অন্য দুর্গা, দুর্গতিনাশিনী... ঘরে বাইরে সমান তালে সাবলীল সুদর্শনা, পূর্বা, অমৃতারা...
Last Updated:
অসুর যখন সমাজ, অস্ত্র শস্ত্র যোগাতে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর নেমে আসবেন, এমনটা ভাবারও অবকাশ নেই ! লড়াইটা তখন কঠিন হয় বইকী। তবে দশভূজারা তো আর তাতে দমে যাওয়ার পাত্রী নন
#কলকাতা: দশভূজা...দশ হাতে ১০অস্ত্র...ত্রিনয়ন...দর্পের সঙ্গে বধ করছেন অসুরকে...শুধু মূর্তিতেই কি মা দুর্গার এই রূপ দেখা যায় ? একটু ভেবে দেখুন তো ! বছরের প্রতিটি দিন, অলিগলি থেকে রাজপথ, বাস-ট্রাম-ট্রেন-ট্যাক্সি, পাশের বাড়ি, পাড়ার মোড়, অফিস, বাড়ির রান্নাঘর... সর্বত্রই কি এই রূপ দেখেন না ? দেখেন ! আপনার চারপাশে, প্রতিটি মেয়েই দশভূজা, দুর্গতিনাশিনী...অবলীলায় সামলাচ্ছেন সংসার থেকে কর্মক্ষেত্র, প্রতিটা মুহূর্তে বধ করছেন অসুররূপী প্রতিবন্ধকতাকে, পুরিষশাসিত সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তড়তড়িয়ে উঠে যাচ্ছেন সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে...প্রতিটি নারীই দুর্গা...
অসুর যখন সমাজ, অস্ত্র শস্ত্র যোগাতে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর নেমে আসবেন, এমনটা ভাবারও অবকাশ নেই ! লড়াইটা তখন কঠিন হয় বইকী। তবে দশভূজারা তো আর তাতে দমে যাওয়ার পাত্রী নন! ২০১৫ সাল, অন্ধকার হাঁতড়াচ্ছেন সুদর্শনা আর পূর্বা... দুই 'আপাত' সাধারণ মহিলা। পূর্বা সবে বিদেশ থেকে ফিরেছেন...ভাবছেন পুরনো আইটির চাকরিতেই ফিরবেন কিনা ! সুদর্শনা এইচআর-এর চাকরি ছেড়ে লেখালিখি করছেন! একমুহূর্তের জন্য খানিক দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন ছোটবেলার দুই বন্ধু! কী করবেন?
advertisement
advertisement
শুরু করলেন ফ্রিলান্সিং কনটেন্ট লেখা! বাহ! ভাল সাড়া মিলছে তো! সবাই প্রশংসা করছেন! মাথায় চাড়া দিল একটা আইডিয়া... ডিজিট্যাল মার্কেটিংয়ের ব্যবসা শুরু করলে কেমন হয় ?
যেমন ভাবা তেমন কাজ! ফের 'মা' হলেন পূর্বা, সুদর্শনা। জন্ম দিলেন মেলাঞ্জ-এর! যে কোনও ব্র্যান্ডকে ডিজিটালি প্রোমোট করে এই সংস্থা। হাজার প্রতিবন্ধকতা, সমাজের চোখ রাঙানিকে জয় করে আজ দুজনেই অনেকটা থিতু, অনেকটা সফল!
advertisement
আরেক দূর্গা, দুর্গতিনাশিনী অমৃতা মুখোপাধ্যায়। জাগরির কর্ত্রী । কোনওরকম সরকারি- বেসরকারি সাহায্য ছাড়াই লড়ে চলেছেন স্পেশাল চাইল্ডদের জন্য। সঠিক থেরাপি দিচ্ছেন। অভিভাবকদের মধ্যেও জাগিয়ে তুলছেন সচেতনতা, যাতে তাঁরা সন্তানদের সঙ্গে সাবলীলভাবে সময় কাটায়। শুরু করছেন স্পিচ থেরাপি। যে সমস্ত বাচ্চাদের কথা বলায় সমস্যা, তাঁদের কবিতার মাধ্যমে মনের অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করবে এই থেরাপি।
advertisement
গোবরডাঙ্গা স্টেশনে নেমে টিকিট কাউন্টার পার করে, সোজা নাক বরাবর দু'মিনিট হাঁটলেই ডান হাতে একটা ফ্ল্যাট, নীচে 'কমলা স্টোর্স'। উপরের তলায় ছেলেকে নিয়ে থাকেন অমৃতা। এই ছেলের জন্যই তাঁর সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠা।
advertisement
'' মফসসলের মেয়ে আমি। বিয়ে হয়েছিল শহরে। যদিও ছোটবেল থেকে ডাকাবুকো হিসেবেই পরিচিত ছিলাম কিন্তু শহুরে আদব-কায়দা বড্ড বেমানান। তার জন্য অবশ্য কম কথা শুনতে হয়নি। একা একাই কাঁদতাম। রোজ সকালে উঠে বাসন মাজা, কুটনো কাটা থেকে শুরু করে রান্না... বাড়ির সব কাজই একা আতে সামলাতাম। স্বামী, সংসার নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, সেই স্বপ্ন আমার অপূর্ণই থেকে গিয়েছে! স্বামী সোহাগ জোটেনি!'' ব্যঙ্গ মিশ্রিত গলায় বললেন 'গোবরডাঙ্গা জাগরী দল'-এর মা।
advertisement
হ্যাঁ তিনি মা। সব 'বুরুন'-এর মা। অমৃতার সন্তান বুরুন। কিন্তু তাকে নিজের সন্তান হিসেবে মেনে নিতে পারেনি নিজের বাবা-ই! উলটে অমৃতার কপালে সেঁটে দেয় 'কলঙ্কিনী' তকমা। সেদিনই শেষ হয়ে যায় অমৃতার সংসারে রান্নাবাটি খেলা। আত্মমর্যাদা বজায় রাখতে একরত্তি বুরুনকে কোলে নিয়ে বাবার কাছে ফিরে আসেন। কিন্তু নিজের বাড়িতেও ভাগ্য সহায় হয় না! কোলের শিশুকে নিয়ে জায়গা হয় বারান্দায়। পরে অবশ্য চার দেওয়াল জুটেছিল, কিন্তু ততদিনে অমৃতা বুঝে গিয়েছিল পায়ের নীচের মাটিটা শক্ত না করলে কিচ্ছুটি হওয়ার নয়।
advertisement
একসময়ের গৃহবধূ অমৃতা ঘরের চৌকাঠ ডিঙিয়ে পা রাখলেন কর্মক্ষেত্রে। নিউটাউনের ডিপিএস-এ শিক্ষকতা দিয়ে কাজ শুরু। '' এখানে কাজ করতে করতে জানতে পারলাম মানুষের কতরকম দুঃখ! তখন নিজের কষ্টটাকে তুচ্ছ মনে হল। সেই সঙ্গে চেপে ধরেছিল যেদ। ভাল থাকার, ভাল রাখার।'' সেদিন থেকেই নতুন খোঁজ শুরু হল অমৃতার। বনগাঁ থেকে দমদম 'বুরুন'দের খোঁজ। অসহায় শিশুদের খুঁজে বের করা, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো, নতুন একটা জীবন উপহার দেওয়া। জাগরী প্রতিনিয়ত বাল্যবিবাহ রোধ, নির্যাতিতাদের উদ্ধার, কুসংস্কার আচ্ছন্ন সমাজকে আলোয় ফিরিয়ে আনার লড়াই লড়ে যাচ্ছে।
view commentsLocation :
First Published :
September 28, 2019 10:12 AM IST







