দুর্গা পুজোর পর থেকে ইংরেজি নববর্ষ... শোভাবাজর রাজবাড়িতে চলত ফূর্তির ফোয়ারা

Last Updated:
#কলকাতা: কলেজ, মেট্রো, ঘিঞ্জি গলি, রাস্তাজোড়া দোকান, হকারের কোলাহল... এইসব খানিকটা কাটিয়ে, একটু এগোতেই এক রাজবাড়ির সিংহদুয়ার। দর্পের সঙ্গে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে! বলিষ্ঠ কাঁধে আজও বহন করে চলেছে কলকাতার ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়!
শোভাবাজর রাজবাড়ি! কোনও এক কালের ১৪ বিঘার রাজবাড়ি আজ নিতান্তই সঙ্কুচিত! কিন্তু আজও ওই বিশাল থামগুলোয় কান পাতলে যেন শোনা যায় ঘুঙুরের শব্দ, জোরে শ্বাস নিলে নাকে আসে অম্বুরি তামাকের গন্ধ, চোখের সামনে খেলা করে বাবুর্চিদের ছোটাছুটি, চারদিকে শ'য়ে শ'য়ে মানুষের পাত পেড়ে খাওয়ার দৃশ্য!
টাইমমেশিনে চড়ে সময় যেন পাড়ি দেয় সেই কোন যুগে! ১৭৬২ সাল! নবকৃষ্ণ সেন রাজা উপাধি পেলেন। ঠিক তার তিন বছরের মাথায় ১৭৬৫ সালে নবকৃষ্ণ হলেন মহারাজা। অবশ্য, ১৭৬২ সালের পর থেকেই শোভাবাজারের চেহারা বদলাতে শুরু করে! জাঁকজমকে রীতিমতো পাল্লা দিতে থাকে গোটা বাংলাকে।
advertisement
advertisement
দুর্গা পুজোর পর থেকে বড়দিন হয়ে ইংরেজি নববর্ষ পর্যন্ত রাজবাড়িতে চলত অনর্গল ফূর্তির ফোয়ারা! ক্লাইভ, হেস্টিংস, বেন্টিঙ্ক, কর্নওয়ালিশ--সব ইংরেজ বড়কর্তারাই আসতেন এ'বাড়িতে! জমিয়ে চলত চর্ব্যচোষ্যলেহ্যপেয়! প্রায় ২৬০ বছর আগে পলাশির বিজয় উৎসব দিয়ে যে-অনুষ্ঠান একসময় শুরু হয়েছিল, তার রেশ চলেছিল বহু বছর। এটাই ছিল তৎকালীন বনেদী ফ্যাশন। প্রতি আসরে অঢেল খানাপিনা আর বাইনাচের আয়োজন থাকত। নিকি, আশরুম, সুপনজান, বেগমজান, নান্নিজান, হিঙ্গুল, ফায়জ বক্স, নুর বক্স... বিভিন্ন সময়কার প্রথম সারির বাইজিরা আসর মাতিয়ে রাখতেন। ১৮৫৫ সালের ১৩ অক্টোবর 'মর্নিং ক্রনিক্যাল' সংবাদপত্রে রাজবাড়িতে মেম- বাইজি নাচার খবর ছাপা হয়েছিল। সেই নাচ দেখার আমন্ত্রণপত্রের জন্য কলকাতার বাবুমহলে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। এই জাঁকজমকের আরেকটি বড় প্রমাণ এখানকার নাচঘর। অবশ্য এখন আর সেটি নেই! কিন্তু বলা হয়, সেই সময় আর কোনও রাজবাড়িতে এত আরামদায়ক বিলাসের ব্যবস্থা ছিল না!
advertisement
হালকা শীত পড়তেই শুরু হত আরেকটি জিনিস-- বনভোজন! তবে, মহারাজা নবকৃষ্ণের আমলে বনভোজনের সেইরকম চল ছিল না! বন-জঙ্গলে গিয়ে রান্না করে খাওয়া হত না! বদলে যাওয়া হত বাগানবাড়িতে। তৎকালীন ইংরেজ বড়কর্তাদের সামার হাউজ ছিল ব্যারাকপুরের লাটবাগানে। সাহেবি এই কায়দা ছড়িয়েছিল কলকাতার এলিট সম্প্রদায়ের মধ্যেও। তাঁরাও গঙ্গার ধার বরাবর বানাতে শুরু করলেন বাগানবাড়ি। শোভাবাজার রাজবাড়ির এইরকম একটি বাগানবাড়ি ছিল সোদপুরের সুখচরে। পরের দিকে এই বাগানবাড়ি হয়ে ওঠে শীতকালীন পিকনিক স্পট।
advertisement
বাড়িটি একদম গঙ্গার উপরে। নদী থেকে দেখলে তিনতলা আর জমি দিয়ে হেঁটে এলে দোতলা। জোয়ারের সময় জল গঙ্গা লাগোয়া গেট দিয়ে ঢুকে আসত বাড়ির উঠোনে। কিছুক্ষণের জন্য পুকুরের রূপ নিত! বাড়ির মেয়ে, বাচ্চারা সেখানেই স্নান করত। আলাদা করে ঘাটে যাওয়ার হ্যাপাই থাকত না! আত্মীয়স্বজনদের পালা করে যাওয়া-আসা লেগেই থাকত! ১৯৬২ সালের আগে পিকনিকের ছবিটা খানিকটা এইরকম ছিল-- আয়োজক সুভাষ নারায়ণ দেব। সকলের 'নতুনদা' বা 'নতুনকাকা'। চাঁদা তুলে পিকনিক করা হত। বড়দের দিতে হত ৩ টাকা আর ছোটদের ১ টাকা। মেনু জমজমাট! সকালে কলা আর বড়ুয়ার কেক। তারপরেই গরমাগরম ফ্রেঞ্চ টোস্ট। দুপুরে ভাত, ডাল, শীতের সবজি, মাছ, মাংস, চাটনি। বিকেলে চা।
advertisement
এতো গেল পিকনিকের মেনু! রাজবাড়ির ভোজের তালিকা ছিল এলাহি! সবথেকে খাসা বাবুর্চি ছিলেন বেঞ্জামেন রোজারিও। সবাই তাঁকে ডাকত ব্যাঞ্জো বলে। তাঁর হাতে বানানো চপ-এর স্মৃতি ও স্বাদ এখনও রাজবাড়ির পুরনো সদস্যদের মনে ও জ্বিভে তরতাজা! বাঙালি পদের মধ্যে 'হিট' ছিল হিং দেওয়া আলু চচ্চড়ি আর কচি পাঁঠার মাংস। দুপুর দেড়টার সময় উনুনে ছাইচাপা দিয়ে মাংস বসানো হত, নামানো হত বিকেল চারটের সময়। ঢিমে আঁচে পাকানো এই মাংসের স্বাদ নাকী অমৃতের মতো! এই বাড়িতে মাংস খাওয়ার চল বরাবর বেশি! তবে, মুরগি নয়, রান্না হত গিনি ফাউল! তাও ইংলিশ ড্রেসিং করানো মানে গরমজলে ডুবিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে ছাড়ানো মুরগি। এখনও নিউ মার্কেটের কিছু জায়গায় খোঁজ করলে পাওয়া যায়!
advertisement
শীত পড়তে না পড়তেই রাজবাড়িতে যাত্রার আয়োজন করা হত। রীতিমতো টিকিট কেটে সবাই তা দেখতে আসত! ঠাকুরঘরের একপাশে লম্বা খিলান দেওয়া দালান ঘিরে বানানো হত গ্রিনরুম। এক-দেড় মাস ধরে চলত পালা। ম্যাটিনি, ইভিনিং, নাইট-- তিন শিফটে। বেঙ্গল ড্রামা লিগ আর সুভাষ নারায়ণ দেব মিলে শুরু করেছিলেন এই বিচিত্রানুষ্ঠান। চারদিকে গ্যালারি বেঁধে দেওয়া হত দর্শকদের জন্য। চাবিকামান দেগে শুরু হত পালা। ছোট ছোট গর্তে বারুদ রেখে হাতুড়ি মেরে ফাটানো হত। তখন যাত্রার মহানায়ক ছিলে স্বপনকুমার। সুপুরুষ, গায়ের রং শ্যামলা। একবার এক মজার ঘটনা ঘটল! স্বপনকুমার রাজবাড়িতে এসেছেন যাত্রায় অভিনয় করতে। এদিকে দরজা আগলে বাড়ির ছোটরা, টিকিট চেকিংয়ের দায়িত্বে! তারা তো স্বপনকুমারকে চেনে না, ফলে বিনা টিকিটে ঢুকতেও দেবে না! ওদিকে গেটে সাদা পোশকে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি! হাতে ৫৫৫-র ক্যান আর রনসন লাইটার। ধুন্ধুমার কাণ্ড! উনি বারবার পরিচয় দিয়েও কাজ হল না! শেষমেশ ঘটনাটা রাজবাড়ির এক বড় সদস্যর চোখে পড়ায়, তিনি পরিস্থিতির সামাল দিলেন!
advertisement
শীতের শুরু থেকে শেষ-- এমন হাজারো ঘটনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে শোভাবাজার রাজবাড়ির আনাচে কানাচে! শুধু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাতে ধুলোর আস্তরণ জমেছে। তবে, একটু খুঁজলে আজও ফুটে উঠবে পুরনো শহরের সেই রাজকাহিনি!
view comments
বাংলা খবর/ খবর/ফিচার/
দুর্গা পুজোর পর থেকে ইংরেজি নববর্ষ... শোভাবাজর রাজবাড়িতে চলত ফূর্তির ফোয়ারা
Next Article
advertisement
Australia Woman Cricketer Molestation: বিশ্বকাপ খেলতে আসা অস্ট্রেলিয়ার মহিলা ক্রিকেটারের শ্লীলতাহানি, ইনদৌরের রাস্তায় কী ঘটল? ধৃত অভিযুক্ত
বিশ্বকাপ খেলতে আসা অস্ট্রেলিয়ার মহিলা ক্রিকেটারের শ্লীলতাহানি, ইনদৌরের রাস্তায় কী ঘটল?
  • অস্ট্রেলিয়ার মহিলা ক্রিকেটারের শ্লীলতাহানি৷

  • ইনদৌরের রাস্তায় আক্রান্ত দুই মহিলা ক্রিকেটার৷

  • অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল পুলিশ৷

VIEW MORE
advertisement
advertisement