতে ও পূর্ণিমায় অনুষ্ঠিত হয় হোলি। হোলাক বা হোলক থেকে এসেছে এই নাম। জানা যায়, ভাল ফসলের প্রার্থনায় এই উৎসবের সূচনা হয়েছিল । জ্বালানো হত অজন্মা দৈত্যের ঘর। স্কন্দপুরাণে হোলিকা ও প্রহ্লাদের উপাখ্যানে আছে, কশ্যপ ও তাঁর পত্নী দিতির ছেলে হিরণ্যকশিপুর বোন হোলিকা।
ব্রহ্মার বরে হিরণ্যকশিপু দেব ও মানবজয়ী হয়ে দেবতাদের অবজ্ঞা করতে শুরু করলেন। পুত্র প্রহ্লাদ বিষ্ণুভক্ত। এতে বেজায় চটে যান হিরণ্যকশিপু। আদেশ দেন, নিজের ছেলেকে পুড়িয়ে মারার। দাদার আদেশে হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুনে প্রবেশ করলেন। হোলিকা বর পেয়েছিলেন আগুনে পুড়লেও তিনি অক্ষত থাকবেন। কিন্তু বরের শর্তের কথা পুরোটা মনে ছিল না হোলিকার। যদি একা আগুনে প্রবেশ করেন, তাহলে আগুন তাঁকে স্পর্শ করতে পারবে না। কিন্তু এক্ষেত্রে তা হল না! কোলে যে প্রহ্লাদ! আগুনে ঝাঁপানোর মুহূর্তে ভগবান বিষ্ণুর কৃপায় প্রহ্লাদ বেঁচে গেল। মৃত্যু হল হোলিকার। হোলিকার আগুনে দগ্ধ হওয়ার কাহিনিই আগের দিন চাঁচড় উৎসবের সূত্র।
advertisement
রাধা-কৃষ্ণকে কেন্দ্র করে আরও নানা রকম গল্পের চল আছে। বৃন্দাবনে কৃষ্ণ রাধা ও তার সখীদের নিয়ে খেলা করছিলেন। সেখানে রাধা এক বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। লজ্জিত হয়ে পড়েন। সেই লজ্জা ঢাকতে রাধা সখীদের সঙ্গে আবির খেলতে শুরু করেন। কৃষ্ণ সঙ্গ নেন। সেই থেকেই হোলি খেলার সূত্রপাত--
'' ঝরো ঝরো ঝরো ঝরো, ঝরে রঙের ঝরনা/ আয় আয় আয় আয়রে রসের সুধায় হ্রদয় ভরনা''
.quote-box { font-size: 18px; line-height: 28px; color: #767676; padding: 15px 0 0 90px; width:70%; margin:auto; position: relative; font-style: italic; font-weight: bold; }
.quote-box img { position: absolute; top: 0; left: 30px; width: 50px; }
.special-text { font-size: 18px; line-height: 28px; color: #505050; margin: 20px 40px 0px 100px; border-left: 8px solid #ee1b24; padding: 10px 10px 10px 30px; font-style: italic; font-weight: bold; }
.quote-box .quote-nam{font-size:16px; color:#5f5f5f; padding-top:30px; text-align:right; font-weight:normal}
.quote-box .quote-nam span{font-weight:bold; color:#ee1b24}
@media only screen and (max-width:740px) {
.quote-box {font-size: 16px; line-height: 24px; color: #505050; margin-top: 30px; padding: 0px 20px 0px 45px; position: relative; font-style: italic; font-weight: bold; }
.special-text{font-size:18px; line-height:28px; color:#505050; margin:20px 40px 0px 20px; border-left:8px solid #ee1b24; padding:10px 10px 10px 15px; font-style:italic; font-weight:bold}
.quote-box img{width:30px; left:6px}
.quote-box .quote-nam{font-size:16px; color:#5f5f5f; padding-top:30px; text-align:right; font-weight:normal}
.quote-box .quote-nam span{font-weight:bold; color:#ee1b24}
}
Location :
First Published :
March 20, 2019 4:33 PM IST

