এখনও ৭ বার বন্দুকের তোপধ্বনিতে যোদ্ধার মতোই বিদায় দেওয়া হয় মা দুর্গাকে

Last Updated:

আশ্বিনের কৃষ্ণপ্রতিপদে ঠাকুরদালানের পিছনের বোধন ঘরে বসে বোধন ৷ এ বাড়িতে দুর্গারও আগে কালিপুজোর চল ছিল ৷ কিন্তু একবার কোনও এক অঘটন ঘটায় সেই পুজো বন্ধ হয়ে যায় ৷ কিন্তু যেহেতু একক শক্তির আরাধনা করা যায় না, তাই এখানে জগদ্ধাত্রী পুজো হয় ৷

#কলকাতা: ৪৭ পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিট ৷ বিশাল সিংহদুয়ারের দু’ধারে দুই সিংহ গর্জন করছে ৷ ভিতরে ঢুকতে গিয়ে আবারও দুই বসে থাকা সিংহের পাহারা ৷ এরপর কয়েকটা সিঁড়ির ধাপ পেরিয়ে বাম হাতে ধবধবে সাদা খিলান দেওয়া ঠাকুর দালান ৷ তারপর বিস্তৃত লাল টুকটুকে উঠোন ৷ ঠাকুরদালানকে ঘিরে দোতলা বাড়ি ৷ উপর-নীচে টানা লম্বা বারান্দায় হরেক রকম গাছ, অপূর্ব কারুকাজ করা ভেনিসিয়ান স্কাল্পচার ৷ আভিজাত্য যেন এবাড়ির আনাচ-কানাচ দিয়ে চুঁইয়ে পড়ছে ৷
একেবারে তিথি নক্ষত্র মেনে মহালয়ার দিনেই হল মায়ের চক্ষুদান ৷ ১৬৫ বছর ধরে এই ঠাকুরদালানেই পুজো হচ্ছে মায়ের ৷ পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে পরপর দু’টো ঘোষেদের বাড়ি ৷ একটি ৪৬ একটি ৪৭ ৷ রামলোচন ঘোষকে এ পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা ধরা যায় ৷ কায়স্থ রামলোচন ছিলেন লেডি হেস্টিংসের অন্যতম সরকার ৷ ওয়ারেন হেস্টিংসেরও প্রিয় পাত্র ছিলেন তিনি ৷ পরে তিনি হেস্টিংসের দেওয়ান নিযুক্ত হন ৷ প্রচুন ধনসম্পত্তি উপার্জন করেন রামলোচন ৷ ৪৬, পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের বাড়ি তিনি তৈরি করান ৷ তাঁর ছিল তিন ছেলে ৷ শিবনারায়ণ, দেবনারায়ণ এবং আনন্দনারায়ণ ৷ খেলাৎচন্দ্র ছিলেন মেজছেলে দেবনারায়ণের পুত্র ৷ তিনি ছিলেন অনরারি ম্যাজিস্ট্রেট ও জাস্টিস অব দি পিস ৷ সনাতন ধর্মরক্ষণী সভার সভ্য ছিলেন খেলাৎচন্দ্র ৷ তিনিই উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ১৮৪৬ সাল নাগাদ পুরনো বাড়ির পাশেই ৪৭ পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে দুর্গাদালানসহ নতুন বাড়ি তৈরি করে উঠে যান ৷
advertisement
20181017_172201-01-compressor
advertisement
১৮৫৫ থেকে সেখানেই শুরু করেন পুজো ৷ এখন সেটাই পাথুরিয়াঘাটা রাজবাড়ি। এই বাড়িতে একসময় এসেছেন শ্রীরামকৃষ্ণ ৷ এই ভবনেই দেহত্যাগ করেন রামকৃষ্ণ। সেই সময় বাড়ির কর্তা ছিলেন খেলাত ঘোষের ছেলে রামনাথ ঘোষ। কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই বাড়িতে আসতেন।
মার্টিন অ্যান্ড বার্নের তৈরি এই বাড়িতে মঠচৌরি চালের মহিষাসুরমর্দিনী প্রতিমায় পুজো হয়। রথের দিন হয় কাঠামো পুজো ৷ আশ্বিনের কৃষ্ণপ্রতিপদে ঠাকুরদালানের পিছনের বোধন ঘরে বসে বোধন ৷ এ বাড়িতে দুর্গারও আগে কালিপুজোর চল ছিল ৷ কিন্তু একবার কোনও এক অঘটন ঘটায় সেই পুজো বন্ধ হয়ে যায় ৷ কিন্তু যেহেতু একক শক্তির আরাধনা করা যায় না, তাই এখানে জগদ্ধাত্রী পুজো হয় ৷
advertisement
khelat_bhaban
তামার সিংহাসনে উপবিষ্ট হন মা দুর্গা ৷ সিংহাসনের সামনে মাথার উপরে রয়েছেন মহাদেব ৷ আবার একই সঙ্গে ক্যুইন্স ক্রাউন, কিংস ক্রাউন ও প্রিন্সেস ক্রাউনও রয়েছে খোদাই করা ৷ আগে প্রতি বছর তামার সিংহাসন পালিশ করা হত ৷ কিন্তু খয়ে যাওয়া আটকাতে এখন তাতে সোনালী রঙের প্রলেপ দেওয়া ৷ এখানে মা দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী তিনজনেই সিংহবাহিনী ৷ তাই দুর্গার দুই মেয়ের কোনও বাহন নেই ৷ এ বাড়ির কাঠামো একটু অন্যরকম ৷ তাতে রয়েছে দু’টি কুলঙ্গি ৷ এক কুলঙ্গিতে ছোট্ট একটি মহাদেব, অন্য কুলুঙ্গিতে হনুমানের পিঠে রাম ৷
advertisement
সপ্তমীর দিন হয় কলাবৌ স্নান ৷ কিন্তু ঘরের বৌয়ের স্নান বাইরের কাউকে দেখতে নেই বলে এ বাড়ির উঠোনেই নবপত্রিকাকে স্নান করানো হয় ৷ প্রতিদিনই হয় কুমারী পুজো ৷ সপ্তমী, অষ্টমী, সন্ধিপুজো, নবমীতে ছোট খাঁড়া দিয়ে চিনির মঠের প্রতীকী বলি করা হয় ৷
wp-1474904158208
advertisement
দশমীর দিন মা’কে বরণ করার পর হয় বিসর্জন ৷ আজও কাঁধে করেই নিয়ে যাওয়া হয় ঠাকুর ৷ বিসর্জনের শোভাযাত্রার আগে সাতবার বন্দুক দাগা হয় ৷ যেহেতু মা দুর্গা যোদ্ধা, তাই তাঁকে যোদ্ধার মতোই বিদায় জানানো হয় ৷ মা’কে নদীতে ফেলার আগে দু’টি নৌকায় চাপিয়ে সাতবার প্রদক্ষিণ করানো হয় ৷ তারপর নৌকা দু’টি দু’দিকে সরে যায় ৷ আস্তে আস্তে মা জলে চলে যান ৷ এখানে মা’কে উপুড় করে বা শুইয়ে বিসর্জন দেওয়ার রীতি নেই ৷
বাংলা খবর/ খবর/ফিচার/
এখনও ৭ বার বন্দুকের তোপধ্বনিতে যোদ্ধার মতোই বিদায় দেওয়া হয় মা দুর্গাকে
Next Article
advertisement
West Bengal Weather Update: ভারী বর্ষণের সতর্কতা উত্তরবঙ্গে ! দক্ষিণবঙ্গেও বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি চলবে
ভারী বর্ষণের সতর্কতা উত্তরবঙ্গে ! দক্ষিণবঙ্গেও বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি চলবে
  • ভারী বর্ষণের সতর্কতা উত্তরবঙ্গে !

  • দক্ষিণবঙ্গেও বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি চলবে

  • কলকাতা-সহ বাকি অংশে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হতে পারে রবিবার পর্যন্ত

VIEW MORE
advertisement
advertisement